শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মন্দা ঠেকাতে সিদ্ধান্ত বদল

মন্দা ঠেকাতে সিদ্ধান্ত বদল
  • চেক নগদায়নের নির্দেশ বাতিল
  • ডিমান্ড ড্রাফটে কেনা যাবে শেয়ার

চেক নগদায়ন ছাড়াই শেয়ার কেনার সুযোগ রেখে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে চেকের পাশাপাশি ব্যাংকের ডিমান্ড ড্রাফট (ডিডি) বা পে-অর্ডারের বিপরীতে শেয়ার কেনা যাবে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই নির্দেশনা জারি করে।

গ্রাহক কোনো চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফটের বিপরীতে শেয়ার কিনলে তা পরবর্তী দিনের মধ্যে ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে। যদি কোনো ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংক তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে পরবর্তী এক বছরের জন্য ওই প্রতিষ্ঠান আইপিও, আরপিও ও রাইট শেয়ারের কোটা থেকে বঞ্চিত হবে। যদি গ্রাহকের হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা বা অন্য কোনো কারণে ওই চেক পাশ না হয়, তাহলে তার দায় সংশ্লিষ্ট ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংককে নিতে হবে। ওই ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংকারকে নিজস্ব ব্যাংক হিসাব থেকে সমপরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে।

ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংক তা না করে বা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে পরবর্তী এক বছরের জন্য ওই প্রতিষ্ঠান আইপিও, আরপিও ও রাইট শেয়ারের কোটা থেকে বঞ্চিত হবে। এর বাইরেও আইন অনুসারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি। যদি সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের চেক, পে-অর্ডার বা ডিডি পাশ না হয়, তাহলে পরবর্তী এক বছর গ্রাহকের ওই ধরনের কোনো ইনস্ট্রুমেন্টের বিপরীতে শেয়ার কেনার সুযোগ দিতে পারবে না সংশ্লিষ্ট ব্রোকারহাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংক। 

আরও পড়ুনঃ  ডিএসইতে লেনদেন এক বছরে সর্বোচ্চে

এদিকে, চলতি বছরের গত ১১ অক্টোবর গ্রাহকের চেক নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ডিএসই চিঠি পাঠিয়েছিল। ওই চিঠিতে বিএসইসির সংযুক্ত করা এক নির্দেশনার বিষয়ে বলা হয়েছিল, গত ২২ সেপ্টেম্বর কমিশনার আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে ডিএসইর সিআরও এবং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কমিশনের এসআরআই বিভাগের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ওই সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে আগামি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়েছিল। ওই গৃহিত সিদ্ধান্তের মধ্যে ১ নম্বরে ছিল, প্রতি ট্রেকহোল্ডার বিনিয়োগকারীর চেক নগদায়নের পরে ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছিল। বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তের খবর ১৩ অক্টোবর ছড়িয়ে পড়ায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

ওইদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭ পয়েন্ট কমেছিল। এরপরও পতন অব্যাহত থাকে। ওই সিন্ধান্তের পর মাত্র তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতন হয়েছিল ১৯৩ পয়েন্ট। ওইসময় হাজার কোটি টাকার লেনদেন নেমে ৭শ কোটি চলে এসেছিল। বিক্রির চাপও বহুগুণ বেড়েছিল। সেই পতন গত রবিবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

বাজারের মন্দার এমন পরিস্থিতি রোধে পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারীদের দাবির আলোকে চেকে লেনদেন করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে যাচ্ছে এমন খবরও জানিয়েছিল বিএসইসি। কিন্তু সেই সময় কোনো নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছিল না। কারণ বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম মরোক্কো সফর আছেন। সফর শেষে দেশে এসে তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই মোতাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান মরোক্কো থেকে এসেই চেক নগদায়ন ছাড়াই শেয়ার কেনার সুযোগ রেখে নির্দেশনা জারি করে।

আরও পড়ুনঃ  মান্দায় বিএনপির দুই নেতা স্থায়ী বহিষ্কার

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর চেক ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে বিএসইসি এক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই কারণে ওইসময় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দুইদিনের মাথায় একই বছরের ৮ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিএসইসি। কিন্তু চলতি বছরের গত ১১ অক্টোবর বিএসইসির সেই একই সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ডিএসইর মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে জানানো হয়েছিল। এমন সিদ্ধান্তের খবরে গত ১৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পুঁজিবাজারে ফের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই পতন এখনও অব্যাহত।

সিকিউরিটিজ হাউজের গ্রাহকদের জমাকৃত চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছিল সাধারন বিনিয়োগকারীরা। এদের (বিনিয়োগকারী) পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বরাবর ওই চিঠি দিয়েছিল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাকের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলেছিলেন, সম্প্রতি বিএসইসির নির্দেশক্রমে ডিএসইর শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার ক্রয় করা যাবে না বলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।

ওই নির্দেশনার পর থেকে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন হওয়ায় অস্থিরতা বিরাজ করে। এরই প্রেক্ষাপটে চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ার লক্ষে উক্ত নির্দেশনা প্রত্যাহার করার অনুরোধ করা হয়েছিল। এরও আগে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়নের পর ক্রয় আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছিল পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম এবং ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।

আরও পড়ুনঃ  পুঁজিবাজারে সাপ্তাহিক লেনদেনে দর পতনের শীর্ষে ঢাকা ডাইং

এ বিষয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর কাছে পৃথকভাবে সংগঠন দুইটির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সংগঠন দুটি জানায়, এর আগে নির্দেশনাটি ২০১০ সালে জারি করা হয়। পরবর্তীতে তা স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে নির্দেশনাটি পুনরায় ব্রোকারদের কাছে পাঠানো হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন