শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিজিটাল ফকির, মাইক বাজিয়ে ভিক্ষা

ডিজিটাল ফকির, মাইক বাজিয়ে ভিক্ষা

আমি একজন অন্ধ মানুষ দুইটা চোখ নাই। আমি তো দুনিয়ার ভালো মন্দ নিয়ামত কিছুই দেখার শক্তি নেই। কোন কাজকর্ম করে খাইবার শক্তি নাই। আপনাদের যদি কারো দয়া লাগে মায়া লাগে এই অন্ধ লোকটিকে চাল দিয়া টাকা দিয়া সাহায্য করেন।

মাগো দশ জনে দান করলে আমি অসহায় বেঁচে যাব। এই ভাবে রিকশায় বসে মাইক দিয়ে ভিক্ষা করছেন অসহায় হতদরিদ্র মো: মনির হোসেন (৫৫)। এমন এক দৃশ্য চোখে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন এলাকায়।

এভাবেই অন্ধ ভিক্ষুক মনির হোসেন রিকশায় বসে আপন মনে গাইছেন গজল, হামদ, নাত আর করছেন জিকির। পাড়া-মহল্লাায় ঘুরে মানুষের কাছে চাইছেন বেঁচে থাকার মানবিক সাহায্য। কারণ তার দুই চোখ অন্ধ। আর এই আয় দিয়ে চলছে তার জীবিকা। মনির হোসেন উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আজমপুর অন্ধ পল্লীতে বসবাস করছেন। সংসারে স্ত্রী ৪ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। তার চার ভাইএর মধ্যে সে সহ ৩জনই হলো প্রতিবন্ধী। এই কৌশলে সে দীর্ঘ বছর ধরে মাইক বাজিয়ে তিনি ভিক্ষা করে আসছেন।

অন্ধ মনির হোসেন বলেন আমি এক আসহায় হত দরিদ্র ঘরের সন্তান। জন্মের ৮ বছরের মাথায় জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দুটি চোখ সম্পুন্ন নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে সে আর পৃথিবীর কোন কিছু দেখতে পাইনা। অন্ধ থাকার কারণে সে কোন কাজকর্ম করতে পারছে না। তাই ছোট বেলা থেকেই তাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটতে হয়েছে। আর মানুষের দ্বারে হাত পেতে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন দিন দিন বয়স বাড়ছে। আগের মতো এখন আর ভিক্ষা করতে পারছি না। যখন সময় পায় তখন মাইক নিয়ে বের হন। যে সময় মাইক নিয়ে বের হতে পারেন না তখন স্ত্রী বা অন্য কাউকে নিয়ে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে ভিক্ষায় বের হন। ট্রেনে যাত্রীদের কাছ থেকে অসহায়ত্বের কথা বলে হাত পেতে দুজন মিলে সারা দিনে ভালো টাকা সাহায্য পাওয়া যায় বলে জানায়।

আরও পড়ুনঃ  জীবন কাটে নৌকায়

সে আরও বলেন এক সময় মাইক ভাড়া করে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষার জন্য বের হতাম। এরপর স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে জমানো কিছু টাকা দিয়ে একটি মাইক কেনা হয়। এরপর রিকশা ভাড়া করে মাইক বাজিয়ে ভিক্ষা করছেন। মাইক নিয়ে বের হলে নগদ ৫শ থেকে ৬শ টাকা এবং ১০-১৫ কেজি চাল পাওয়া যায়। তাছাড়া মহরম মাস, রমজান মাস, শবেবরাত, শবে কদর, জিলহজ¦মাস, শবে মিরাজসহ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে পাড়া মহল্লায় ঘুরলে এলাকার মা বোনেরা ভালো টাকা সাহায্য করেন।

যে রিকশা যোগে গ্রামে গ্রামে যাওয়া হয় চালককে ৩শ টাকা ভাড়া দেওয়া হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন বলে জানায়। তিনি বলেন অন্য কোন সরকার তাদের প্রতি কোন খেয়াল করেনি। এই বর্তমান সরকার আমাদেরকে প্রতিবন্ধী ভাতা ব্যবস্থা করেছে সেইসাথে থাকার ঘর ও উপহার দিয়েছে। এইজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

রিকসা চালক বাবুল মিয়া বলেন গত কয়েক বছর ধরে প্রতিদিন সকালে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রিকশা দিয়ে তাকে নিয়েই গ্রামে গ্রামে যাওয়া হয়। রিকশা দিয়ে তাকে নিয়ে এলাকায় ঘুরলে দৈনিক ৩শ টাকা পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন তাকে নিয়ে রিকশা চালালে খুবই কম গতিতে চালাতে হয়। স্থানে স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে সময়। পরিশ্রম কম হওয়ায় ভালো লাগে বলে জানান।

তারাগন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মো: নাজির হোসেন বলেন, আসলে অসহায় মানুষের পাশে সামর্থ্যবান এগিয়ে আসা উচিত। এই লোকটি প্রায় সময় আমাদের এলাকায় মাইক নিয়ে ভিক্ষা করতে আসে। এলাকার লোকজনরা সাধ্যনুযায়ী কিছু দেওয়ার চেষ্টা করে। তাছাড়া আমার পাড়ার প্রায় বাড়ির লোকজন মাইকে সাহায্য করার শব্দ শুনলে টাকা কিংবা চাল দিয়ে সহযোগিতা করছেন।

আরও পড়ুনঃ  তাল সম্রাজ্যে পিঠার মেলা

গৃহিণী লিজা আক্তার বলেন, এই অসহায় অন্ধ দরিদ্র লোকজনকে দাম করলে সওয়াব পাওয়া যাবে তাই দেখলেই কিছু সাহায্য করতে চেষ্টা করি। তাদেরকে কিছু দিতে পারলে নিজের কাছে ভালো লাগে।
কাজী মফিকুল ইসলাম

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন