ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে আজ ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সাগর ও নদীতে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। সরকার ঘোষিত এই ২২ দিনে সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ন নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ। এ আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারান্ড অন্যথায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডিত করা হবে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর উপকূলীয় পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর সংলগ্ন এলাকা ঘুরে জানা গেল প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর অপরিকল্পিত নিষেধাজ্ঞার কবলে জেলেরা দুর্বিষহ জীপনযাপন করছে। ঋণের ভারে সংসারে বেহাল দশা। কেউবা পেশা বদলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে নিষিদ্ধ এলাকায় প্রশাসন কঠোর নজরদারী করবে বলে জেলার টাস্কফোর্স কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভায় উল্লেখকরা হয়েছে।
জানা গেছে, সারা বছরই ইলিশ ডিম দেয়। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এ দুই মাসের চারটি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় ডিম পাড়ে। বিশেষ করে অক্টোবরের দুটি অমাবস্যা-পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মা ইলিশ রক্ষা করা, যাতে তারা নিরাপদে নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। এই ডিম রক্ষা করতে পারলে তা নিষিক্ত হয়ে জাটকার জন্ম হবে। সেই জাটকা রক্ষা করা গেলে দেশে বড় আকারের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর প্রতিবছর ২ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন ৮ মাস জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। দুই ধাপের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশে ইলিশ উৎপাদন যেভাবে বেড়েছে।
আর জেলেরা বলছেনÑ ‘জুলাই-সেপ্টেম্বর। এই তিন মাস নদ-নদী এবং সাগরে ইলিশ মাছ ধরার ভরা মৌসুম। টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরে সাগরে আশানুরূপ ইলিশের দেখা মেলেনি। মৌসুমের মাঝামাঝি কিছু সংখ্যক জেলে মাছ পেলেও অনেকে ফিরেছে রসদের পরিমাণ মাছ নিয়ে। এমন পরিস্থিতে আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় জেলেরা লোকসানের মুখে পড়েছে। এর মধ্যে জেঁকে বসেছে একেরপর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এনজিও ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধের চিন্তায় স্থানান্তর হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’ তারা আরও দাবী তোলেন নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে যে সহায়তা দেয়া হয় তাও অপ্রতুল। এবং দেয়া হয়না সঠিক সময়ে। আর জনপ্রতিনিধিরা সে চাল বিতরণে অনিয়ম করেন।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী সাগর ও নদীতে গতবছরের জুলাই হতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৭২ হাজার ৫০০ মে.টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। নিবন্ধিত ৭৩ হাজার ৩৭১ জন জেলে রয়েছে। যারা সরকারি সকল সুবিধাভোগী। আর অনিবন্ধিত যে জেলেদের নিবন্ধিত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
মৎস্য গবেষণার তথ্যানুযায়ী,‘ইলিশ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যসম্পদ। বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম এবং রোল মডেল। সরকারের বাস্তবমুখী কার্যক্রম মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত¡াবধানে দেশে ইলিশের বিস্তৃতি এবং উৎপাদন বেড়েছে। গবেষণা ও সংরক্ষণ কার্যক্রমে গত ১২ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৮৫ শতাংশ। মা ইলিশ সুরক্ষিত হওয়ায় গত বছর ৩৯ দশমিক ৩১৫ কোটি জাটকা ইলিশ পরিবারে নতুন করে যুক্ত হয়েছে। গবেষণায় আরও জানা গেছে নদী ও সাগরের মোহনায় ছোট ফাঁসের অবৈধ জাল এবং ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।’ তবে এক্ষেত্রে সকলকে সচেতন এবং সচেষ্ট থাকতে হবে। এর ফলে নিষেধাজ্ঞার সুফল দেশ পাবে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানালেন, নিষেধাজ্ঞার সময়কালে ৬৪ হাজার ৭৭১ জন জেলে ২৫ কেজি করে চাল পাবে। ইতোমধ্যে চাল বিতরণের ডিও হয়েছে।