শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বান্দরবানে সীমান্ত পরিস্থিতি উন্নতি, তবে আতংক কাটেনি জনমনে

গত তিনদিন ধরে বান্দরবানের ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনার পর বুধবার থেকে সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সকাল থেকে কোন গোলাগুলির আওয়াজ, মর্টারশেল নিক্ষেপ বা রকেট লাঞ্চার বিষ্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পায়নি সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা। তবে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো আতংক কাটেনি জনমনে। আতংক, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন যাপন করছে স্থানীয়রা। সীমান্তে উত্তেজনার কারণে অনেকেই নিজ ঘরবাড়ী ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ বা আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে।

মূলত, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে সে দেশের বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সাথে সামরিক জান্তা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলে আসছিল। এই যুদ্ধ বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও গত ২২ জানুয়ারীতে আবার শুরু হয় দুগ্রুপের মধ্যে তুমুল লড়াই। গত ৪ ফেব্রুয়ারী মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্পটি দখলে নেয়ার পর থেকে আরাকান আর্মির সদস্যরা মরিয়া হয়ে উঠে ঘুমধুম সীমান্তের ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্প দখলে নিতে। যার কারণে একের পর এক জান্তা বাহিনীদের সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে আসছিল বিদ্রোহী গ্রুপটি। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলা চালায় সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরাও। কিন্তু বিদ্রোহীদের সাথে ঠিকে থাকতে না পেরে ক্যাম্প ছেড়ে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর আরো নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১১৪ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ নিয়ে মোট ২৬৮ জন সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্য আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিজিবি ক্যাম্পে। তাদের দু’পক্ষের ছোড়া মর্টারশেল ও রকেট লাঞ্চার এর বিষ্ফোরিত অংশ এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী বসত ঘরের উপর। নষ্ট হয় ঘর বাড়ী, ফসলি জমি ও ক্ষেত খামার। আতংক, উৎকণ্ঠায় নিজের ঘর বাড়ী, দোকানপাট ছেড়ে নিরাপদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বাসিন্দারা।

আরও পড়ুনঃ  ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমাদানিতে নারাজ কৃষিমন্ত্রী

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ সীমান্তে বাংলাদেশীরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটাছিল। যার ফলে আমরা সীমান্তের পাশর্^বার্তী এলাকার জনসাধরণ কে নিরাপতে রাখতে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিল। তবে গতকাল থেকে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। আমরা আশা করছি পরিস্থিতি অনেকংশে উন্নতির পথে যাচ্ছে।

এদিকে বুধবার সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনে যায় বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, ওএসপি, বিএসপি, এসইউপি, এনডিসি, পিএসসি, এমফিল। এসময় তিনি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিজিবি’র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছে বিজিবি। এসময় তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত রয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ধৈর্য্য ধারণ করে, মানবিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদা তৎপর রয়েছে। এসময় তিনি দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদা তৎপর থাকার নির্দেশ দেন। একই সাথে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য দায়িত্বরত সকল বিজিবি সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে চলমান গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লান্সার বিষ্ফোরণের বিকট শব্দে কেপে উঠছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু’সহ আশপাশের এলাকাগুলো। সর্বশেষ জলপাইতলী গ্রামে মর্টারশেলের বিষ্ফোরিত অংশের আঘাতে বাংলাদেশী নারী আসমা খাতুন (৫৫)’সহ এক রোহিঙ্গা নাগরিকের মৃত্যু হয়। এর আগে মিয়ানমার বাহিনীর ছোড়া গুলিতে রোববার বাংলাদেশী নাগরিক রবীন্দ্র ধর ও রহিমা বেগম দুজন আহত হয়। আগের দিন মিয়ানমারের ছোড়া গুলিতে সিএনজি অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে যায় এবং সীমান্তবর্তী বহুঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মর্টারশেলের গোলার আঘাতে সীমান্ত জুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জন শূন্য হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকা।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন