শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভাসমান পদ্ম---

মন ছুঁয়ে যায়

মন ছুঁয়ে যায়

সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রবেশ পথের রাস্তায় আঁকা মনমুগ্ধকর আলপনা। যেন শিল্পীর নিখুঁত ছোঁয়ার অপরূপ বহিঃপ্রকাশ। এ রাস্তা ধরে সোজা এগিয়ে গিয়ে ডান দিকে চোখে পড়বে একটি পুকুর। শান বাঁধানো রঙিন ঘাট। পুকুরের পানির দিকে তাকাতেই যেন চোখ স্থির হয়ে যায়। পুকুর ভরা ভাসমান পদ্মফুল ফুটে আছে অপরূপ সাজে। যেন সৌন্দর্য বিলাতে একটুও কার্পণ্য নেই ফুল ও পদ্ম পাতাগুলোর। অপরূপ এ সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করেন স্থানীয়রা তেমনি বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন দর্শনার্থীরাও। পুকুর ঘাটে বসে পদ্মফুলের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে ক্লান্তি দূর করে বাড়ি ফেরেন দর্শনার্থীরা। স্থানীয় ও বাইরের কিশোর যুবকদেরও আনাগোনা হয় এ পুকুর পাড়ে। তাদের উদ্দেশ্য ছবি তোলা। পুকুরে ভাসমান গোলাপী রঙের পদ্মফুল যেন সৌন্দর্যের এক অনন্য প্রতীক।

একটা সময় ছিলো, যে সময় পুকুরটি ছিলো ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধে যাওয়া যেতোনা পুকুরের পাশে। এছাড়াও রোগীদের নোংরা কাপড়-চোপড় পরিস্কার করায় পুকুরটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছিলো। তবে বর্তমান দ্বায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও অসম্ভব সুন্দর রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে পুরো হাসপাতাল চত্বরে। বর্তমানে হাসপাতালের পুকুরটি পদ্মফুলের পাতা ও ফুলের সৌন্দর্যমোহিত করছে মানুষকে। হাসপাতালের পুকুর থেকে শুরু করে যেদিকেই তাকানো যায় সেদিকেই কোনো না কোনো করুকার্যে ভরপুর। হয় ফুল গাছ, নয়তো পাতা বাহার। এমনকি টবে লাগানো রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির শাক।

স্থানীয় উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮২ সালে। বর্তমানে ৫০শয্যা বিশিষ্ট ও শিশুবান্ধব হাসপাতাল নামে পরিচিতি লাভ করেছে সর্বমহলে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারিপাশে  অনেক জায়গা পতিত ছিলো। বড় বড় ঘাস আর লতায় পরিপূর্ণ ছিলো এ জায়গাগুলো। সাপের ভয়ে এসব স্থানে মানুষ যেতো না। তবে, হাসপাতালে মানসিক প্রশান্তির জন্য ব্যতিক্রম উদ্যোগ নেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন। চারিদিকের আবর্জনা পরিস্কার করিয়ে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন করতে থাকেন হাসপাতালের বাহিরের রূপ। চারিদিকে নানান জাতের বাহারি ফুল, ফল, বনজ, ও ঔষধি গাছ লাগিয়ে পাল্টে দেন হাসপাতালের অবয়ব। জরুরি বিভাগের সামনে গড়ে তোলেন চমৎকার একটি ফুল বাগান। যেখানে শোভা পাচ্ছে পুরনো বিভিন্ন জিনিসের সমন্বয়ে ফুলের টব বা ঘেরানী। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন পুকুরটাকে সাজানোর জন্য। এ চিন্তাধারা বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে পদ্মফুলের গাছ সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। প্রাথমিক অবস্থায় গাছগুলোর একটু সমস্যা ছিলো। কিন্তু দমে যাননি ডা. রুহুল আমিন। ২০১৮ সাল থেকে তিন ধাপে গাছ লাগিয়ে সফল হয়েছেন তিনি। বর্তমানে সেই পদ্মপাতা আর ফুল সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  এসি-ননএসি বাস তৈরির ধুম

সম্প্রতি ডা. রুহুল আমিন আরেকটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ গ্রহন করেন পুকুরটিকে নিয়ে। ঘাট থেকে অদূরেই বানিয়েছেন “খোয়াঘাট” নামক স্থান। যেখানে ছোট্ট ঘাটে বাঁধা থাকে একটি ডিঙি নৌকা। নৌকাটি চালানোর জন্য নয় বরং পুকুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য।

সরেজমিনে পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, যুবক, কিশোর এমনকি বৃদ্ধরাও বসে আছেন পুকুর ঘাটে। কেউ ছবি তুলছেন পদ্মফুলের কেউবা ঘাটে বসে পানিতে পা দিয়ে জলকেলি করছেন।

সস্ত্রীক পুকুর ঘাটে বসা নজরুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধকে কেন ঘাটে বসে আছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাবা তোমার চাচিকে চিকিৎসা করতে এনেছি। চিকিৎসা শেষ হয়ে গেছে। এজন্য এ পুকুর পাড়ে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।”

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন এ প্রতিবেদককে  বলেন, “পদ্মফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। গোবরে পদ্মফুল, পদ্ম পাতায় জল-বাংলা সাহিত্যে বাগধারা হিসেবে বহুল প্রচলিত। ধামইরহাটের ঐতিহাসিক আলতাদিঘীতে ভাসমান রাশি রাশি পদ্মফুল আমাকে বিমোহিত করে। তারপর ব্যাপারটা তার মাথায় আসে। সেই থেকে হাসপাতাল ক্যাম্পাসের পুকুরটাতে পদ্মরাশির স্বপ্ন দেখা শুরু। তিন দফা গাছ লাগিয়ে তিন বছরের চেষ্টায় স্বপ্ন সত্যি হলো। একটা সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে বাইরের সব দৃশ্য সর্বস্তরের মানুষের নজর কেড়েছে। যার কারণে রোগীরা চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি নিজের মানসিক প্রশান্তিও পাচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন