রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সিলেটে পরিবহনখাতে বিশৃঙ্খলা

মধ্যরাতে তেলের জন্য হাহাকার

মধ্যরাতে তেলের জন্য হাহাকার

জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা আর পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হয়েছে। দাম বাড়ানোর খবরে সিলেটে শুক্রবার রাত ১১টা থেকে শুরু হয় হুলস্থুল কাণ্ড। একদিকে ১০টা বাজার আগেই মহানগরীসহ জেলার পেট্রোল পাম্পগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা। পরে রাত বাড়ায় তারা ঘরে ফেরেন।

এদিকে, জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ার পর সিলেটের পরিবহনখাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল থেকে কমে যায় বাস চলাচল। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গতকাল সকাল থেকেই বেড়েছে বাসভাড়া। যাত্রীদের অভিযোগ, ভাড়া বাড়ার ঘোষণার আগেই অনেক পরিবহন মূল ভাড়ার চেয়ে একশো থেকে দেড়শ টাকা বাড়তি রাখছে।

জানা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে সিলেটে বেশিরভাগ পাম্প শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন মোটরসাইকেলচালকেরা। সিলেট মহানগরের বেশ কয়েকটি জ্বালানি তেল বিক্রি করা পাম্প ঘুরে দেখা যায়, রাত ১১টার আগেই আলো নিভিয়ে কর্তৃপক্ষ চলে যান। পাম্পগুলোতে শত শত মোটরসাইকেলের লাইন। কয়েকটি পাম্পে পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। নগরের কদমতলি এলাকার এস. এম মো. সোলেমান বক্স সিএনজি ফিলিং স্টেশন, মদিনা মার্কেট এলাকার নর্থ ইস্ট অয়েল ফিলিং স্টেশন, জিন্দাবাজার এলাকার জালালাবাদ ট্রেডার্স ও সোবাহানীঘাট এলাকার এম.এ হক পাম্পে ছিলো এ দৃশ্য।

আরও পড়ুনঃ  নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ৩ হাজার ২শ কোটি টাকার প্রণোদনা

মোটরসাইকেল আরোহীদের অভিযোগ, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হয়েছে। হঠাৎ তেলের দাম বাড়ানোর খবরে পাম্পমালিক ও কর্মচারীরা তেল বিক্রি বন্ধ করে দেন। সেই সঙ্গে পাম্পগুলোর আলো নিভিয়ে বন্ধ করে চলে যান। এতে পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল নিতে আসা মোটরসাইকেল ও যানবাহনের চালক এবং আরোহীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

রাত ১১টার দিকে সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকার বেঙ্গল গ্যাসোলিন অ্যান্ড সার্ভিস ফিলিং স্টেশনের সামনে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এ সময় পাম্প কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁদের চালকদের বাগবিতণ্ডা করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল ও যানবাহনের চালকেরা পাম্পের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। কদমতলি এলাকার পাম্পের সামনে টায়ারে আগুন ধরিয়েও বিক্ষোভ করেন মোটরসাইকেল চালকরা।

তবে পাম্প মালিক-কর্মচারীদের অভিযোগ-মোটরসাইকেল চালকরা হঠাৎ দলে দলে ছুটে এসে ৫০০-১০০০ টাকার করে পেট্রল কিনতে চান। এতে পাম্পগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ২০০ টাকার করে তেল দিতে চাইলে মোটরসাইকেল চালকরা বিভিন্ন স্থানে পাম্প কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষুব্ধ হন এবং রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বাধ্য হয়ে তারা পাম্পগুলো বন্ধ করে দেন।

অপরদিকে, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে সিলেটের কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়- অন্যদিনের তোলনায় টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়ছে অনেক কম। টার্মিনালে বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বাস কম চলাচল করায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। গাড়ি না পেয়ে অনেককে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  হাতির অত্যাচার থেকে মুক্তি চায় কৃষকরা

দুপুর ১২টার দিকে শ্রীমঙ্গল থেকে বাসে করে সিলেটে আসা মাছুম আহমদ বলেন, আমি ব্যবসায়ীক কারণে সপ্তাহে দুদিন শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেটে যাওয়া-আসা করি। এ সড়কের ভাড়া কালকেও ১৩০ টাকা ছিলো। কিন্তু আজ (শনিবার) কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাসে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তিনি নিজেও ১৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে সিলেট এসেছেন বলে জানান শাকিল।

টার্মিনালে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে বসে থাকা পরিবহন শ্রমিক আলম মিয়া বলেন, আমি সিলেট জকিগঞ্জ সড়কে বাস চালাই। ডিজেলের দাম যে পরিমাণ বাড়ছে তাতে প্রতি ট্রিপে জ্বালানি খরচ ২ হাজার টাকা বেড়ে যাবে। অথচ একটি ট্রিপে খরচ শেষে ২ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, এখন গাড়ি চালালে লাভের বদলে লোকসানই হবে। তাই মালিকপক্ষ আজ গাড়ি ছাড়তে নিষেধ করেছেন।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, এতো বাড়তি দামে তেল কিনে গাড়ি চালিয়ে মালিক-শ্রমিক কেউই টিকতে পারবেন না। লোকসানের শঙ্কায় আজ অনেক বাস চলছে না। অনে বাস কাউন্টারও বন্ধ। এতো বাড়তি দাম দিয়ে জ্বালানি কিনে গাড়ি চালানো সম্ভব না। তিনি বলেন, আজ (শনিবার) বিকেলে মালিক-শ্রমিক নেতারা বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

তবে এখন পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়নি জানিয়ে মইনুল ইসলাম  বলেন, ‘আমরা এখন ভাড়া বাড়াইনি। এরকম সিদ্ধান্তও হয়নি। বিকেলের বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।’

তবে সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে এ বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

আরও পড়ুনঃ  অবহেলায় গণকবর নিশ্চিহ্ন

সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাধ্য হয়ে বাসভাড়া বাড়াতে হয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বাসভাড়া আগে ছিল ১২০ টাকা। এখন ১৪০ টাকা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আপাতত শুধু সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বাসভাড়া বেড়েছে। তবে অন্যান্য রুটেও ভাড়া বাড়বে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন