শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লেনদেনে সুবাতাস মূলধনে ভাটা

লেনদেনে সুবাতাস মূলধনে ভাটা

মূলধন কমেছে ৫১৩১ কোটি টাকা

লেনদেন

  • পিই রেশিও ১৪.১৩
  • বেড়েছে ১৪৪ শতাংশ
টপটেন শতভাগ ‘এ’

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেন পরিমাণ আগের সপ্তাহ তুলনায় বেড়েছে। উত্থান হয়েছে সব ধরনের সূচক। সপ্তাহটিতে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এসময় হাউজগুলোতে ক্রেতার চাপ বাড়ে। সপ্তাহে ডিএসই মূলধন পরিমাণ আগের সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে। সব মিলিয়ে গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজার উর্ধ্বমুখী ছিল।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট সহ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল পুঁজিবাজারে। এর কারনে বড় ধরনের দরপতন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। আরও বলেন, লোডশেডিং ঘোষণার দিন ১৮ জুলাই ডিএসইতে বড় পতন শুরু হয়। সেই পতন আরো বড় আকারে দেখা দেয় পরের দিন ১৯ জুলাই। ওই দুইদিনের তুলনায় পরের দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) পতন আকার কিছুটা ছোট হয়ে আসে। এরপর সেই জায়গা থেকে পুঁজিবাজার উত্থানে ফিরে এসেছে। বিভিন্ন মহলের শত চেষ্টায় পুঁজিবাজারে এ ধরনের উত্থানে স্বস্তিতে বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৯৩৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৩৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৪ শতাংশ। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৯৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৯১টির, দর কমেছে ১১৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৪টির কোম্পানির। লেনদন হয়নি ৬ কোম্পানির শেয়ার।

আরও জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। গত ২৮ আগস্ট মূলধন ছিল ৫ লাখ ৮ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ১৩১ কোটি টাকা।

আরও পড়ুনঃ  সিলেট তামাবিল মহাসড়ক চার লেনসহ ছয় প্রকল্প অনুমোদন

সপ্তাহে ডিএসইর পুঁজিবাজারে সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৫৫ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৪৭ দশমিক ৩০ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ২৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ২৬৭ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৯০ দশমিক ৬১ পয়েন্টে।

এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ১৩ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ১৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৯ শতাংশ।”

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৩ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ থেকে বাড়লেও পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

গেল সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরি শতভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন গেইনারে অবস্থান করেছে। সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন গেইনারে রয়েছে। অপরদিক টপটেন লুজারে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৩০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার অবস্থান করেছে। সপ্তাহে ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৪০ শতাংশ, ‘বি’ ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ এবং ‘এন’ ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লুজারে অবস্থান করেছে।

সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। ওইসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ লেনদেন করেছে। এছাড়া ওরিয়ন ফার্মা ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, আইপিডিসি ২ দশমিক ২১ শতাংশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, ফরচুন সুজ ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, মালেক স্পিনিং ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং ইস্টার্ন হাউজিং ১ দশমিক ৬৬ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  দেশের ফার্নিচার খাতে রফতানির সাথে বাড়ছে সম্ভাবনা

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে দাপট ছিল। সপ্তাহটিতে লেনদেন শীর্ষে ছিল বেক্সিমকোর শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটি লেনদেন করেছে ৪৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। বেক্সিমকো ছাড়া টপটেন লেনদেনে ‘এ’ ক্যাটাগরির অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ওরিয়ন ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, লার্ফাজ-হোল্ডসিম, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আইপিডিসি, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ফরচুন সুজ, মালেক স্পিনিং এবং ইস্টার্ন হাউজিং। এর মধ্যে ওরিয়ন ফার্মা ৩৪৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ১৮৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ১৭৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৬৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, আইপিডিসি ১৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ১৫১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ১২৯ কোটি ২২ লাখ টাকা, মালেক স্পিনিং ১১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং ইস্টার্ন হাউজিং ১১৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হরেছে।

আরও পড়ুনঃ  দ্রব্যমূল্যে নীরব কান্না

‘এ’ ক্যাটাগরির ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার দর টপটেন গেইনারের শীর্ষে ওঠে এসেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর হলো- মেট্রো স্পিনিং, পেপার প্রসেসিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, আরএসআরএম, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, আইডিপিসি ফাইন্যান্স, এপেক্স ফুড এবং ফারইস্ট নিটিং। এর মধ্যে মেট্রো স্পিনিং (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৫০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, পেপার প্রসেসিং (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৩১ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, আরএসআরএম (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, আইডিপিসি ফাইন্যান্স (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ, এপেক্স ফুড (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ফারইস্ট নিটিং (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২২ দশমিক ২২ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।

সপ্তাহটিতে ‘জেড’ ক্যাটাগরির বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স শেয়ার দর টপটেন লুজারের শীর্ষে ওঠে এসেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর হলো- বিডি থাই ফুড, প্রাইম টেক্সটাইল, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, কেডিএস এক্সেসরিজ, হা-ওয়েল টেক্সটাইল, জুট স্পিনার্স, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, এমারেল্ড অয়েল এবং সি এন্ড এ টেক্সটাইল। এর মধ্যে বিডি থাই ফুড (‘এন’ ক্যাটাগরি) ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ, প্রাইম টেক্সটাইল (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৮ দশমিক ২২ শতাংশ, সোনারগাঁ টেক্সটাইল (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, কেডিএস এক্সেসরিজ (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, হা-ওয়েল টেক্সটাইল (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, জুট স্পিনার্স (‘জেড’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, এমারেল্ড অয়েল (‘জেড’ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং সি এন্ড এ টেক্সটাইল (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন