শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উদ্যোগ-সফলতা--

যেভাবে সফল টিম

যেভাবে সফল টিম

নিজের সফলতার চেয়ে বেশি জরুরি টিমের সফলতা। এজন্য দলনেতারা নিজের সফলতার চেয়ে টিমের সফলতার দিকে বেশি মনযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অধিকাংশ দলনেতাই খুব সাধারণ কারণে ব্যর্থ হন টিম সফল করতে। টিম সফল করার কাজটি মোটেও সহজ নয়। কেননা নিজে কাজ করা যতটা সহজ, অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া ঠিক ততটায় কঠিন। এজন্য টিমের সফলতায় অনুসরণ করা যেতে পারে কিছু সাধারণ কর্মকৌশল।

কীভাবে টিমকে সফল করা যায় তা জানিয়েছেন, ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর একজন দলনেতা তৌহিদুল ইসলাম বাদল (ইনচার্জ, রংপুর ডিপো, ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ)। যিনি ২০২২ সালে কোম্পানির ২২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে অর্জন করেছেন তার টিমকে সফল করার পুরস্কার। টিম সফল করার ক্ষেত্রে মি. তৌহিদ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

পরিশ্রম

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ তার অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারে। স্বপ্ন যে কেউ দেখতে পারে কিন্তু সবাই স্বপ্নজয়ী হতে পারে না। কঠোর ও স্মার্ট পরিশ্রম ছাড়া স্বপ্ন জয় করা সম্ভব নয়। একটি টিমের সফলতার জন্য প্রয়োজন সকল সদস্যের কঠোর পরিশ্রম। এজন্য টিম লিডারকেই সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যাতে করে টিমের সদস্যরা টিম লিডারকে দেখে কঠোর পরিশ্রম করতে উদ্বুদ্ধ হয়।

আন্তরিকতা

পরিশ্রমের সাথে আন্তরিকতা না থাকলে সেই পরিশ্রম সফলতার মুখ দেখতে পায় না। পরিশ্রম হলো একটি কাজের কাঠামো তৈরির হাতিয়ার আর আন্তরিকতা হলো ওই কাজটির পরিপূর্ণ মৃসণ রূপের বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং লক্ষ্যার্জনের জন্য আন্তরিক পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নাই।

আরও পড়ুনঃ  গাছের সাথে এ কেমন শত্রুতা!

আত্মবিশ্বাস

সেই মানুষ বেশি শক্তিশালী,যার বিশ্বাসের ভিত্তি মজবুত ও সুদৃঢ়। আত্নবিশ্বাসী মানুষ কখনো কোনো কাজকে ভয় পায় না। তারা যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে। শুধুমাত্র আত্নবিশ্বাসের ফলে কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়। প্রত্যেক সফল ব্যক্তির সফলতার মূলেই থাকে আত্মবিশ্বাস। এজন্য টিমের প্রত্যেক সদস্যকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারলেই টিমের সফলতা সুনিশ্চিত হয়। টিম মেম্বারদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করাতে হবে প্রত্যেকের নিজের প্রতি এবং টিম লিডারের প্রতি। টিমের সবাইকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার দায়িত্ব টিম লিডারের। সবাই আত্মবিশ্বাসী হলে লক্ষ্যার্জন পথে কোন বাধা থাকে না।

কেয়ারিং

কথায় আছে- আদর করে যে, শাসন করবে সে। বর্তমান যুগে টিমের সফলতার জন্য বসগিরির চেয়ে টিম মেম্বারদের কেয়ারিং বা যত্নআত্তি করা বেশি প্রয়োজন। যেই টিমের লিডার টিম মেম্বারদের প্রতি বেশি যত্নবান সেই টিমের মেম্বারগণ কাজের প্রতি বেশি আন্তরিক। টিম মেম্বারদের প্রতি একটু বাড়তি যত্ন নিলেই তারা হাসিমুখে অনেক কঠিন কাজও সহজে সম্পাদন করে। একটি দুর্বল টিমকে অল্প সময়ে শক্তিশালী করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল কেয়ারিং। সুতরাং টিম সফল করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই টিম মেম্বারদের কেয়ার নিতে হবে।

অনারশিপ

অনারশিপ হলো সেই অনুভূতি যা টিম মেম্বারদের কখনো হাসায়; কখনো কাঁদায়। টিমের ভালো ফলাফল যদি টিম মেম্বারদের আনন্দিত করে এবং একই সাথে খারাপ ফলাফল মেনে নিতে যদি টিম মেম্বারদের কষ্ট হয় তাহলে বুঝতে হবে টিমের সদস্যরা অনারশিপ নিয়ে কাজ করে। প্রতেক্যের মধ্যে অনারশিপ মনোভাব না থাকলে টিমের সফলতা অর্জন চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিমের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায়, টিমের কাজকে নিজের কাজ মনে না করা। একটি টিম তখনই সফল হয় যখন এর সদস্যরা সময় দেখে কাজ না করে কাজের প্রয়োজনে তাদের সময় নির্ধারণ করে।

আরও পড়ুনঃ  হার্ডওয়্যার ও লিফট ব্যবসায় ধস

সফলতা কোনো সাধারণ বিষয় নয় তাই সাধারণ কর্ম ঘণ্টা হিসেবে কাজ করে টিমের সফলতা আসে না। কোনো ব্যক্তি বা দল সফল হতে চাইলে তাকে অবশ্যই সাধারণের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে কাজ করতে হবে কেননা প্রতিযোগী ব্যক্তি বা দলগুলোও সাধারণ কর্ম ঘণ্টা অনুযায়ী কাজ করে। আর একটি টিমের সদস্যরা তখনই টিমের সফলতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে এবং তখনই বেশি সময় দিবে যখন তাদের মধ্যে অনারশিপ থাকবে।

সুতরাং টিম লিডারকে অবশ্যই সদস্যদের মধ্যে অনারশিপের শিক্ষা দিতে হবে এবং সেই সাথে সদস্যদের কাজের জন্য ক্ষমতায়ন করতে হবে। টিমের সদস্যদের উদ্ভাবনী চিন্তা করার সুযোগদান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করা টিম লিডারের জন্য কর্তব্য।

টিম প্লেয়িং

আমাদের উচিত টিম প্লেয়িং বিষয়টি মৌমাছিদের কাছ থেকে শিখা। কারো একক প্রচেষ্টায় টিমের সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। সফলতার জন্য প্রয়োজন টিম প্লেয়িং বা দলগত কাজ। দলগত কাজের মাধ্যমেই সদস্যদের মধ্যে তৈরি হয় ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতা, যা টিম মেম্বারদের বন্ডিংকে আরো সুদৃঢ় করে। টিমের অনেকেই টিম প্লেয়িংয়ে অভ্যস্ত থাকে না। সেক্ষেত্রে টিম লিডারের উচিত হবে কোন একটি প্রজেক্টের কাজকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত করে টিমের সদস্যদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া। যে টিমের দলগত কাজের প্রতি সদস্যদের আগ্রহ বেশি সেই টিমের সফলতার হার তত বেশি।

ভিন্নতা

কথায় আছে- বিজয়ীরা ভিন্ন ধরনের কিছু করে না, তারা একই কাজ ভিন্নভাবে করে। সুতরাং একটি টিমকে অল্প সময়ে সফল করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে আপনার কাজগুলো অন্যদের চেয়ে একটু আলাদাভাবে করতে হবে। এর মাধ্যমে তৈরি হবে আপনার কাজের একটি নিজস্ব স্টাইল বা স্বকীয়তা। এতে করে মুহূর্তেই সবার নজর কাড়বে আপনার কাজটি। খুব সহজেই আপনার টিম হবে সাধারণের মাঝে অসাধরণ।

আরও পড়ুনঃ  হিলিতে পেঁয়াজ আমদানিতে কার্যকর হয়েছে শুল্ক প্রত্যাহার

জবাবদিহিতা

যেকোন দল বা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা। জবাবদিহিতার মাধ্যমেই ব্যক্তি বা দলের নৈতিকতা তৈরি হয়। এজন্য টিম লিডারের উচিত হবে নিজে নীতি-নৈতিকতার চর্চা করা এবং দলের সবার মধ্যে সেই শিক্ষা দেওয়া। প্রত্যেকেই যেন তার কাজের জন্য নিজের কাছে এবং দলনেতার কাছে জবাবদিহি করে আত্নতুষ্টি বা আত্নযন্ত্রণা ভোগ করে সেই সংস্কৃতি ধীরে ধীরে গড়ে তোলা টিম লিডারের দায়িত্ব। জবাবদিহিতা কাজের স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা বৃদ্ধি করে। সুতরাং টিমের সফলতার জন্য জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা আবশ্যিক।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন