শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ভোটাধিকার প্রয়োগই একমাত্র সমাধান

মা, মাটি ও মানুষের আস্থা ভালোবাসার নীড় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। শত সঙ্কট মোকাবেলায় বাঙালি জাতি কখনো তাবেদার, দখলদারদের কাছে মাথা নত করেনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। আগামী ০৭ জানুয়ারি এ মহারণ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের জনগণ যেনো নির্বিঘ্নে ও উৎসবমূখর পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তাই এখন কাম্য। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগও প্রশংসনীয়। ইতোমধ্যেই এ উদ্যোগ নিবিঘ্ন করতে সরকার বিজিবি, র‌্যাব ও আনসারসহ সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে, গত ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ থেকে এ লক্ষ্যে নিরলসভাবে তারা কাজ করে যাচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এসব উদ্যোগ ফলপ্রসু হবে। হয়রানি ছাড়াই এবার জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

রাষ্ট্রকাঠামোতে গুণগত পরিবর্তন ও রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে থাকতে হলে, প্রয়োজন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। যেখানে সকল গণতন্ত্রকামী দল ও মতের লোকদের অংশগ্রহণ থাকবে। গণতন্ত্রে এর বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এই দলগুলোর মধ্যে ৩০টি দল এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। বিএনপির সাবেক বেশ কিছু নেতা নিজ দল ও বিশ্বাস ছেড়ে এতে অংশগ্রহণ করছে। তবে বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে আসলে, গণতন্ত্রের জন্য ভালো হতো। নির্বাচন একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধক প্রক্রিয়া। তাই বিএনপি এতে না এলেও, সুষ্ঠুভাবে তা সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছাড়াও এতে, জাতীয় পার্টিসহ অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সুতরাং একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন আমরা দেখতে পাব ইনশাআল্লাহ। অতীতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায়, ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবেও কাজ করেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই আধা সামরিক বাহিনী বিপদসংকুল ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় নির্বাচনের সময় জনগণের অনুকুলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যাতে ভোটে অংশগ্রহণ সহায়ক হয়।

আরও পড়ুনঃ  ইবির নবনিযুক্ত উপাচার্যের যোগদান

গত ৩ জানুয়ারি, ২০২৪ থেকে ১০ই জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী নির্বাচনী মাঠে থাকবে । নির্বাচন কমিশনের সভায় সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, ফ্রি, ফেয়ার ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্নক সহযোগিতা দেবে। নির্বাচন কমিশনকে ওনারা আশ্বস্ত করেছেন যে, সশস্ত্র বাহিনী জাতির যেকোন সংকট মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ২০২৪ সালের নির্বাচনে ২০১৪ অথবা ২০১৮ সালের প্রদত্ত ভোটারের সংখ্যা থেকে অনেক বেশি হবে।
একতরফা নির্বাচনের প্রতিবাদে বিএনপি অবরোধ কর্মসূচিও পালন করছে এবং নির্বাচনে যাতে জনগণ ভোট না দেয়, তার জন্য প্রচারণার মাধ্যমে প্রয়াস চালাচ্ছে। অবরোধ কর্মসূচির সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণপরিবহনে এবং রেলওয়েতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সরকার বারবারই বলছে যে বিএনপির অবরোধের ফলে জনজীবনে এর কোন প্রভাব নেই এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ন সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আমি আশাবাদী নির্বাচনে জয়ী হয়ে, আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নেতৃত্বে ইনশাআল্লাহ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। এর ফলে দেশের নাগরিকরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন এবং এতে টেকসই উন্নয়নও নিশ্চিত হবে। এ উন্নয়নটা কোন একটা গোষ্ঠী বা শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সমাজের একেবারে প্রান্তিক স্তরের সাধারণ মানুষ পর্যন্ত এর সুবিধা পৌঁছে যাবে। প্রতি বছর সাধারণত ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট করা হয়। এর মধ্যে এক থেকে দেড় লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করা হয় শুধুমাত্র সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে। এই অর্থ ব্যয় করা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে দারিদ্রপীড়িত মানুষের কাজে। এখানে বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা ছাড়াও আরো অনেক ধরনের ভাতা প্রদান করা হয়। উক্ত অর্থ গৃহহারাদের জন্য গৃহায়ণ ও আশ্রায়ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা চলমান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই কাজগুলো সরাসরি তত্ত্বাবধানও করছেন এবং উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে একটি সবুজ বাংলাদেশ, একটি টেকসই উন্নয়নের বাংলাদেশ, একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নকে বলতে পারি এবং এর উন্নয়নের ফলে সকলের কাছে সুফল পৌঁছবে। সেই বাংলাদেশ আমরা আগামীতে অবশ্যই দেখতে পাব।

আরও পড়ুনঃ  বিআইইউতে ফল সেমিস্টার ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম

নির্বাচনের পর নানা ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ বা স্যাংশন আসতে পারে, বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। যারা স্যাংশনের কথা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে স্যাংশন সম্পর্কে তাদের ধারণা অনেক কম। আমার বিশ্বাস, কোনো বাধা আমাদের অগ্রগতিকে থামিয়ে রাখতে পারেনি ১৯৭১ সালে এবং এখনও পারবে না। সুতরাং এগুলো নিয়ে চিন্তিত হবার কিছুই নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ। অনেক ইনডেক্সে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শক্তিই হচ্ছে দেশের জনগণ। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কষ্টসহিষ্ণু, সাহসী, দৃঢ় প্রত্যয়ী মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ এবং প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা তরুণ ভোটারদের প্রতি রইলো, আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। পরিপূর্ণ আস্থার সঙ্গে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ অতীতের অন্ধকার পেছনে ফেলে এখন আলোকিত ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন আলোর পথের যাত্রী, উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিশারী, যা আমাদের ২০৪১ সালের উন্নত দেশে রুপান্তর করবে ইনশাআল্লাহ।
আসুন আমরা আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হই।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।


লেখক: উপাচার্য, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সাবেক উপাচার্য, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন