শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তবাণিজ্য চুক্তি চায় থাইল্যান্ড

মুক্তবাণিজ্য চুক্তি চায় থাইল্যান্ড

ঢাকা সফরে দেশটির স্থায়ী সচিব সারুন 

বাংলাদেশে চলমান উচ্চপ্রবৃদ্ধি এবং ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসা করেছেন ঢাকায় সফররত থাইল্যান্ডের স্থায়ী সচিব সারুন চারোয়েনসুওয়ান। তিনি দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে যৌথ কমিশন সভা করার ওপরও জোর দেন। এ সময় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও ব্যবসাকে আরও জোরদার করতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি-এফটিএ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এসব কথা ও দাবি জানান সারুন।

এর আগে গতকাল রবিবার রাজধানী ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ডাকটিকিট উন্মোচন এবং ই-বুক চালু করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন ও থাইল্যান্ডের স্থায়ী সচিব সারুন চারোয়েনসুওয়ান।

থাইল্যান্ড-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালের ৫ অক্টোবর থেকে।

থাইল্যান্ড ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে তার দূতাবাস চালু করে, অপরদিকে বাংলাদেশ ১৯৭৫-এ ব্যাংককে তার দূতাবাস চালু করে। বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ডের মধ্যে বিগত বছরগুলোতে বাণিজ্য সম্পর্ক খুব জোরদার হয়, বিশেষ করে পণ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে। থাইল্যান্ড অধিকতর উন্নত হওয়ায়, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার জন্য অনেক বাঙালি শিক্ষার্থী সেদেশে যায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডকে অধিকহারে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ আহ্বান করেছে।

এদিকে অনুষ্ঠান শেষে থাইল্যান্ডের সফররত স্থায়ী সচিব সারুন চারোয়েনসুওয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে, উভয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উষ্ণ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। 

আরও পড়ুনঃ  ঝোঁক ছোট ফ্ল্যাটে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতির উদ্দেশে হচ্ছে ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’। এই চেতনায় বাংলাদেশ সমস্ত প্রতিবেশী দেশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি এই অঞ্চলে বৃহত্তর সংযোগ-সুবিধার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী এবং আরও কার্যকর আঞ্চলিক সহযোগিতা গঠনের গুরুত্বের উপর জোর দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই অর্থনীতির মধ্যে বিদ্যমান পরিপূরকতাকে কাজে লাগানোর জন্য পারস্পরিক উপকারী উদ্যোগ ও সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি অপার সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পর্যটনখাতের উন্নতির জন্য আরও থাই সহায়তা ও দক্ষতার অনুরোধ করেন।

তিনি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করতে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ, কৃষি প্রক্রিয়াকরণখাত, স্বাস্থ্য ও ওষুধখাত ইত্যাদিতে আরও থাই বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেন। মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ করে থাইল্যান্ড এবং সাধারণভাবে আসিয়ানের আরও সক্রিয় ভূমিকা কামনা করেন। এ সময় ড. মোমেন আগামী মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য আইওআরএ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

পরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন থাই স্থায়ী সচিব। এ সময় সারুন চারোয়েনসুওয়ান বাংলাদেশের আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি শনিবার চট্টগ্রামের বিনাজুরির একটি মন্দির পর্যবেক্ষণ করেন।

বাংলাদেশে তার প্রথম সফরে থাই স্থায়ী সচিবকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলি, বিশেষ করে ইউরোপে মহামারী এবং ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে সৃষ্ট মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি জোরদার করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। খাদ্য ও শক্তির নিরাপত্তাহীনতা, সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন, মন্দার আশঙ্কাজনক হুমকি ইত্যাদির কারণে উদ্ভূত সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র সচিব প্রতিবেশীদের মধ্যে আরও সমন্বয় ও ফলপ্রসূ সহযোগিতার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুনঃ  বড় বিনিয়োগের আশ্বাস

চলতি বছরের মার্চ মাসে ব্যাংককে দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) এর সফল আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, পররাষ্ট্র সচিব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কাঙ্খিত গতি বজায় রাখার জন্য এই ধরনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার উপর জোর দেন। তিনি পারস্পরিক সুবিধাজনক তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় এফওসি-র জন্য থাই স্থায়ী সচিব-নিযুক্ত ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানান। পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের ইস্যুতে আরও সক্রিয় থাই সমর্থন চেয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন