শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুখ থুবড়ে পড়লো পুঁজিবাজার

মুখ থুবড়ে পড়লো পুঁজিবাজার

রেগুলেটরদের সব প্রত্যাশা পৃষ্ট করে উল্টো গতিতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তাদের নেওয়া পুঁজিবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন গতি যেন জলেই ভেসে যাচ্ছে। ধারাবাহিক মন্দায় মুখ থুবড়ে পড়েছে পুঁজিবাজার। পুঁজি হারানোর বৃত্ত বড় হয়ে দিশেহারায় নিরীহ বিনিয়োগকারীরা। ফলে পুঁজিবাজার প্রতি অনাস্থা বাড়ছে বলে জানান প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলেন, চলতি বছরের শুরু ইতিবাচক গতিতে পুঁজিবাজার এগিয়েছে। শুরুর প্রায় চার সপ্তাহ উত্থানে সবাইকে পুঁজিবাজারে প্রতি বিনিয়োগ আগ্রহী করে তুলেছিল। সেই সময়ে অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করে। আবার অনেকে বিনিয়োগ করবে এমন আশাও দেখায়। কিন্তু ধারাবাহিক মন্দায় তাদের সেই নতুন বিনিয়োগ এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বিনিয়োগ আসার প্রত্যাশিরাও নিরাশায় রূপে ফিরেছে। সবমিলিয়ে ক্ষতির মুখেই পুঁজিবাজার।

‘যদিও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের বিগত উন্নয়নকে পুঁজি করে আশা করেছিল রোজার মাসে লেনদেনে দেড়-দুই হাজার কোটি টাকায় যাবে। তাদের সেই আশা উল্টো গতিতে চলছে। লেনদেন বৃদ্ধির পরিবর্তে বিনিয়োগ অনাস্থায় বর্তমানে ৪শ কোটির ঘরে চলে এসেছে।

গতকাল বুধবার ডিএসইর লেনদেন মন্দার কবলে তলিয়ে গেছে জানিয়ে বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলেন, মন্দার কারনে হাজার কোটি টাকার লেনদেন বর্তমানে চারশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। যদিও গত মঙ্গলবার ডিএসইর লেনদেন পরিমাণ ছিল ৫শ কোটি টাকা ঘরে। যা গত এক বছরের মধ্যে সবনিম্ন লেনদেন। এদিন ৭৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দরে পতন হয়েছে। এদিন কমেছে সব ধরনের সূচক।

আরও পড়ুনঃ  জ্বালানিতে যৌথ টাস্কফোর্স

হঠাৎ করেই চলতি বছরের গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে চলে এসেছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাজার কোটি টাকায় লেনদেন ওঠলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। পরের কার্যদিবস থেকে ফের হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছিল। লেনদেন কমে ৬শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। সেখানে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০ মার্চ হাজার কোটি টাকা ঘরে চলে এসেছিল। এরপরের দিন লেনদেন ফের হাজার কোটি টাকার নিচে এসেছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৫ মার্চ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন ফিরে।

পরের দিনে সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। ফের লেনদেন ৮শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান ছিল। এরপর দুই কার্যদিবস লেনদেন ৯শ কোটি টাকার ঘরে এসেছিল। সেই লেনদেন বুধবার ৮শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান চলে এসেছিল। সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার লেনদেন এগারশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। গত রবিবার কমে লেনদেন ৮শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। গত সোমবার কমে লেনদেন ৬শ কোটি টাকা এবং মঙ্গলবার ৫শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। সেখান থেকে আরো কমে লেনদেন বুধবার ৪শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। লেনদেন এধরনের কমাকে স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।

এদিন ডিএসইতে ১১ দশমিক ৭৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়। আর ৭৮ দশমিক ১৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এদিন ডিএসইতে সিরামিক খাতের খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এদিন সিমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, নন ব্যাংক আর্থিক, খাদ্য আনুষঙ্গিক, জ্বালানি শক্তি, বিমা, আইটি, বিবিধ, ফান্ড, ওযুধ রসায়ন, সেবা আবাসন, চামড়া, এবং টেলিকম খাতের অধিকাংশ কোম্পিানির শেয়ার দর পতন হয়। এদিন পাট খাতের অধিকাংশ শেয়ার দর উত্থান হয়। অপরদিকে এদিন ব্যাংক, পেপার, বস্ত্র এবং ভ্রমন অবসর খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার উত্থান-পতন মিশ্রাবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরের এ ধরনের কমাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুনঃ  ভোটের দিন হরতালের ডাক বিএনপির

ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ৪৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা গত এক বছরের মধ্যে সবনিম্ন লেনদেন। এর আগে ১১ এপ্রিল লেনদেন হয়েছিল ৪৫৬ কোটি টাকা। এদিন লেনদেন হওয়া ৩৭৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৪৪টির, কমেছে ২৯৩টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩৮টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩১ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৬২ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৫ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৪ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ৪৫৯ দশমিক ২২ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৫৬ দশমিক ২২ পয়েন্টে।

লেনদেন মন্দাতেও এদিন ডিএসইতে লার্ফাজ-হোল্ডসিমের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন ডিএসইতে লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৪০ কোটি ৬২ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকা, কাট্রালি টেক্সটাইল ১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং বিবিএস কেবলস ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন