শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাশরুমে ৭ তরুণের স্বপ্ন

মাশরুমে ৭ তরুণের স্বপ্ন

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন ৭ তরুণ উদ্যোক্তা। বাজারে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় অধিক লাভের আশাও করছেন এ তরুণ উদ্যোক্তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাওডাঙ্গা পুলেরপাড় বাজার সংলগ্ন চন্দ্রখানা এলাকার মাহাবুব খন্দকার নয়নের বাড়ির পাশে মাত্র ৫ শতক জমিতে ১৫ হাত একটি ঘর নির্মাণ করে ফুলকুড়ি বাণিজ্যিক মাশরুম সেন্টার (ফুলকুড়ি বিএমসি) এর ব্যানারে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ২০টি স্পন প্যাকেট ও ৩৭টি সিলিন্ডারের মাধ্যমে মাশরুম চাষের শুভ উদ্ভোধন করেন। আর এ থেকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো মাশরুম শুরুর দিকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি করেন। ফলন ভালো হওয়ায় বর্তমানে তাদের খামারে ৩৫০টি সিলিন্ডার রয়েছে। এদিকে এ সাত তরুণ উদ্যোক্তাদের কলেজ বন্ধ থাকলেও পড়াশুনার পাশাপাশি দুই মাসের মধ্যেই মাশরুম চাষে পুরো এলাকাজুড়ে সাড়া ফেলেছে। অন্যদিকে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা।

উদ্যোমী ৭ তরুণ উদ্যোক্তারা হলেন ওই এলাকার মাহাবুব খন্দকার নয়ন, আরমান সরকার, গালিব রহমান, কেএম মুরাদ, সুমন্ত রায়, হাবিবুর রহমান, নাজমা খাতুন।

প্রধান উদ্যোক্তা মাহাবুব খন্দকার নয়ন প্রথমে ইউটিউবে কিভাবে মাশরুম চাষ করা হয় তা দেখে উপজেলা যুব উন্নয়ন যোগাযোগ করেন। পরে যুব উন্নয়নের মাধ্যমে পরামর্শে আগ্রহী হন। এরপর নয়ন যুব উন্নয়নের মাধ্যমে মাগুড়া জেলার (ডিএমসি ট্রেনিং সেন্টারে) ১৫ দিন প্রশিক্ষণ নেয়। তারপর মাহাবুব খন্দকার নয়নের মাধ্যমে বাকি ৬ তরুণ ফুলবাড়ী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৭ তরুণ উদ্যোক্তা মাশরুম চাষ শুরু করেন। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে খড়, কাঠের গুড়া, গমের ভূষি, তুষ ও চুন দিয়ে নিজেই স্পন প্যাকেট তৈরী করে মাশুরুমের বীজ বপন করেন। এ বীজের সঙ্গে টিস্যু কালচার যুক্ত করে সঠিক পরিচর্যায় ২০ দিনের মাথায় শুরু হয় ফলন। তবে এ কাজে তেমন একটা পরিশ্রম নেই বলে জানিয়েছেন মাশরুম চাষি মাহাবুব খন্দকার ও গালিব রহমান।

আরও পড়ুনঃ  পাহাড়ে বাড়ছে মাশরুম চাষ

মাশরুম চাষি মাহাবুব খন্দকার নয়ন ও গালিব রহমান জানান, ইউটিউবের মাধ্যমে মাশরুম চাষ দেখে আমরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে প্রশিক্ষণ দিয়ে বীজ ক্রয় করে ৩৭টি সিলিন্ডারে মাশরুম চাষ শুরু করেছি। ঘরনির্মাণ ও বীজসহ মোট ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিকেজি মাশরুম ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ যাবৎ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করা হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আমরা নিজেরাই খড়, কাঠের গুড়া, গমের ভূষি, তুষ ও চুন দিয়ে নিজেই স্পন প্যাকেট তৈরী করে মাশুরুমের বীজ বপন করে বর্তমানে ৩৫০টি সিলিন্ডার মাশরুমের চাষ করা হয়েছে। আশা করছি, ফলনও ভালো হবে। মাশরুম চাষের মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তবে সরকারি সহায়তা কিংবা স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা পেলে এ খামার বৃদ্ধির মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন বলে দাবি করেন এ সাত তরুণ।

সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, এ সাত তরুণ মাশরুম চাষে আগ্রহী হওয়ায় তাদেরকে প্রশিক্ষণসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। স্বাদ ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন মাশরুম নিয়মিত সেবনে বিশেষ করে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। অল্প দিনেই মাশরুম উৎপাদন শুরু করায় উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বাজারে মাশরুমের চাহিদা ব্যাপক, সেই সঙ্গে দামও ভালো। উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ৭ তরুণ উদ্যোক্তার পাশে থাকবে। তিনি আরও জানান, এখন থেকে বেকার যুবক-যুবতিরা চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই উদ্যোক্তা হলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও সচ্ছলতা ফিরে আসবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন