শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শূন্য হৃদয় আজ পূর্ণ

শূন্য হৃদয় আজ পূর্ণ
  • সর্বনাশা পদ্মা আজ অসহায়

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। হাজার বছরের অপেক্ষার অবসানে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে সেতুটি। লাল-সবুজের গর্বের সেতু নিজ অর্থে বানিয়ে বিশ্বকেও তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের বিস্ময় সেই সেতু দেখতে গতকাল শনিবার উদ্বোধনী দিনে এসেছিলেন শরীয়তপুরের পালং উপজেলা থেকে এসেছেন তরুণ ব্যবসায়ী তৌহিদুজ্জামান। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের শেষ নাই তার।

তৌহিদুজ্জামান বললেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোল দেওয়ার পর উৎসুক জনগণের অনেকেই সেতুর উপরে উঠে যান। সেসময় আমিও সেতুতে উঠি। দারুণ আনন্দ হচ্ছে। চারদিকে লাখো জনতার বিজয় উল্লাস। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে আসা মাইনুদ্দিন বললেন, উদ্বোধনের পরপরই সেতুতে উঠতে পেরে খুবই খুশি। পদ্মায় ভেসে ভেসেই শুধু এতদিন নদী দেখেছি। এখন দেখছি পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুতে উঠে। বিস্ময়কর লাগছে। অবশ্য সেতুতে ওঠার সময় পুলিশ খুব খারাপ আচরণ করেছে তার সঙ্গে। তবে সেতুতে ওঠার আনন্দ সেই খারাপ আচরণকে ম্লান করে দিয়েছে।

অবশ্য তৌহিদ কিংবা মাইনুদ্দিনের মতো সবার ভাগ্য হয়নি সেতুর ওঠার। এরকমই একজন মাদারীপুরের শিবচর থেকে আসা তরুণী মৌসুমি। তিনি বলেন, ইচ্ছা ছিল পদ্মা সেতুতে ওঠবো। তাই সেই সকালেই চলে এসেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন টোল দিয়ে চলে গেলেন তখনই সুযোগ এলো। কিন্তু কাজে লাগাতে পারলাম না। ওঠার সময় পুলিশ বাধা দিল। সেই বাধা ঠেলে আর ওঠা হলো না।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে শিবচরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে আসা এক শিক্ষক আবদুল মান্নানও আক্ষেপ করে বললেন, পুলিশের বাধায় সেতুতে উঠতে পারলাম না। তবে আপসোস নেই, গাড়ি চলাচল শুরু হলো তো এই পথেই যেতে হবে আসতে হবে। তখন ইচ্ছেটা পূরণ হবে। তিনি বলেন, আমাদের আর দীর্ঘ সময় ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আর পোহাতে হবে না যানজট। বাঁচলাম ভোগান্তি থেকেও। সেতুর কারণে এখন মাত্র এক ঘণ্টায় যেতে পারব রাজধানীতে।

আরও পড়ুনঃ  ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভুল বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত

গতকাল শনিবার বেলা ১১টা ১২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর। যার মধ্য দিয়ে জনগনের অবসান হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষার। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সেতুর ওপর উঠে পড়েন উৎসুক জনতা। লাল–সবুজের পতাকা নিয়ে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা। মুখরিত হয়ে ওঠে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে। পরে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেতু থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেয়।

মূলত, বিশ্বের সবচেয়ে ভাঙন প্রবণ নদী পদ্মা। প্রতিবছর প্রবল ভাঙনে শত শত একর ফসলি জমি আর ঘরবাড়ি গিলে ফেলে পদ্মা। ভয় আর আতঙ্ক নিয়েই দিন কাটে পদ্মাপাড়ের জনপদের মানুষের। সেজন্যই পদ্মার আরেক নাম রাক্ষুসে নদী। যুগ যুগ ধরে পদ্মার সর্বগ্রাসী সেই রূপ দেখে এসেছেন পাড়ের মানুষ। এবারই প্রথম পদ্মার বুকে গৌরব আর অহংকার নিয়ে দাড়ানো পদ্মা সেতুর উপর থেকে পদ্মা নদীকে দেখলেন সাধারণ মানুষ। দেখলেন, সর্বনাশা পদ্মা যেন অসহায় হয়ে তাকিয়ে রয়েছে উল্লাসে মেতে ওঠা সাধারণ মানুষের দিকে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন