শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বীজ বিক্রি করে চলে আবুল হোসেনের সংসার

বীজ বিক্রি করে চলে আবুল হোসেনের সংসার

সত্তোর্ধ মো: আবুল হোসেন। বয়সের ভারে স্বাভাবিক চলতে যেন অনেকটা তার কষ্ট। তারপরও জীবন বাঁচাতে থেমে নেই যুদ্ধ। যে বয়সে ছেলে-মেয়ে আর নাতি-নাতনিদের সাথে আনন্দে দিন কাটানোর কথা। ঠিক সেই বয়সে এসে তিন বেলা খাবার জোটানোর জন্য অন্যের বোঝা না হয়ে খোলা আকাশের নিচে নানা প্রকারের সবজি বীজসহ পিঁপড়া, তেলাপোকা ও ইদুর মারার ওষধ বিক্রি করছেন।

আর এই সব বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তার উপর নির্ভর করে চলে তার সংসার। টানা প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি ওই সব বিক্রি করে আসছেন। আবুল হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের রাধানগর এলাকার বাসিন্দা। তিনি পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকায় ফুটপাতে বসে নানা প্রকারের সবজি বীজ ও পিঁপড়া, তেলাপোকা ও ইদুর মারার ওষধ বিক্রি করছেন। আবুল হোসেন বলেন তার দেশের বাড়ি চাঁদপুর হলে ও তিনি এখানে দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে গত ১০ বছর ধরে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে ও ৩ মেয়ে থাকলে ও দ্বিতীয় স্ত্রীর কোন সন্তান নেই। প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা দেশের বাড়িতে থাকছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর শহরের সড়ক বাজার পোষ্ট অফিস সংলগ্ন ফুটপাতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে নানা প্রজাতির সবজি বীজ ও পিঁপড়া, তেলাপোকা ও ইদুর মারার ওষধ নিয়ে বসে আসেন। রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত বসে ওইসব বিক্রি করছেন। প্রতি প্যাকেট সবজি বীজ ২০ টাকা থেকে উপরে ১শ টাকা,আর পিঁপড়া, তেলাপোকা ও ইদুর মারার ওষধ ১০ টাকা থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছেন। দৈনিক ৭শ থেকে ১ হাজার টাকার উপর বিক্রি হয়। দিন শেষে ওইসব বিক্রি করে আড়াইশ থেকে ৩শ টাকা তার আয় হয়। এতেই চলছে তার সংসার। তিনি আরো বলেন বয়স হয়েছে আগের মতো চোখে তেমন দেখি না। শরীরের শক্তি কমে গেছে। ঠিক মতো মালামাল রাখতে পারি না। এপরও আল্লাহ ভালো রেখেছেন।

আরও পড়ুনঃ  রাখাইন নারীদের তাঁতশিল্প বাঁচবে তো?

তিনি আরো বলেন এক সময় তিনি চাঁদপুর এলাকায় ওইসব বিক্রি করতেন। ব্যবসা তখন খুবই ভালো ছিল। এক পর্যাায়ে মালামাল চুরি হয় সেইসাথে নানা সমস্য দেখা দেওয়ায় ব্যবসায় লোকসান শুরু হয়। এরপর জীবন বাঁচাতে স্বল্প পরিসরে পুনরায় বিক্রি শুরু করেন। চাঁদপুর ছাড়াও অন্য জেলাতে একটানা তিনি ২০ বছর ওইসব সবজি বীজ ও ওষধ বিক্রি করেন। এরমধ্যে প্রথম স্ত্রী তার সন্তান নিয়ে অনেকটাই আলাদা হয়ে যায়। এরপর তিনি আখাউড়ায় চলে আসেন। এখানে গত প্রায় ১০ বছর ধরে সবজি বীজ বিক্রি জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বর্তমানে বয়সের ভারে চলাফেরা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। অথচ, জীবন সায়াহ্নে এসে এখন চিন্তা করতে হচ্ছে তিন বেলা খাবার জোটানোর। বর্তমানে তার স্ত্রীর প্রতিটি দিনই কাটে সীমাহীন এক অনিশ্চয়তায়।

আবুল হোসেন বলেন আমার ছেলে মেয়ে থাকলেও তারা তার কাছে কেউ থাকেন না। চলতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে তারা মাঝে মধ্যে আর্থিক কিছু সহায়তা করছেন। তবে তারা কেউ এখানে আসে না। তিনি বলেন এই বয়সে অসহায় লোকজনরা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন।

কিন্ত তার ভাগ্যে ওইসব জুটেনি। বয়সের ভারে বেশীভাগ সময় অসুস্থ থাকাতে হয়। তখন ঠিক মতো বসে ওইসব বিক্রি করা খুবই কঠিন হয়ে যায়। সব জিনিসের দর বেড়ে যাওয়ায় বাসা ভাড়াসহ সংসারের যাবতীয় খরচ দিয়ে চলা এই বয়সে অনেকটাই যেন কঠিন হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাসুম মিয়া বলেন আবুল হোসেন দীর্ঘ অনেক বছর ধরে রাস্তার পাশে বসে নানা প্রকারের সবজি বীজ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এই বয়সে খোলা আকাশের নিচে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করা আসলেই খুবই কঠিন কাজ।

আরও পড়ুনঃ  লৌকিক আচার সিঁদুরদান

গৃহিণী আলেয়া বলেন, আমি প্রায় সময় এখান থেকে মৌসুমী সবজি বীজ ক্রয় করি। তার বীজ খুবই ভালো। উপজেলা প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্লাবের সদস্য সাংবাদিক মো: রুবেল আহমেদ বলেন, আসলেই আবুল হোসেন একজন কর্মঠ মানুষ। জীবিকার প্রয়োজনে এই বয়সে এসে এখনো তাকে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে । সন্তানরা যদি তাকে দেখবাল করতো তাহলে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এতো কষ্ট করতে হতো না।

উপজেলা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি মো. মুসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আবুল হোসেন খুবই একজন অসহায় মানুষ। দীর্ঘ বছর ধরে ফুটপাতে সবজি বীজসহ পিপড়া, তেলাপোকাসহ নানা প্রকারের ওষধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শুনেছি তার পুত্রসন্তান রয়েছে। সন্তান হয়ে পিতামাতার দায়িত্বপালন না করলে সেটা খুবই অন্যায় । আসলে প্রতিটি ধর্মে পিতামাতাসহ বড়দেরকে সম্মান করার কথা বলা হয়েছে। সন্তানের দায়িত্ব, শৈশবে বাবা-মা যেমন সন্তানকে বড় করে, তাদের দেখে রাখে; তেমনি সন্তান বড় হয়ে যেন এবাবেই তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখে। এটি হচ্ছে তাদের নৈতিক দায়িত্ব।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন