শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্যমাত্রা বেশি সংগ্রহ কম

কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ করতে পারছে না রংপুর খাদ্য বিভাগ। গত কয়েক বছর ধরে দপ্তরটি তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। গত তিন বছরে ৮০ হাজার টন বোরো ও আমন ধান কেনার

কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ করতে পারছে না রংপুর খাদ্য বিভাগ। গত কয়েক বছর ধরে দপ্তরটি তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। গত তিন বছরে ৮০ হাজার টন বোরো ও আমন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার টন। এই ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে আগামীকাল ১০ নভেম্বর থেকে আমন ধান সংগ্রহ অভিযানে নামবে দপ্তরটি। কৃষকদের দাবি, ধান সংগ্রহের জন্য যেভাবে কৃষক বাছাই করা হয় তা স্বচ্ছ নয়। এতে প্রকৃত কৃষকরা ধান দিতে পারেন না।

রংপুর জেলা খাদ্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে রংপুর জেলার আট উপজেলার ৯টি এলএসডি গোডাউন কর্তৃপক্ষকে কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি ধান কেনার লক্ষ্য দেয়া ছিল ২৪ হাজার ৪৭৫ টন। এর মধ্যে রংপুর সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮৮৮, বদরগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ১৬৬, শঠিবাড়ি ৬ হাজার ৪৮১, পীরগঞ্জ ৫ হাজার ৫১০, ভেন্ডাবাড়ি ১ হাজার ৫৭৮, তারাগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ২৩০, গংগাচড়া উপজেলায় ১ হাজার ৪৪৩, কাউনিয়ায় ১ হাজার ৯৩৩ এবং পীরগাছা উপজেলায় ২ হাজার ৫৪৬ টন। এর মধ্যে কেনা হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫১৪ দশমিক ৬৪০ টন। অন্যদিকে ৪৪২ টন গম কেনার সিদ্ধান্ত থাকলেও আট উপজেলা থেকে ১ ছটাক গমও কেনেনি খাদ্য বিভাগ।

২০২১ সালে জেলার ৯ এলএসডি গোডাউন কর্তৃপক্ষকে ১৭ হাজার ৪০৩ টন বোরো ধান ক্রয় করার নির্দেশ দেয়া হলেও তারা ক্রয় করতে পেরেছে মাত্র ৭ হাজার ১৮২ দশমিক ৪৪০ টন, আর গম ৬৩৫ টন কেনার সিদ্ধান্ত থাকলেও ওই বছরে এক কেজিও কিনতে পারেনি তারা। একই মৌসুমে ১০ হাজার ৩৮২ টন আমন ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও ক্রয় হয়েছে মাত্র ২ হাজার টন। ওই বছর (২০২১) রংপুর সদর, বদরগঞ্জ, শঠিবাড়ি তারাগঞ্জ, গংগাচড়া, কাউনিয়া এবং পীরগাছা এক ছটাক ধানও কিনতে পারেনি। আগের বছর গম কিনতে না পারায় এ বছর গম কেনার টার্গেটও নেননি কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুনঃ  দুর্যোগ নিষেজ্ঞায় চিড়েচ্যাপ্টা জেলেরা

এদিকে, ২০২২ সালে ৯টি এলএসডি গোডাউন কর্তৃপক্ষকে ১৭ হাজার ৯৯৯ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল কিন্তু ক্রয় করতে পেরেছে ৬ হাজার ২৫ দশমিক ২৪০ টন। আর গম ৯৯৮ টন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও গম কিনতে পারেনি তারা। আর আমনে ১০ হাজার ১৪৯ টন কেনার কথা থাকলেও ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কিনেছে মাত্র ৩২ টন।

আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি লটারি করে বিজয়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলায় ধান চাষ করেছেন এমন কৃষকের তালিকা থাকে কৃষি অফিসে। তাদের মধ্য থেকে যারা কৃষি ভর্তুকি পান, তাদের নাম যায় ক্রয় কমিটির প্রধানের কাছে। ওই তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক বাছাই করে উপজেলা চত্বর ও উপজেলা খাদ্যগুদামের সামনে তালিকা টানিয়ে দেয়া হয়।

রংপুর কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ধান দেয়ার জন্য যে তালিকা অফিসের সামনে ঝোলানো হয়, তা কর্মকর্তাদের করা, নাকি কোনো কৃষকের করা তা বোঝা মুশকিল। সংশ্লিষ্টরা নানা অজুহাত দেখিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান না কিনে দালালদের মাধ্যমে তালিকায় কয়েকজনের নাম তুলে দেন। এতে দালাল-ফড়িয়া ও কিছু অসাধু কৃষি ও খাদ্য কর্মকর্তা লাভবান হচ্ছেন। তালিকায় স্বচ্ছতা থাকতে হলে অবশ্যই কৃষকদের উপস্থিতিতে লটারি করতে হবে।

কৃষক আয়নাল হক বলেন, কোন দিন কীভাবে লটারি হয় আমরা জানি না। ধান কিনতে লটারি কেন? কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনতে হবে, তবইে কৃষক লাভবান হবে।

আরও পড়ুনঃ  কমিশনের অনুমোদন না পাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন

রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রিয়াজুর রহমান বলেন, কৃষকের একটি সফটওয়্যার আছে, সেখানে তারা ধান বিক্রির জন্য আবেদন করেন। সেখান থেকে লটারি করা হয়, যাদের নাম ওঠে তারাই ধান বিক্রি করেন।

কর্মকর্তা আরও বলেন, বাজারের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ধান দিতে চান না । এ ছাড়া গুদামে ধান দিতে হলে অনেকটা শুকাতে হয়, অপেক্ষা করতে হয়। তবে, বাজারে দাম কম দাম পেলে তখন অনেক কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করেন।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন