শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাজে সমান মজুরি অর্ধেক

কাজে সমান মজুরি অর্ধেক

রংপুরে তিস্তার চরে নারী শ্রমিকদের কদর বেড়েছে। পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে মজুরি কমের সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ক্ষেত মালিকরা। তারা আগাম মজুরির টাকা শোধ করে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করছেন। রবি মৌসুমের ফসল উত্তোলনে নারীরা এখন ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠে অবস্থান করছেন। আলু উত্তোলন, বোরো ধানের চারা রোপন, তামাক ক্ষেতের পরিচর্যাসহ অন্যান্য কাজে নারী শ্রমিকরাই প্রিয় হয়ে উঠেছেন কৃষকের কাছে। ‘দামেও সস্তা, কাজেও স্বাভাবিক’ এমন সুযোগে কৃষকরা গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের কাজে লাগাচ্ছেন বেশি।

বর্তমান সময়ে তিস্তার চরে ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলনের ধুম পড়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ইছলী চরের কৃষক জমশেদ আলী জানান, আলু তুলতে নারীদের প্রয়োজন বেশি। নারী শ্রমিকদের অভাবে আলু তোলার কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। আগাম টাকা না দিলে নারী শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। জয়রামওঝা চরের কৃষক দুলু মিয়া জানান, চরের গ্রামগুলোতে চলছে নারী শ্রমিক নিয়ে টানা-টানি। পুরুষ শ্রমিক নিলে দ্বিগুণ টাকা দেওয়া লাগে। বড় কৃষকরা রাতেই নারীদের টাকা দিয়ে বুকিং দিয়ে রাখছেন, যাতে তারা অন্যের কাজে যেতে না পারে।

সরেজমিনে তিস্তার বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে আলু তুলতে নারীদের পদচারণা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত নারী আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ বা কাটছেন তামাক পাতা। সবুজ ক্ষেতে বিভিন্ন রঙের শাড়িতে একসঙ্গে বহু নারী কাজ করছেন। দূর থেকে দেখতে অপরূপ মনে হলেও নারী শ্রমিকদের বঞ্চনার শেষ নেই। তারা যেমন কম মজুরি পাচ্ছেন তেমনি নানাভাবে কাজও বেশি করতে হচ্ছে। অনেক সময় তাদের শ্রমশোষণও করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  সূচকের নিম্নবর্তী অবস্থানে লেনদেন শেষ

এক একজন নারী শ্রমিকের প্রতিদিনের কাজের মজুরি মাত্র ২০০ টাকা। অথচ পুরুষদের মজুরি তাদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। তবে পুরুষ শ্রমিক কখনও তাদের চেয়ে দ্বিগুণ কাজ করতে পারেন না। বরং অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা কাজে ঢিলেমি দিয়ে থাকে। যেটা নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ভাবাই যায় না।

গজঘণ্টা ইউনিয়নের কিশামত হাবু গ্রামের নারী শ্রমিক সন্ধ্যা রাণী বলেন, ‘গেরস্তরা রাইতোত হামাক আগাম টাকা দিয়া যায়। মজুরি কম হইলেও কাম জুটতোছে- দুই মুঠ খাবার পাইতোছি। আলু তোলা শ্যাষ হইলে ফির হামাক ঘরোত বসি থাকা নাগবে।’

নারী শ্রমিকরা আক্ষেপ করে জানান, বর্তমান বাজার মুল্য অনুযায়ী ২০০ টাকায় তাদের কিছুই হয় না। তবে সান্ত্বনা এইটুকু যে, একেবারে না পাওয়ার চেয়ে কিছুতো পাওয়া যায়! একই কাজের জন্য পুরুষ শ্রমিকদের ৪০০ টাকা দেওয়া হয়। অথচ তাদের দাম অর্ধেক বলে জানান তারা।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন