শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইফতারের সৌন্দর্য্য টিএসসিতে

ইফতারের সৌন্দর্য্য টিএসসিতে

কোনখানে দুই-তিন জন, কোনোখানে আট-দশ জন, আবার কোথাও কোথাও  দেখা যায় পনেরো-বিশ জনকে গোল হয়ে ইফতার করতে। বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসির (শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্র) মাঠে শিক্ষার্থীদের ইফতার করার দৃশ্যের কথা। প্রতি বছর সিয়াম সাধনার মাসে এভাবেই গোল হয়ে বসে ইফতার করাটা ঢাবির টিএসসির সৌন্দর্য্য কে আরও বাড়িয়ে দেয়।  তবে করোনা মহামারির কারণে এ অপরূপ দৃশ্যের ব্যাঘাত ঘটেছিল গত দু’বছর। মহামারি পেরিয়ে টিএসসি আবারও পুনরায় ফিরে পেয়েছে তার আপনরূপ।

ঢাবিতে করোনা মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য অ্যাকাডেমিক ৬ মাসের সেমিস্টারকে করা হয়েছে ৪ মাসে এবং ১২ মাসের এক ইয়ারকে করা হয়েছে ৮ মাসে। সে কারনে এবার রমজান মাসে কমে এসেছে ছুটি। বর্তমানে সকল ডিপার্টমেন্টে চলমান রয়েছে মিডটার্ম পরীক্ষাসহ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। যার ফলে এ রমজানে সকল আবাসিক শিক্ষার্থীসহ অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও অবস্থান  করছে ক্যাম্পাসে। তাই  পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে ইফতার করার কষ্ট ভুলে গিয়ে দ্বিতীয় পরিবার খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই-বোন, ছোট ভাই-বোনদের সঙ্গে একসঙ্গে ইফতার করার আনন্দে মেতে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন দল, উপদলে বিভক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, হাকিম চত্বর, লাইব্রেরি চত্বর, ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, আবাসিক হলগুলোর মাঠসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় দলে দলে গোল হয়ে ইফতার করার দৃশ্য। যার অনন্য উদাহরণ হচ্ছে টিএসসির মাঠ। এখানে প্রতিদিন বিকেল হতে হতে জড়ো হতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। কেউবা জায়গা দখল করতে ব্যস্ত, কেউবা ইফতারের আইটেম ম্যানেজ করতে ব্যস্ত, আবার কেউবা সারাদিনের ক্লান্তি মেটাতে শরবত বানাতে ব্যস্ত। যা সংযম ও ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ উৎসুক পরিবেশকে ঘিরে ইফতারের চাহিদা মেটানোর জন্য আশেপাশে বসে হরেক রকমের ইফতারের দোকান। দোকানগুলোতে মুড়ি, জ্বিলাপি, পিয়াজু, ছোলা, চপসহ পুরাণ ঢাকার ঐতিহ্য চকবাজারের বিভিন্ন আইটেম পাওয়া যায়। যা দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ইফতার কার্যক্রম সেরে ফেলে। নেই কোনো বিবাদ, নেই কোনো উচুঁ-নিচুঁ ভেদাভেদ। সকলের সতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই প্রতিদিন বিভিন্ন হল, ডিপার্টমেন্ট, জেলা-উপজেলার শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় এ ইফতার কার্যক্রমে।

আরও পড়ুনঃ  কমেছে মূলধন

কথা হয় টিএসসিতে ইফতার করতে আসা  কয়েকদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা সবাই জানান একসঙ্গে ইফতার করার আনন্দ।  হলের বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে টিএসসিতে এসেছেন ইংরেজি বিভাগের ইলিয়াস সিকদার। তিনি জানান, একসঙ্গে ইফতার করার অনুভূতি। ওই শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা চলার কারনে আগের দিনগুলোতে হলেই ইফতারি করেছি। আজকে সবাই মিলে টিএসসিতে এসেছি। ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়রদের মাঝে খুবই ভালো লাগা কাজ করতেছে এবং গভীর সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। সর্বোপরি পারিবারিক বন্ধনের ন্যায় ভালোবাসা পুনঃজাগরিত হচ্ছে।

আরবি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসান জানান, এ অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা নেই। এ যেন আরেক পরিবার। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র জুনিয়র সবাই ছিলো আজকের ইফতার পার্টিতে। অনেক অনেক ভালো লেগেছে। রমজানের এ শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের সকল ক্ষেত্রে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন