শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিলগেটেই দাম চড়া

প্রতিনিয়তই অস্থির হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁর পাইকারি বাজার। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে সরু ও মোটা চালে প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে মিলমালিকরা। ফলে মিলগেটেই মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। মিনিকেটের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ১শ ৫০ টাকা পর্যন্ত। আর খুচরা বাজারে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে প্রায় সব ধরনের চালের দাম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ধানের সরবরাহ কম। মিলমালিকরা মিল চালু রাখতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ধান ক্রয় করছেন। যার কারণে বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। অপরদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। ধানের দাম ও পরিবহন খরচ বাড়ায় চালের ওপর আরও বেশি প্রভাব পড়েছে। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি না করা পর্যন্ত চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

দেশের চালের অন্যতম বড় মোকাম হওয়ায় নওগাঁর মিলগেটে চালের দাম বাড়লে সরাসরি এর প্রভাব পরে দেশের চালের বাজারে। ইতিমধ্যে এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় খুচরা বাজারে। যার ফলে খুচরা বাজারে ৫০ টাকার নিচে আর কোন চাল বিক্রি হচ্ছে না। সুতরাং সর্ব নিম্ন আয়ের মানুষকেও এখন ১ কেজি চাল কিনতে গুণতে হবে ৫০ টাকা।

শহরের চাল বাজার এলাকার মেসার্স সুমন এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী সুমন বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মিল মালিকরা ৫০ কেজির বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যে মিনিকেট চাল আগে ৩ হাজার ২০০ টাকা ছিল সে চাল এখন ৩ হাজার ৩০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আবার মিলগেট থেকে দোকানে নিয়ে আসতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বিনামূল্যে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা দিতে নিপ্রো-জেএমআই’কে সঙ্গে নিল সনি-স্মার্ট

সান্তাহার পৌর এলাকার মিলমালিক আলহাজ্ব বেলাল হোসেন বলেন, মিল পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে মূলত দুটি কারনে। প্রথমত বাজারে ধানের সরবরাহ একেবারেই কম। ফলে প্রতি মণ ধানের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এতে মিলারদের বেশি দামে ধান ক্রয় করতে হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় বাজার থেকে ধান ক্রয় করে মিলে নিয়ে আসতে প্রতি ট্রাকে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আর এসব কারণেই মিলগেটে চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও ধানের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় অনেক মিলের চাল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।

আগামীতে দাম কমার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে আলহাজ্ব বেলাল হোসেন জানান, এই মুহূর্তে আমদানি করেও চালের বাজার কমানো সম্ভব নয়। কারণ ডলারের উচ্চমূল্য এবং ভারতে চালের দাম দেশের বাজারের সম পরিমান। সুতরাং আমদানি করেও দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এখন সামনে আমন মৌসুমের নতুন ধান বাজারে না আশা পর্যন্ত চালের বাজার নিম্নমুখি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, বাজারে আমদানি করা চাল এলে দাম কিছুটা কমবে। কিন্তু এখন চিত্র উল্টো। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি করতে পাড়ছে না আমদানিকারকরা। মূলত তিনটি কারণে চালের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রথমত, বোরো মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে, ফলে বর্তমানে বাজারে ধানের সরবরাহ কমে গেছে। বাজারে ধানের চাহিদা থাকায় ধানের দাম বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  মাছচাষে বাণিজ্যিক সাফল্য

দ্বিতীয়ত, ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় চাতালকলগুলো চাল প্রস্তুত করতে পারছে না। অনেকে চালকল বন্ধ করে দিয়েছে ফলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কিছুটা কমে গেছে। তৃতীয়ত, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে এর প্রভাব পড়ছে চালের ওপর। বর্তমানে এই পরিস্থিতে চাল আমদানির কোনো বিকল্প নেই। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি করতে হবে। তাছাড়া আগামী তিনমাসের মধ্যে অর্থাৎ আমন মৌসুমের নতুন ধান বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন