ভালো দাম আর চাহিদা থাকায় বান্দরবানে দিন দিন বাড়ছে মাশরুম চাষ। মাশরুম এক ধরনের ছত্রাক। এটি খেতে খুবই মজা এবং পুষ্টিকর। এছাড়াও এটি ঔষধী গুণসম্পন্ন সবজি জাতীয় খাবার। বসতবাড়ির আশপাশে অল্প জায়গায় নিদিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে এর চাষ করা যায়। খেতে সুস্বাধু ও দাম ভাল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে বেশ। প্রতি কেজি মাশরুম বাজারে বিক্রী হয় ২শ থেকে ২৫০ টাকায়। চাষ করতে তেমন একটা ঝামেলা না থাকায় বান্দরবানে অনেকেই এখন মাশরুম চাষে ঝুঁকছে। প্রথমে মাশরুমের মাদার কালচার সংগ্রহ করা হয়।
সেখান থেকে সাব মাদার,পরে মাশরুমের স্মন প্যাকেট তৈরীর পর সিলিন্ডার তৈরী করা হয়। এরপরে খড় সিদ্ধ করে পলিথিন প্যাকেটে রেখে তাতে মাশরুমের বীজ দিয়ে প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে কয়েকটা ছিদ্র করে দেওয়া হয়। এরপর ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় প্যাকেটগুলো। মাসখানেক পরিচর্যার পর প্যাকেটের ছিদ্র দিয়ে মাশরুমের ছাতা বের হয়ে আসে। এরপর খাওয়ার উপযোগী মাশরুম সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে চাষীরা।
মাশরুচাষী আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, গত ৩ বছর ধরে তিনি মাশরুম চাষ করে আসছেন। মাশরুম চাষ করতে কোন জমির প্রয়োজন হয় না। ছায়াযুক্ত স্যাঁতস্যাঁতে ঘরই মাশরুম চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান। খরা, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাশরুম খামারের কোন ক্ষতিও হয় না। এছাড়া মাশরুম চাষের জন্য খামারে কোন খাদ্য দিতে হয় না। প্রতিদিন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বজায় রেখে খামারে ২ থেকে ৪ বেলা পরিস্কার পানি স্প্রে করলেই মাশরুম চাষকে লাভজনক পেশায় রূপ দেয়া যায়। ইতোমধ্যে আমার মাশরুম ফার্মে প্রতিদিন ৮-১০ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়।
হর্টিকালচার সেন্টার, বান্দরবানের উপরিচালক ড. সাফায়েত আহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, মাশরুম হলো এক ধরনের ভক্ষণযোগ্য মৃতজীবী ছত্রাকের ফলন্ত অংগ। জারণ বিজারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাশরুমের জীবনচক্র আবর্তিত হয়। বাজারে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে হর্টিকালচার সেন্টার থেকে সুলভ মূল্যে স্পুন ও মাদার কালচার চাষী পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ স্পুন দিয়ে অনেক উদ্দ্যোক্তাই মাশরুম খামার গড়ে তুলেছেন। তিনি আরও জানান, আগ্রহী চাষীদের অফিস চলাকালীন মাশরুম চাষের উপর কারিগরি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও মাশরুম চাষের প্রসার ঘটার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বান্দরবানে মাশরুম চাষে আগ্রহী কৃষকের সংখ্যাও বেড়েছে।
বাংলাদেশে বড় শহরগুলোর বিভিন্ন হোটেল সুপার শপগুলোতে ও চায়নিজ হোটেল গুলোতে মাশরুমের অনেক চাহিদা রয়েছে। যার ফলে মাশরুমের বাজার মূলত শহরে গড়ে উঠেছে। এছাড়াও বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে। ফলে মাশরুম শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠী মাশরুম খেতে খুবই অভ্যন্ত। বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণের কাছে মাশরুমের চাহিদা বেশি। এখানে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নয়া ভক্ষণযোগ্য মাশরুমও বাজারে বিক্রি হয়। বান্দরবান বাজারে সারা বছরই চাষ করা মাশরুম পাওয়া যায়। বর্তমানে জেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ৪ শতাধিক মানুষ এ মাশরুম চাষের সাথে জড়িত।