রাজধানীতে চলমান আবাসন মেলায় ক্রেতা সমাগম অনেকটা বেড়েছে। এবার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ছোট ও মাঝারী আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি পাচ্ছে। এছাড়া ক্রেতাদের রেডি ফ্ল্যাট নেওয়ার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল। গত শুক্রবার মেলা শুরুর দিনে দুপুরের পর থেকে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল অনেক বেশি। জমজমাট ভিড় দেখা গেছে মেলা প্রাঙ্গণে। মেলায় আগতরা স্টল ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা প্লট দেখেন, ফ্ল্যাট ও প্লটের খোঁজ নেন। অংশগ্রহণকারী ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজেদের ফ্ল্যাট এবং প্লটের ভাল দিকগুলো আগতদের সামনে তুলে ধরেন। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দেন বিভিন্ন ছাড় ও উপহার। সন্তুষ্ট হয়ে কেউ কেউ মেলাতেই বুকিং সম্পন্ন করেছেন।
১১০০ স্কয়ার ফিটের মধ্যে বনশ্রীতে ফ্ল্যাট খুঁজছিলেন এক চাকরিজীবী। বললেন, আমি ছোট একটা ২ বেডরুমের রেডি ফ্ল্যাট খুঁজছি। এখানে এক জায়গায় কয়েকশ স্টল আছে। নিজের মতো করে খুঁজে নেওয়া যায়। কিন্তু আমার ৭৫ লাখ টাকা বাজেট। জানি না এর মধ্যে পাব কিনা। আরেক ক্রেতা জানালেন, উত্তরাতে কয়েটি কোম্পানির প্রজেক্ট মানানসই দেখলাম। কোনটাতে বুকিং দেব সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় নিচ্ছি।
শেলটেক লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বললেন, আমরা বেশি দর্শনার্থী পাচ্ছি। আমাদের ছোট-মাঝারি-বড়-লাক্সারি সব ধরনের ফ্ল্যাটই আছে। তবে এবার ছোট ও মাঝারি ফ্ল্যাটের চাহিদা খুব বেশি। এছাড়া দাম বেশি পড়লেও তারা রেডি ফ্ল্যাটের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। একই কথা বলেন কনকর্ডের এক কর্মকর্তা। তিনি জানালেন, সাধারণত ছোট ফ্ল্যাটগুলো ১০০০-১৩০০ স্কয়ার ফুট ও মাঝারী ফ্লাটগুলো ১৩০০ থেকে ১৬০০ স্কয়ার ফিটের মধ্যে হয়ে থাকে। এগুলোর দাম ১-২.৫ কোটি টাকার মধ্যে হয়। স্থানবিশেষে দামের কিছুটা হেরফের হয়। এবার এই ফ্ল্যাটগুলো চাহিদার শীর্ষে আছে।
তবে ছোট ও মাঝারি ফ্ল্যাট ছাড়াও ব্যাপক চাহিদা আছে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টেরও। মেলায় আসার আগেই অনেকের এই ধরনের আধুনিক সিংগেল অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়ে গেছে। র্যাংগস প্রপার্টিজের এক কর্মকর্তার মতে, স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা এত বেশি যে আমাদের একটি প্রজেক্টের ৩২ অ্যাপার্টমেন্টের সব বিক্রি হয়ে গেছে বানানোর সময়ই। এই মেলায় ক্রেতাদের চাহিদা থাকলেও আমরা দিতে পারছি না।
মেলায় আসা আরেক ক্রেতা বললেন, অনেক আগেই পরিকল্পনা ছিল এই নগরীতে আবাসনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু ব্যস্ততা আর অর্থের স্বল্পতার কারণে এতোদিনে হয়ে উঠেনি। নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে এবার ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখছি। এজন্য মেলাতে এসেছি, ঘুরে ঘুরে দেখছি। মোহাম্মদপুর এলাকায় কোন ফ্ল্যাট সাধ্যের মধ্যে হলেই বুকিং দিব।
নানা ধরনের ছাড় আর উপহারে চলছে আবাসন মেলা-২০২২। মেলায় গ্রাহকদেরও বেশ সাড়া মিলছে। একই ছাদের নিচে সব কোম্পানির প্রকল্প দেখার সুযোগ থাকায় আগ্রহী ক্রেতারা আসছেন। তারা বিভিন্ন কোম্পানির অফার দেখছেন, পছন্দ হলে বুকিং দিচ্ছেন।
মেলায় অংশ নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ প্রাণ-আরএফএল। কিচেন আইটেম এবং ফিটিংস আইটেমে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও আবাসন খাতের কোম্পানিগুলোও তাদের চলমান বা রেডি প্রকল্পকে সাজিয়েছে নানাভাবে। কোম্পানিগুলোও নানা অফারের ব্যবস্থা রেখেছে। প্রকল্প পছন্দ হলেই বুকিং দিয়ে রাখছেন ক্রেতারা।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে ভালো মানের ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে হাজির হওয়ায় তারা সেগুলো লুফে নিচ্ছেন। বিক্রেতারা বলছেন, বছরের এ সময়টিই ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার উপযুক্ত সময়। এখানে যাচাই-বাছাই করে নানা প্রকল্প দেখে বুকিং দেওয়া যায়। পছন্দ না হলে অন্য কোনো প্রকল্প দেখে নেওয়া যায়। মেলা উপলক্ষে আবাসনের সহযোগী প্রতিষ্ঠানও নিয়ে এসেছে নানা অফার।
রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বললেন, এবারের মেলায় আবাসন খাতের কোম্পানিগুলো ছোট ও মাঝারিসহ সব ধরনের ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে এসেছে। তুলনামূলক দামও কম। তাই যারা কিনতে চায় তাদের এবার কেনা উচিৎ। ভবিষ্যতে এই দামে ফ্ল্যাট হয়ত আর পাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) গত ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে রিহ্যাব ফেয়ার ২০২২। আজ রবিবার মেলার শেষ দিন। মেলায় মোট ১৮১টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করেছেন। তবে আজ শেষ দিন মেলা চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
আনন্দবাজার/শহক