শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালমাইয়ে বিরল উদ্ভিদ সংগ্রহশালা

লালমাইয়ে বিরল উদ্ভিদ সংগ্রহশালা

লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান

বিরল প্রজাতির অসংখ্য উদ্ভিদ নিয়ে কুমিল্লায় গড়ে তোলা হয়েছে সমৃদ্ধ এক উদ্ভিদ সংগ্রহশালা ‘লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান’। জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিমি. দূরে লালমাই পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি। উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলার চারপাশে থরে থরে লাগানো হয়েছে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির নানান জাতের উদ্ভিদ। এখানে ফুল-ফলের পাশাপাশি আছে ভেষজ উদ্ভিদ। 

কুমিল্লা বনবিভাগ কার্যালয় থেকে জানা যায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটবাড়ি ময়নামতি জাদুঘরের সন্নিকটে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় লাগোয়া সালমানপুর এলাকায় লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় কাছে গড়ে তোলা হয়েছে উদ্যানটি। 

২০১৫ সালে ১৭ একর ভূমির ওপরে শুরু হয় এই উদ্ভিদ উদ্যানটির কাজ। ২০২০ সালে শুরুর দিকে উদ্যানটির বর্তমান অংশের কাজ সমাপ্ত হয়। ২০২০ সালের এপ্রিলে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার কথা থাকলেও করোনার কারণে পিছিয়ে ৭ নভেম্বর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এ  উদ্যানটি। এতে প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ছাত্রদের জন্য প্রবেশমূল্য ৫ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশমূল্য ৪০০ টাকা। 

উদ্যানটিতে রয়েছে বৈলাম, চম্পা, লোহাকাঠ, স্বর্ণকমুদ, সিভিট, অশোক, চাপালিশ, বহেরা, হরিতকি, তেলশুর, আগর, নাগলিঙ্গম, নাগেশ^র, শাল, মহুয়া, ধূপ, উড়ি আম, বন পেয়ারা, বাঁশপাতা, সাকড়া, চালমুগরা, কাঞ্চন, পিতরাজ, জারুল, কনক, তমাল, রাধাচূড়া, করমচা, অড়বরই, হারগোজা, ডেফল, সুরুজ ,ধারমারা, এলামেন্ডা,জুমু জবা, কার্নিভাল কর্ডিলাইন, ডুরান্ডু, কুপিয়া ও কাটামেহেদিসহ শতাধিক প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ। 

এছাড়া রয়েছে অর্কিড ও ক্যাকটাস হাউজ। আছে পরিচিত ফুল, ফল, পাতাবাহার ও ভেষজ উদ্ভিদও। এক দিকে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য অন্যদিকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সাথে পরিচিত হযয়ার সুযোগ।

আরও পড়ুনঃ  কেবল তোমাকে প্রিয়তমা

উদ্যানের রাস্তার পাশেই টানানো বোর্ডে রয়েছে উদ্ভিদের বর্ণনা। কোন গাছের কি ঔষধি গুণ রয়েছে, কোন গাছ কখন ফুল দেয়, কখন ফল দেয়। উদ্যানের এমন সব বিস্তারিত তথ্যও উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে বোর্ডে লিখা রয়েছে। 

এত বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের কারণে উদ্যানটি হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার ক্ষেত্র। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য প্রকৃতির মধ্যে অবসর কাটানোর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। 

উদ্যানের প্রবেশ দ্বার থেকে শুরু করে ঘুরে দেখার জন্য নানান আয়োজন করা হয়েছে। পাহারের চুড়ায় আসন তৈরি করা হয়েছে। একটি লেক তৈরি করা হয়েছে। তাই অবসর কাটানোর জন্যও একটি উত্তম স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান।

উদ্যানটিতে গেলে দেখা মেলবে ডালে ডালে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর প্রজাপতির উড়ে বেড়ানো। ফুলে ফুলেখেলা করে প্রজাপতি আর মৌমাছিরা। বাতাসে ছড়ায় ফুলের সুবাস। 

আঁকাবাঁকা পাহাড়ের নির্জনতায় একইসাথে এত প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ ও ফুলের সুবাস বিমোহিত করবে যেকোনো দর্শনার্থীকে। এখানে দর্শনার্থীদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু আরসিসি বেঞ্চ, ব্যাঙের ছাতা সদৃশ্য বিশ্রামাগার। উদ্যানটির ভেতরে আছে পার্ক অফিস। নারী ও পুরুষ পর্যটকদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আবুল বাশার, সাফায়েত, বাপ্পি, সোনিয়া জানান, লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে নানান প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এখানে সৃজন করা উদ্ভিদ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন বিপন্ন প্রায়। তাই শিক্ষা ও গবেষণার জন্য নিশ্চয়ই লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান হতে পারে এক বিশাল ক্ষেত্র। কুমিল্লায় এমন উদ্ভিদ উদ্যান গড়ে তোলায় শিক্ষার্থীদের গবেষণার একটা ভালো ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখার পরামর্শ দিল এডিবি

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ উদ্যান। তবে করোনা মহামারি বাড়তে থাকায় বর্তমানে উদ্যানে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

কুমিল্লার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল কবির জানান,‘ উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্রটি করা হয়েছে এ প্রজন্মকে শেখানোর জন্য। শিক্ষার্থীরা বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদগুলো দেখে জ্ঞানার্জন করবে। তাই তাদের জন্য সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নামমাত্র মূল্যে টিকিট নির্ধারণ করা হয়েছে।’ এ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘আমাদের ৫০ একর জায়গা আছে। আরও ৩০ একর জায়গা হলে একটি পরিকল্পিত উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্র ও বন্যপ্রাণীর অভায়রণ্য গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা উপর মহলে যোগাযোগ করেছি।’

বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, এখানে দেশের প্রথম ফরেস্ট মিউজিয়াম গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এটিকে জাতীয় মানের একটি উদ্যান হিসেবে গড়ে তুলতে মন্ত্রণালয় একটি মাস্টারপ্লান প্রণয়ন করেছে। এ উদ্যান সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। এটি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে পুরো দেশবাসী বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করতে পারবেন এখানে। 

তিনি বলেন, এই উদ্যানের ৯০ ভাগ উদ্ভিদই বিরল এবং বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির। এসব উদ্ভিদ আগামী প্রজন্মের জন্য কাজে আসবে। আর কুমিল্লাবাসীর ফুসফুস হিসেবে কাজ করবে এই উদ্যানটি।

এ উদ্যানের আশেপাশে তিন ভাগে বনবিভাগের আরও ৩৩ একর জায়গা রয়েছে। বিরল উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্রটিসহ মোট ৫০ একর জায়গার দখলে আছে কুমিল্লা বনবিভাগ। এটিকে আরও সম্প্রসারিত, পর্যটনমুখী ও বন্য প্রাণীর অভায়রণ্য করে তুলতে দরকার আরও ৩০ একর জায়গা। মোট ৮০ একর জায়গা হলে একটি পরিকল্পিত দৃষ্টিনন্দন বিরল উদ্ভিদকেন্দ্র ও বন্যপ্রাণীর অভায়রণ্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন বন কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুনঃ  আগস্টে বেড়েছে দেশের রফতানি

বর্তমান প্রজন্মকে নতুন করে জানাতে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় এ উদ্যানে রোপণ করা হয়েছে বিরল উদ্ভিদের কয়েক লাখ চারা। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। উদ্যানটি স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ১৭ কোটি টাকা।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন