শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তরের বৃহৎ পূজামন্ডপ ছোট যমুনার তীরে

উত্তরের বৃহৎ পূজামন্ডপ ছোট যমুনার তীরে

দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে সহজে প্রতিমা দর্শনে রাখা হয়েছে পুরো পূজামন্ডপ এলাকা জুড়ে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি ক্যামেরা)। ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবার দিনাজপুরের পার্বতীপুরে গোবিন্দপুর চম্পাতলী ভবেরবাজার সার্বজনীন বারোয়ারী দূর্গাপুজা মন্ডপে। চাপাডাঙ্গায় প্রায় ৫ একর এলাকা জুড়ে এ দূর্গাপূজা মন্ডপ। গত ৪০ বছর ধরে এখানে শারদীয় দূর্গোৎসব হয়ে আসছে। তবে, ৬ বছর ধরে এর পরিধি, ব্যাপ্তি, বিষয়বস্তুর বৈচিত্রতা, সৌন্দর্য ও উপস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলার মধ্যে সর্ববৃহৎ ও শ্রেষ্ঠ পূজামন্ডপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বোধনের দিন থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের আগমন অব্যাহত থাকে। তারা আসেন বাসে, ট্রেনে, মাইক্রোসহ বিভিন্ন যানবাহনে।

রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাটের দর্শনার্থীরা যেমন আসেন, তেমনি কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ ও দিনাজপুরের দর্শনার্থীরাও নানা মাধ্যমে এখানে এসে পৌঁছান। এদের অধিকাংশ আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। তারা দূর্গোৎসবের বিষয় বৈচিত্রতা, সৌন্দর্য ও উপস্থাপনায় মোহিত হন। আয়োজকদের ব্যবহার, আতিথেয়তায়ও মুগ্ধ হন। আয়োজকদের দাবি এবার পূজামন্ডপের সৌন্দর্য আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। আরও অধিক সংখ্যক দর্শনার্থীর এক যোগে দর্শন ও উপভোগ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পূজামন্ডপে রাখা হয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা পথ।

গোবিন্দপুর চম্পাতলী ভবেরবাজার সার্বজনীন দুর্গাপূজামন্ডপের বিষয়বস্তুর বৈচিত্রতা, সৌন্দর্য ও প্রযুক্তির উদ্যোক্তা পলাশ কুমার রায় জানান, এবার এই দুর্গোৎসবে তাদের সাকুল্যে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ২৫ লাখ টাকার ওপরে। এর মধ্যে চিরিরবন্দর উপজেলার মূর্তি নির্মাণ শিল্পী (পাল) কৃষ্ণ রায়কে দিতে হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। একই উপজেলার ৮ সহযোগি শিল্পী নিয়ে ৫০ দিন ধরে মূর্তি তৈরি করেন। শেষের ৮ দিন ধরে রঙের কাজ করেন তার লোকজন। তিনি আরও বলেন, আমাদের পূজামন্ডপের ১২৫ ফুট লম্বা ও ৪০ প্রস্থ ফুট বিশাল আকৃতির গেট নির্মাণ, ঘট তৈরি, পানির ঝর্ণাসহ সব সাজসজ্জার জন্য চিরিরবন্দর উপজেলার মৈত্রী ডেকোরেটরকে দিতে হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া রুয়া, বাতা ও তক্তার জন্য লেগেছে ৫০০ সিফটি আম কাঠ। এর দাম পড়েছে ১ লাখ টাকা। গেটের বাঁশ, ভিআইপি দর্শনার্থীদের জন্য নির্মিত মঞ্চের বাঁশ, পুরোহিতের জন্য ১৫ হাজার, ঢাঁকির জন্য ১০ হাজার, প্রতিদিন জেনারেটরের তেল খরচ ১৪ হাজার এবং অতিথি আপ্যায়ন খরচ রয়েছে এর মধ্যে। অষ্টমী ও নবমীতে দর্শনার্থীদের মাঝে খিঁচুড়ি বিতরণ করা হয়। সরকারের দেয়া অনুদানের ৫০০ কেজি চাল এক দিন খরচ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  কাটছে গদাই বিলের জলাবদ্ধতা

পূজা উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য সবুজ কুমার রায় বলেন, বোধন থেকে শুরু করে বিসর্জনের দিন পর্যন্ত নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন পুলিশের উপ-পরিদর্শক, ৩ জন কনেস্টেবল, ৬ পুরুষ ও ২ মহিলা আনসার এবং একজন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) নিয়োজিত আছেন। তবে, নিরাপত্তার ব্যাপারটি কমিটি অত্যান্ত গুরুত্ব দিয়ে এবার (সিসিটিভি)’র ২৪ আওতায় আনা হয়েছে। তারা কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে ২০০ জনের একটি টিম দর্শানার্থীদের অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন ও বিদায় প্রদান পর্যন্ত দেখাশুনা করে থাকেন।

গোবিন্দপুর চম্পাতলী ভবেরবাজার সার্বজনীন বারোয়ারী দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি জগদীশ চন্দ্র রায় বলেন, বড় পরিসরে আমাদের দূর্গোৎসবের আয়োজন ৬ বছর ধরে। আমরা এ উৎসবকে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত করেছি। আর এটা করা সম্ভব হয়েছে এখানকার দশ গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সার্বিক সহযোগিতার ফলে। 

এদিকে, শিল্পী মিন্টু রায় বলেন, আমরা কলকাতার ‘থিম’ পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত হিসেবে শ্রী কৃষ্ণ, ব্রম্মা, বিষ্ণু, মহেশস্বর, গনেশ, পার্বতী, ব্রাম্মণ, সূর্যদেব এবং দেবরাজের মূর্তি তৈরি করেছি। তিনি আরও জানান, পূজা মন্ডপের নকশাবিদ হচ্ছেন সেতাবগঞ্জের শংকর রায় ও আলোকসজ্জা এবং ইভেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন মৈত্রী ডেকোরেটর।

গোবিন্দপুর চম্পাতলী ভবেরবাজার সার্বজনীন বারোয়ারী দূর্গাপুজা মন্ডপ সম্পর্কে নওগা থেকে আসা দিপঙ্কর লাহিড়ী বলেন, এ পূজামন্ডপ ও দুর্গোৎসব দেখতে এসেছি। আসবো আসবো করে এবার আসছি।

পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে, পার্বতীপুর উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা নাসিম হাসান জানান, গঠিত কমিটি যাচাই-বাছাই করে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি মন্ডপের নিরাপত্তার দায়িত্বে ৭৬৮জন আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে গোবিন্দপুর চম্পাতলী ভবেরবাজার সার্বজনীন বারোয়ারী দূর্গা পূজামন্ডপে ৬ পুরুষ ও দুই মহিলা আনসার এবং একজন আনসারের প¬াটুন কমান্ডার দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুনঃ  পতনে শেষ হলো শেয়ারবাজারের লেনদেন

বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ পার্বতীপুর শাখার সভাপতি কৈলাস প্রসাদ সোনার বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। চিরায়ত সম্প্রীতি ও আন্তরিকতায় অন্যান্য বছরের মত এবারো পার্বতীপুরে দূর্গোৎসব জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মিলন মেলায় পরিনত হবে বলে আশা করছি। 

পার্বতীপুর মডেল থানার অফিসার (ওসি) আবুল হাসনাত খান জানান, পূজা শুরুর আগেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপে তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। একাজে প্রতিটি মন্ডপে পুলিশের পাশাপাশি আনসার-ভিডিপি ও গ্রাম পুলিশ চৌকিদার নিয়োগ করা হয়েছে। উপজেলায় ১৪৯টি পূজামন্ডপের মধ্যে গোবিন্দপুর চম্পাতলী ভবেরবাজার সার্বজনীন বারোয়ারী দূর্গা পুজা মন্ডপ বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন