শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টমেটো চাষে লাখপতি

টমেটো চাষে লাখপতি

পলি নেট হাউসে গ্রাফ্টিং করা টমেটো চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছে সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের বিল্লিয়া পাড়ার বাসিন্দা মোস্তাক আহমদের ছেলে সৌদি ফেরত কৃষক আবুল হোসাইন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় গড়ে উঠা ১১ শতক জমিতে পলি নেট হাউসে নিরাপদ টমেটো চাষ করেছেন। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ কমাতে পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হয়েছে ফেরোমেন ও আঠাঁলো হলুদ ফাঁদ। এতে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক মো. আবুল হোসাইন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, পলিনেট হাউসে পলিথিনের আচ্ছাদন থাকায় এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায় এবং অতি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দূর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। তাছাড়া কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে শাকসবজি ফলমূলসহ কৃষি উৎপাদন করার এক আধুনিক পদ্ধতি। নতুন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে পলি নেট হাউসে কম খরচে বেশি লাভ হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। নোয়াখালী ফেনী লক্ষীপুর চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় সাতকানিয়ার ঠাকুর দিঘীতে মো. আবুল হোসাইনের খেতে নেট হাউস গড়ে তোলা হয়েছে।

জানা যায়, লিজ নেওয়া জমিতে গ্রাফ্টিং করা মঙ্গল রাজা (হাইব্রিড) জাতের টমেটো (বন বেগুন গাছে কলম) চাষ করে আবুল হোসাইন উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। নেট হাউসে শীত, বর্ষা এবং গরমেও সবজি চাষ করতে পারছেন ওই কৃষক। অসময়ের টমেটোসহ অন্যান্য সবজি উৎপাদন এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে।

আরও পড়ুনঃ  সংক্রমণের ভয়ে নিম্নমুখী বিশ্ব শেয়ারবাজার

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের করাইয়ানগর গ্রামে ঠাকুরদিঘীতে সরজমিনে গেলে দেখা যায়, বিশাল এক দিঘীর দক্ষিণ পাশে অর্ধেকেরও জলাধার ভরাট হয়ে কৃষি জমিতে পরিনত হয়েছে। এসব জমিতে এখন সবজি আবাদ হচ্ছে। এতে সফলতা আসছে কৃষকের।

কৃষক আবুল হোসাইন ৫শ ৬০ শতক (১৪ কানি) জমি দীর্ঘ মেয়াদি লিজ নিয়েছেন। এতে ১১ শতক নেট হাউসে আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল টমেটোর পাশাপাশি বেগুন, পেঁপে ও কুল চাষ করছেন।

আবুল হোসাইন জানান, ১১ শতক জমিতে সিমেন্ট-লোহার খুঁটির উপরে কাঠ দিয়ে ঘরের মত করে উপরে ইসরাইলের পলি চারিদিকে নেট দিয়ে তৈরি করা হয় পলিনেট হাউস। এই পলিনেট হাউস তৈরি করতে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খরচের অর্ধেক যোগান দিয়েছে কৃষি বিভাগ। নেট হাউসের বাইরে আরো ১৯ শতক টমেটো খেত রয়েছে তার।

দু’মাস আগে নেট হাউসে প্রতি পিস ১৩ টাকায় ১ হাজার কলমের টমেটো চারা রোপণ করেন। ৬০ দিনে পূর্ণাঙ্গভাবে গাছে ফলন চলে আসে। প্রথম দিনে ৩০ শতকের গাছ থেকে ১১ কেজি টমেটো তোলেন। যা পাইকারীতে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। এরপর থেকে প্রতি একদিন পরপর ৩০০ কেজি টমেটো তুলতে পারছেন।

বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ৭০-৮০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। সবমিলিয়ে ৩০ শতকে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। সেখানে ১১ শতক নেট হাউসে বিক্রি হয়েছে ৮৬ হাজার টাকার টমেটো। প্রতিটি টমেটো গাছে  ৩ থেকে ৪ কেজি টমেটো পাওয়া যাবে। গাছে আরো ১ মাস ধরে ফলন পাওয়া যাবে। অন্তত পলি নেট হাউসে খরচ বাদ দিয়ে ১ লক্ষ টাকার বেশি লাভ থাকবে বলে জানান আবুল হোসাইন।

আরও পড়ুনঃ  ২৩ ডিসেম্বর মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পর্ষদ সভা

খেত থেকে টমেটো উঠে গেলে নেট হাউসে রকমেলন অথবা শ্বসা চাষ করা হবে। তার এই টমেটো চাষের পদ্ধতি দেখে কৃষিকাজে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে স্থানীয় চাষিদের মাঝে।

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষক ফসল উৎপাদন করতে পারে না। বৃষ্টিতে ফসলের শিকড়ের মাটি ধুয়ে যায়। আবার খেতে পানি জমে থাকলে মাটিতে ব্যাকটেরিয়া জন্মে অনেক গাছ মারা যায়। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পলি নেট হাউসে প্রথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এতে উৎপাদন খরচ কমে যায়। আর নিরাপদ ফসল উৎপাদন সহজ হয়। আবুল হোসাইন পলিনেটে সুস্থ্য সবল চারা এবং উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন করে অধিক লাভবান হবে। পলি নেটের মাধ্যমে শীতকালীন সবজিগুলো যেমন সহজেই গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যায় তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যায়। ঠাকুরদিঘীতে আবুল হোসাইনের পলি নেট হাউস দেখে অনেক কৃষক আধুনিক চাষাবাদে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন