শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় বোমার চেয়ে বিনা চিকিৎসায় বেশি মানুষ মরতে পারে: ডব্লিউএইচও

গাজায় বোমার চেয়ে বিনা চিকিৎসায় বেশি মানুষ মরতে পারে ডব্লিউএইচও

স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গাজায় বোমা হামলার চেয়ে বেশি মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই জন্য শিগগির স্বাস্থ্যসেবা পুনরুদ্ধারের তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটি।

জাতিসংঘের বিভিন্ন কেন্দ্রে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব কেন্দ্রে প্রায় ১১ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তরাও কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পাল্টা ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় ভেঙে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এর ফলে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে শিশুরা।

বর্তমানে চুক্তির আওতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গত শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি চলছে। এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তা বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই যুদ্ধবিরতি আরও বাড়তে পারে বলে গুঞ্জন আছে। এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই সতর্কতা জানাল। এ ছাড়া কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর চুক্তিতে গাজায় জিম্মি আরও ২০ ইসরায়েলি নারী ও শিশু মুক্ত হবে। এ ছাড়া ইসরায়েলি কারাগারে আটক ৬০ ফিলিস্তিনি নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও মুক্তি দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার প্রাথমিক চুক্তির চতুর্থ ও সর্বশেষ দিনে ১১ জিম্মি ও ৩৩ বন্দীকে মুক্ত করা হয়। এতে মোট জিম্মি ও বন্দী মুক্তির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ ও ১৫০ জনে। মুক্ত করা জিম্মিদের মধ্যে ১৯ জন বিদেশি নাগরিক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজনের ইসরায়েলি নাগরিকত্বও ছিল। হামাসের সঙ্গে পৃথক চুক্তিতে এদের মুক্তি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ  'গাজাকে ইসরায়েলি সৈন্যদের সমাধিক্ষেত্রে পরিণত করা হবে' হুমকি ইরানের

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস এক নজিরবিহীন হামলা চালায়। এতে অন্তত ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজা অবরুদ্ধ করে সামরিক অভিযান চালানো শুরু করে। গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের মতে, ইসরায়েলের এই হামলায় গাজায় অন্তত ১৪ হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, গত সাত সপ্তাহে গাজার ১৮ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর ৬০ শতাংশ মানুষই ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য তৈরি জাতিসংঘের প্রায় ১৫৬টি শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ড. মারগারেট হ্যারিস জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নানা সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। নভেম্বরের শুরুতে পাঁচ বছর বা এর বেশি বয়সী শিশুদের মধ্যে সাধারণের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি মাত্রায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। মারগারেট বলেন, ‘তাদের কোনো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। চিকিৎসা ছাড়া এ শিশুদের অবস্থার দ্রুত অবনতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’ জাতিসংঘের মতে, গাজার উত্তরাঞ্চলে মাত্র পাঁচটি হাসপাতালে আংশিকভাবে কার্যক্রম চলছে। গাজার এই অঞ্চলই মূলত ইসরায়েলি স্থল অভিযানের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি হাসপাতালের আটটিতে কার্যক্রম চললেও সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। দক্ষিণাঞ্চলের এই হাসপাতালগুলোর মধ্যে কেবল একটিতে গুরুতর ট্রমার চিকিৎসা বা জটিল সার্জারি করার ক্ষমতা রয়েছে। মারগারেট সতর্ক করে বলছেন, ‘স্বাস্থ্যব্যবস্থা আগের মতো চালু না হলে বোমাবর্ষণের চেয়েও বেশি মানুষকে রোগে মারা যেতে দেখব আমরা।’

আরও পড়ুনঃ  গাজায় একদিনে প্রাণ হারাল ১০৭ ফিলিস্তিনি, নিহতের সংখ্যা ছাড়াল সাড়ে ২৭ হাজার

ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার গাজা থেকে সাংবাদিকদের ভিডিও বার্তায় যুদ্ধে ভয়াবহভাবে আহত শিশুভর্তি হাসপাতাল দেখার কথা বলেন। তিনি স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে পা হারানো এক শিশুকে হাসপাতালের মেঝেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চিকিৎসাহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছেন। এ ছাড়া আরও অনেক শিশু হাসপাতালের বাইরে গাড়ি পার্কিং ও বাগানে পড়ে ছিল। বাস্তুচ্যুত শিশু ও তাদের পরিবারও সঠিক আশ্রয়ের অভাবে ভুগছে। বাস্তুচ্যুত মানুষ বর্তমানে গাজার বৃষ্টি ও শীত মৌসুম থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো পোশাকের অভাবেও ভুগছে। যুদ্ধ সাময়িক স্থগিতের চুক্তির চার দিনে ৮০০ ত্রাণবাহী লরি গাজায় প্রবেশ করে। এর মধ্যে কিছু সহায়তা গাজার উত্তরাঞ্চলে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। এটি অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি সামান্য। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, এমন পরিস্থিতিতে আবারও যুদ্ধ শুরু করার ভাবাও উচিত না। তারা আবারও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন