শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ার দরে ভরাডুবি

শেয়ার দরে ভরাডুবি

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল রবিবার লেনদেন সাতশ কোটি টাকার ঘরের কাছাকাছিতে অবস্থান করেছে। এদিন শেয়ার বিক্রেতার হিড়িক পড়ে। ফলে শেয়ার দর পতনের ভরাডুবি লক্ষ্য করা যায়। এদিন ৯১ ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। সব ধরনের সূচক পতন হয়। এদিনে শেয়ার দর পতনের ভরাডুবির একই অবস্থা অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। এদিন ৮৮ ভাগ কোম্পানির শেয়ার দরে পতন হয়। লেনদেন মন্দাসহ সব ধরনের সূচক পতনে।

রেগুলেটরদের বিভিন্ন উন্নয়ন পরও পুঁজিবাজার পতনে। হাজারো উন্নয়ন পুঁজিবাজারকে কোন ভাবেই মন্দা থেকে বের করে আনতে পারছে না। পতন কারণে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে বলে জানান পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, মন্দায় অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হচ্ছে। যার মধ্যে ভাল কোম্পানির সংখ্যা বেশি। লেনদেন ৬ থেকে ৭শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। লেনদেনে শেয়ার বিক্রির চাপ বহুগুন বেশি। সেই তুলনায় ক্রেতা নেই বললেই চলে। যার কারনে অস্বাভাবিক হারে কমছে সূচক। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হচ্ছে। এধরনের পতন ভাল লক্ষণ না পুঁজিবাজারের জন্য। এবারে চলতে থাকলে এক সময়ে বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়বে পুঁজিবাজার।

পুঁজিবাজারে (ডিএসই ও সিএসই) এদিন ৮৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এর মধ্যে ডিএসইর ৯১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং সিএসইর ৮৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়। এদিন পুঁজিবাজারে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়। এর মধ্যে ডিএসইর ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং সিএসইর ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এই ধরনের কমা অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুনঃ  সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজার

ডিএসইতে এদিন খাদ্য আনুষঙ্গিক, জ্বালানি শক্তি, সেবা আবাসন, পেপার, চামড়া এবং পাট খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এদিন ব্যাংক, বিমা, ইঞ্জিনিয়ারিং, ওষুধ রসায়ন, বস্ত্র, ফান্ড, নন ব্যাংকিং আর্থিক, বিবিধ, আইটি, সিমেন্ট, সিরামিক, ভ্রমন অবসর এবং টেলিকম খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এর মধ্যে বস্ত্র খাতের ৯৩ শতাংশ, আইটি খাতের ৯১ শতাংশ, ওষুধ রসায়ন খাতের ৯০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতের ৮৬ শতাংশ, ফান্ড খাতের ৮৩ শতাংশ, বিমা খাতের ৮৮ শতাংশ, সিরামিক খাতের ৮০ শতাংশ, বিবিধ খাতের ৮৭ শতাংশ, ব্যাংক খাতের ৭৯ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের ৭৮ শতাংশ, নন ব্যাংকিং আর্থিক খাতের ৭৮ খাতের, ভ্রমন অবসর খাতের ৭৫ শতাংশ এবং টেলিকম খাতের ৬৭ শতাংশ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। শেয়ার দর কমার একই চিত্র ছিল পুঁজিবাজার সিএসইতে। দুই স্টকের এ ধরনের শেয়ারের দর হ্রাসকে অস্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইতে গতকাল রবিবার লেনদেন হয়েছে ৬৮২ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৬৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২১টির, কমেছে ৩৪৫টির এবং পরিবর্তন হয়নি ১৩টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৫ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৪২ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৩৯ দশমিক ৫১ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ২১ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২৭৭ দশমিক ১৬ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৬১ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে।

আরও পড়ুনঃ  পুঁজিবাজারে লেনদেনের শীর্ষে বেক্সিমকো

এদিনে ডিএসইতে সাউর্থ ইস্ট ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন ডিএসইতে সাউর্থ ইস্ট ব্যাংক ৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এদিন আইপিডিসি ফাইন্যান্স ৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ২৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২৪ কোটি ১২ লাখ টাকা, জেএমআই হসপিটাল ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, স্যালভো কেমিক্যাল ১৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা, এসিআই ফরমুলেশন ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং শাইনপুকুর সিরামিকস ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

অপরদিকে চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এদিন লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৩ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৭টির, কমেছে ২৪২টির এবং পরিবর্তন হয়নি ১৭টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৬২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৭ দশমিক ৭১ পয়েন্টে।

এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ২৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৭৭ দশমিক ৭১ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ২১৭ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ২৩ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৫১ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ১৯৫ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৮৪৭ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৪৯ দশমিক ১১ পয়েন্টে।

আরও পড়ুনঃ  পানিতে নষ্ট হচ্ছে ২ কোটি টাকার বাঁশ

এদিন সিএসইতে জেএমআই হসপিটালের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন সিএসইতে জেএমআই হসপিটাল ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এদিন সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ৮২ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ৭২ লাখ টাকা, সাউর্থ ইস্ট ব্যাংক ৬২ রাখ টাকা, রিপালিক ইন্স্যুরেন্স ৪৬ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৪৬ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মা ৩৮ লাখ টাকা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স ৩৭ লাখ টাকা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন