রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৫ মার্চের কাল রাতের গণহত্যা যারা দেখেননি

সম্পাদকীয়

বাঙালি জাতির জীবনে এমন দিন যেন আর কখনও না আসে। সেই বিভৎস কাল রাত যারা দেখেছেন তাদের প্রত্যাশাই এটি। পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেদিন নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল শোষণ, বৈষম্য, বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতিকে। রাতের আধারে ব্ল্যাক আউট করে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায়। নদীপথ, রেলপথ, রাজপথ বন্ধ করে পাক হানাদার বাহিনী বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করতে নামে। মেজর জেনারেল ফরমান আলীর নেতৃত্বে সারাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে এই পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়৷ ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামের এই হত্যাযজ্ঞের বিশেষভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জহুরুল হক হল, রোকেয়া হল, জগন্নাথ হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। রোকেয়া হলে আগুন জ্বালিয়ে ৩ শতাধিক ছাত্রীকে পুরিয়ে মারা হয়। ঢাকা শহরের ফার্মগেটে জয়বাংলা স্লোগানরত জনতার ওপরে পাক সেনাবাহিনী বেপরোয়া গুলি চালায়। মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে নৃশংস গণহত্যা চালানো হয়। বিশেষ করে পুরনো ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেয়া হয় ৷ শত শত লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। রাত ১১টায় অতর্কিতভাবে কার্ফু জারি করে অন্ধকারের মধ্যে ঘুমন্ত নগররীতে এই পৈশাচিক, নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশাচালক, ভিক্ষুক, পথচারী কেউ-ই রক্ষা পায়নি তাদের এই হত্যাযজ্ঞ থেকে। পাকিস্তান সামরিক জান্তার হানাদার বাহিনীর এই গণহত্যাই শেষ নয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন বড় বড় শহরগুলো পাকবাহিনী দখলে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ওই শহরগুলোতেও তারা কার্ফু জারি করে ও হামলা চালায়। ঢাকা শহরসহ এক শহর থেকে আরেক শহরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। যেভাবে এই গণহত্যা চালানো হয় তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এর সবকিছুই পাকবাহিনীর পূর্ব পরিকল্পিত। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, যার কণ্ঠ আর অঙ্গুলিকে ভয় পেত পাকিস্তানিরা সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেন৷ ‘এবারের সংগ্রাম মক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো, ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল, শত্রুর মোকাবেলা কর। আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি……..’ এই ভাষণ থেকেই স্বাধীনতাকামী বাঙালি ঘরে ঘরে প্রস্তুত হতে থাকে। পাকিস্তান সরকারও বুঝে ফেলে যে তাদের দিন ঘনিয়ে এসেছে। তারা ১৮ মার্চ এই গণহত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২২ মার্চ রাও ফরমান আলী ৫ পৃষ্ঠার লেখায় সব চূড়ান্ত করে। আর বিলম্ব না করে ২৫ মার্চ মধ্যরাতেই অতর্কিত এই গণহত্যা চালাতে শুরু করে। ঐ রাতেই পাক বাহিনীর ১১ হাজার সৈন্য সারাদেশে পুলিশসহ হাজার হাজার নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে। অবস্থা উপলব্ধি করে পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ ৩২ নাম্বারে জড়ো হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু তাদের সাথে বৈঠক শেষে রাত ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার পরপরই রাত ১টা ৩০ মিনিটে পাক বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নাম্বারের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই শুরু হয় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।

আরও পড়ুনঃ  সচল সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পাথর আমদানি

সংবাদটি শেয়ার করুন