শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুশ্চিন্তায় মাছ-মাংস বিক্রেতারা

দুশ্চিন্তায় মাছ-মাংস বিক্রেতারা

বাজারে বেড়েই চলেছে সব ধরণের পন্যের দাম। মাছ-মাংসের বাজারও কয়েক সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী। ঈদের সপ্তাহে এসেও কমার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। বরং বেড়েই চলেছে। বিক্রেতাদের নানা অজুহাতে বাজার হয়ে উঠেছে অস্থিতিশীল। এতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলাতে না পেরে মাছ-মাংসের বাজার থেকে একপ্রকার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে ক্রেতা সংকটে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর কাওরানবাজার, হাতিরপুল, রামপুরা ও সেগুনবাগিচা এলাকার কয়েকটি মাছ ও মাংসের বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মাছ বিক্রেতাদের দাবি, অন্যান্য নিত্যপণ্যের তুলনায় মাছের দাম তেমন একটা বাড়েনি। তারপরও মাছের বাজারে ক্রেতা কম। বিক্রেতারা বলছেন, বেশির ভাগ ক্রেতাই এসে দাম জিজ্ঞেস করে চলে যান। ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য কিনতেই পকেটের টাকা শেষ হয়ে যায়, মাছ-মাংস কিনবো কেমন করে? মাছ-মাংস তো এখন বড়লোকের খাবার হয়ে গেছে। এটা এখন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে বিলাসি পণ্য।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ২০০ টাকার কমে কোনো মাছই পাওয়া যাচ্ছে না এখন। মানভেদে তেলাপিয়া মাছের কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। রুই মাছের কেজি ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। মলা মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পুঁটি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাশের কেজিও ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।

রাজধানীর বাংলামোটরে একটি ম্যাসে থাকেন আব্দুল করিম। তিনি বলেন, আমরা এক মেসে সাতজন থাকি। সবাই প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। তবে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সবারই বেতন পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এক মাসের বেতন অন্য মাসে পাচ্ছেন। এতে মেসের খরচ জোগাড় করতে সবারই হিমশিম খেতে হয়। তাই আমরা খরচ কমাতে মাছ-মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। আগে প্রতিদিনই মাছ অথবা মাংস থাকতো পাতে। তবে ঈদের পর থেকে মাত্র দুদিন মাছ আর দুদিন মুরগী কেনা হয়েছে। সপ্তাহের অন্যান্য দিন ডিম আর ডাল দিয়ে চলে যায়।

আরও পড়ুনঃ  সিরিজের সেরা ব্যাটসম্যান হলেন নাইম

রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও মাছ-মাংসের দোকানে নেই চিরচেনা ক্রেতাদের আনাগোনা। অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। দু’একজন ক্রেতা এলেও প্রায় প্রতিটি দোকান ঘুরে দেখে দামে যদি মেলে তাহলে কিনছেন। তবে বেশিরভাগ ক্রেতা দর-দাম করেই চলে যাচ্ছেন।

মাংস বিক্রেতা আব্দুল আজিজ দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, ঐ যে দেখছেন আমাদের পাশের মাছের বাজার, সেখানেই কোনো ক্রেতা নেই। আমাদের মাংসের দোকানে ক্রেতা আসবে কোথা থেকে। মাছের দোকানে যদি দশজন ক্রেতা আসে তাহলে আমাদের দোকানে আসে একজন। সারাদিন অলস সময় পার করতে হচ্ছে আমাদের। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই কিনতে পারছে না, এখন আমাদের থেকে আবার মাংস কিনবে কেমনে? তবে মাঝে মাঝে দুয়েকজন সাহেব এসে কিছু মাংস কিনে নিয়ে যান। যে কারণে আমরা এখনো টিকে আছি।

রামপুরা এলাকার বাসিন্দা রজিনা ইসলাম পেশায় গৃহিণী। স্বামী আরেফিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে। সর্বসাকুল্যে বেতন পান ২০ হাজার টাকা। যা থেকে বাসাভাড়া দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। বাকি ৮ হাজার টাকা দিয়ে সংসার খরচ আর বাচ্চার স্কুলের খরচ মেটাতে হয় তাকে। রজিনা বলেন, খরচ মেটাতে না পারায় মাছ-মাংস কেনা বন্ধ করে দিয়েছি আমরা।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন