শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাখাইন নারীদের তাঁতশিল্প বাঁচবে তো?

রাখাইন নারীদের তাঁতশিল্প বাঁচবে তো

রাখাইন নারীদের নিপুণ হাতে তৈরী করা তাঁত বস্ত্র বেশ জনপ্রিয়। রাখাইন পল্লীতে দিন-রাত তাঁতের খুটখুট শব্দে মুখর ছিল। কর্ম ব্যস্ততায় ছিল না দম ফেলার সুযোগ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব বদলালেও বদল হয়নি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রাখাইনদের ভাগ্যে। নানা সংকটের কারনে তাদরে এই ঐতিহ্য এখন হারাতে বসেছে। কাচামালের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় তাঁতশিল্প হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কারিগররা। তারা বলছেন এটি বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি কিংবা বেসরকারি সহযোগীতা দরকার।

জানা গেছে, আধুনিক তাঁত বুনন পদ্ধতির আওতায় না থাকায় তাঁত কারিগররা হতাশ। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে পড়েছেন জীবিকার দৈন্যতায়। সনাতনী পদ্ধতিতে হাতে বোনা লুঙ্গি, তোয়ালে, চাদরসহ নানা সামগ্রীর মূল্য তুলনামূলক কিছুটা বেশি হলেও টেকসই হয় বেশি দিন। কিন্তু সুতার মূল্য বৃদ্ধি, আর্থিক অনটন তাদের এ পেশাকে করে তুলেছে সংকটময়। তবে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি কিংবা বেসরকারি সহায়তা চান এ সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা।

রাখাইন সম্প্রদায়ের নারী উদ্যোক্তা লাসে রাখাইন জানান, তাদের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ। তবে সময়ের বিবর্তনে আবাদি জমি হারিয়ে এ সম্প্রদায়ের মানুষ এখন প্রধান পেশা তাঁত বস্ত্র তৈরিতে ঝুঁকেছেন। পূর্ব পুরুষরা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে তাঁত বস্ত্র বুনতেন। সে ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তারা বংশ পরম্পরায়। এটি তাদের ঐতিহ্য হলেও বর্তমানে চলছে দুর্দিন। কারন কাচামালের দাম বাড়লেও হাতে তৈরী করা পণ্যের দাম বাড়েনি। তবে পণ্যের চাহিদা বাড়ার কারণে পরিশ্রম বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় শ্রমের মজুরি পান না।

আরও পড়ুনঃ  পর্যটনে খুলছে সুন্দরবন

সেচ্চাসেবী সংগঠনের নেতারা বলছেন, জাত ধর্ম নির্বিশেষে রাখাইন সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের একসাথে বসবাস। একসময়ে তারা সম্পদশালী থাকলেও জমা জমি বিক্রি করে দিয়ে এখন কিছু সম্পদ কমেছে। এ সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ সমান ভাবে কাজ করে। তবে তাঁত বুননের কাজে বেশি ভ‚মিকা নারীদের। এ সকল তাঁত বুনে তাদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বানিজ্যিক ভাবেও বিভিন্ন পোশাক তৈরি করে থাকে। তবে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে তাঁত তৈরীর প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি থাকলে আরও লাভবান হবে।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, রাখাইন জনগোষ্ঠিদের শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের সকলের প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। তারা বয়স্কদের বয়স্ক ভাতা, বিধবাদের বিধবা ভাতা সহ সকল প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধার আওতায় রয়েছেন।

বিসিক পটুয়াখালীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আলমগীর সিকদার বলেন, আমাদের আওতায় রাঙ্গাবালীর রাখাইন সম্প্রদায়ের মাঝে এখনো কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। তবে ওই এলাকায় প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে পরিদর্শন করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রস্তাব পাঠানো হবে। অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তী সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে রাখাইন সম্প্রদায়কে নিয়ে পাশের জেলা বরগুনার তালতলিতে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন