শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনাফলা মাটিতে লালকপি

সোনাফলা মাটিতে লালকপি
  • গাইবান্ধায় প্রথমবারের মতো লালকপির চাষ
  • বেলালের সংসারে স্বচ্ছলতা, মেয়ে কলেজে
  • বর্গা জমিতে চাষ, সরকারি বীজ সহায়তা
  • বছরে আয় ২ লাখ, বানিয়েছেন ঘরবাড়ি

গাইবান্ধায় লাল বাঁধাকপি চাষ করে জীবন বদলে ফেলেছেন বেলাল হোসেন নামের এক বর্গাচাষী। জেলায় প্রথমবারের মতো তিনি চাষ করেছেন জাপান থেকে আসা লালকপি। উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার বাঁধাকপি। এখন তার সংসারে ফিরেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। বছরজুড়ে অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি নতুনজাতের লাল বাঁধাকপি বীজ রোপন করেন এবার। ভালো ফলনের পাশাপাশি দামও পেয়েছেন আশাতীত। আয় করেছেন দুই লাখ টাকার মতো।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়ায় গ্রামের বাসিন্দা বর্গাচাষি বেলাল হোসেনের দুই মেয়ে আর স্ত্রীসহ পাঁচজনের সংসার। নিজের বলতে রয়েছে সামান্য পরিমাণ জমি। মূলত জমি বর্গা নিয়েই করেন চাষাবাদ। তবে জমি কখনও ফেলে রাখেন না। ফসল চাষে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠেই ব্যয় করেন। বারো মাস ধরে জমি থেকে যে ফসল পান তা বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দে কেটে যায় তার তার সংসার। তিনি সরকারিভাবে বীজ সহায়তাও পেয়েছেন।

বেলাল হোসেন আনন্দবাজারকে বলেন, আমি সারাদিন জমিতে কাজ করি। আমার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে সিনথি আখতার, বন্যা বেগম, ছেলে সিহাব আলীসহ সবাই আমাকে সহযোগিতা করে। আবার সময় হলে মেয়েরা বই খাতা নিয়ে কলেজে যায়। তারপর আবার জমির আইলে বাপের সঙ্গে কাজ করে। সে কারণে আমার কামলা খরচটা কম হয়। একটার পর একটা সবজি চাষ করি জমিতে। বেলাল হোসেন জানালেন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ, আলু, টমোটো, লাউ, শিম, ক্যাপসিক্যাম, মিষ্টি কুমড়াসহ বারো মাস সবজি বিক্রি করে অন্তত তার আয় ২ লাখ টাকা হয়। লাভের টাকায় বাড়িঘর করেছেন তিনি। পাশাপাশি মেয়েদের কলেজে পড়ালেখার খরচও জোগাচ্ছেন।

আরও পড়ুনঃ  বান্দরবানে সীমান্ত পরিস্থিতি উন্নতি, তবে আতংক কাটেনি জনমনে

নানা ধরনের ফসলের চাষাবাদ সম্পর্কে বেলাল হোসেন বলেন, রাজধানী ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন বীজ ভাণ্ডারে খোঁজখবর নিয়ে ভিন্ন কিছু চাষ করার চিন্তা করি। সব সময় ভাবতাম নতুন কী করা যায়? যেমন কথা তেমনই কাজ। ঢাকার একটি বীজ ভাণ্ডারে খুঁজে পেলেন লাল বাঁধাকপি। ব্যবসায়ী জানালেন, ব্যতিক্রমী এই বাঁধাকপির জন্ম নাকি জাপানে। স্বপ্নের বাস্তবায়নে সেই কপি নিয়ে গেলেন গ্রামে। যেমন কথা তেমনি কাজ। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাক লাগিয়ে দিলেন মানুষকে।

ভাষারপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান আনন্দবাজারকে জানালেন, বর্গাচাষি বেলাল আমাদের গ্রামের গর্ব। বারো মাসে সে ১৩ ফসলের আবাদ করে। শুধু সবজি চাষ করেই চাষি হিসাবে নিজেকে পরিচিত করেছে। লোকজনের মুখে মুখে এখন বেলালের নাম। এ মাসের শেষ দিকে বেলালের কপি বিক্রির উপযোগী হয়েছে। প্রতিদিন বস্তায় ভরে ভ্যানে করে কপি নিয়ে যায়। আড়তে নিয়ে প্রতি কপি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করে। এভাবে প্রায় প্রতিদিন জমি থেকে তুলে লালিমা বিক্রি করে অন্তত ১২শ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। লালকপি (লালিমা) বিক্রি করে তার হাতে আসবে অন্তত ২ লাখ টাকা। এ টাকায় মেয়ের বিয়েতে খরচ করবেন বলে ভাবছেন বেলাল।

কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সাগর মিয়া আনন্দবাজারকে বলেন, গাইবান্ধায় এর আগে কখনো লাল বাঁধাকপি দেখা যায়নি কোথাও। তারপরও তিনি বীজ বপন করেন। বীজচারা বড় হলে ১০ হাজার চারা দুটি জমিতে লাগান। অল্প সময়েই লাল বাঁধাকপি তরতাজা হয়ে জমিজুড়ে ছেয়ে যায়। টসটসে বাঁধাকপি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজের ভেতরে লাল কপি গাইবান্ধায় এই প্রথম।

আরও পড়ুনঃ  কাজে সমান মজুরি অর্ধেক

ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকতা মিন্টু মিয়া জানান, আধুনিক ফসল লালবাঁধা কপি। বন্যাদুর্গত এলাকা ফুলছড়ির মাটি সোনার মতো। এ মাটিতে সোনা ফলে। যার ফলে চাষি বেলাল মিয়া প্রথমবার ফুলছড়িতে লাল বাঁধাকপি চাষ করেছেন। এখন বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন