শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনতার জয়

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা এগিয়ে গেলো। সেসাথে জয় হলো জনতার, জয় হলো গণতন্ত্রের। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে দেশের জনগণ আওয়ামী লীগ এর উন্নয়নের পক্ষেই থাকলো। এধারা অব্যহত থাকলে, ২০৪১ সালে এদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছবে সে আশাবাদ দেশবাসীর। প্রাচীন গ্রীসে গণতন্ত্রের যে বীজ বপন করা হয়েছিল আজ তা ফুলে ফলে মহীরূহ হয়ে বিকশিত হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলছে। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময়ে রাজা, বাদশাহ ও জমিদারদের শাসন ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়, কিন্ত জনতার কোন অংশগ্রহণ সাবলীলভাবে প্রতীয়মান হতো না। ফলে সে প্রথার সুফল জনতা অনেক সময় পায়নি। গণতন্ত্র হল এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করতে এবং এর সুফল ভোগ করতে পারেন। জনতা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়।

ভারতীয় কংগ্রেস একসময় বৃটিশ শাসনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁয়। মাহাত্না গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ফলস্বরূপ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান নামে দু’টি আলাদা সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং মোহাম্মদ আলী জিন্ন্াহ পাকিস্তানের প্রথম গর্ভনর জেনারেল হন।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়, পাকিস্তান তাদের শাসন প্রক্রিয়ায় ত্রুুটি বিচ্যুতির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শাসকদের মধ্যে গণতন্ত্রকে লালন করার বা তার বিকাশ ঘটানোর প্রবণতা খুব একটা দেখা যায়নি কখনই। তাদের বেশির ভাগই ছুঁটেছেন কেবল ক্ষমতার পেছনে। এই ক্ষমতাকে তারা মনে করেছেন নিজের জন্মগত কিংবা পারিবারিক অধিকার। আবার কারও কারও জন্য এই ক্ষমতা কেবলই ব্যবসায়ে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তানের ২২ পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সমগ্র পাকিস্তানের শোষণ বঞ্চনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ  প্রধানমন্ত্রীর চিন্তক-বর্গের ভাষা-সংস্কৃতি চিন্তায় বৈপরীত্য

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙ্গালীরা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এরপর এক দীর্ঘ ইতিহাস। মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের মাধ্যমেই আমাদের চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩ টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে বলে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছেন। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভোটারের ৪০.০৪% শতাংশ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০.২০ শতাংশ ভোট পড়ে। আর এবারের নির্বাচনে ৪১.৮০ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।

১৯৭৩ সালের ৭ ই মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৫.৭৩ শতাংশ জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল তাদের প্রার্থী দিতে পারেননি বরং নির্বাচন প্রতিহত করার প্রয়াস চালায়।

সম্প্রতি বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের চ-কোচের মাঝামাঝি থেকে অগ্নিসংযোগ করা হয় যা নিতান্তই ন্যাক্কারজনক। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের অনতিবিলম্ব শাস্তির আওতায় আনা উচিত। রেলপুলিশ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছেন। ইতোমধ্যে এসব সংস্থা ১৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, ইতোমধ্যে ৪জন সরাসরি আগুন দেওয়ার কাজে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। স্বপ্নের পদ্মাসেতুতে প্রথম রেললাইন চালু হওয়ায়, চন্দ্রিমা চৌধুরীসহ আরো অনেকেই প্রথমবার ভ্রমণ করেছিলেন বেনাপোল এক্সপ্রেসে কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, হয়তো তারা অনেকেই আগুনে পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  মাকে ভালোবাসতে আসলেই কী কোন দিবস লাগে?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির রাজনৈতিকভাবে জনসম্পৃক্ততা থাকায় বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে জয় লাভ করে। এরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চেতনার ধারক ও বাহক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নৌকার ভোটাদের বিকল্প প্রজন্ম, আগামীতে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে এ কামনা নিরন্তর। সত্যিকার অর্থে স্বপক্ষ বিপক্ষ বলতে কিছুই নেই। সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষক হতে হবে। স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যারা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত, তাদেরই এগিয়ে যাওয়ার সময়। বিভাজনের রাজনীতিতে জড়িয়ে এবং ইস্যু তৈরি করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে পেছনে ফেলার সুযোগ এখন আর নেই। বিএনপির অবরোধ, অসহযোগ এবং অগ্নিসংযোগের বিষয়টি নিয়ে জনগণ এখন উদ্বিগ্ন। আশা করি আগামী দিনে বিএনপি তাদের শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে গনতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় শামিল হবে।

২৮টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হলো। কেউ কেউ বলছে, এটা ডামি নির্বাচন যেখানে ৪১.০৮ শতাংশ জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। যারা এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনের আওতায় আনা অবশ্য করণীয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা ৪র্থ বারের মতো জনগণের সেবা করার দায়িত্ব পেলেন এবং পঞ্চমবার বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। নব দায়িত্বে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিগণিত হবে, এই প্রত্যাশা নিরন্তর । গ্রামে গঞ্জে হাটে মাঠে যে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে প্রার্থীদের ভোট দিতে দেখা গেছে, তাতে গণতন্ত্রের বিজয়, জনগণের বিজয়। বিএনপি এবং তাদের সমর্থনকারী দলগুলো নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। আশা করছি সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্বাভাবিক গতীশীলতায় এগিয়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ  অর্থনৈতিক কূটনীতির দৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সফর

শিক্ষাবিদ হিসেবে আমার প্রত্যাশা, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তিপ্রদান কার্যক্রম আরো ত্বরান্বিত হবে। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে এবং উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্প্রসারিত হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, তরুণদের বাংলাদেশ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বাংলাদেশ।

জনতাই শক্তি এবং সততাই এর ভিত্তি। জনতার দেয়া ম্যান্ডেট অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আগামী পাঁচ বছর সমৃদ্ধি ও গৌরবের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন, এই প্রত্যাশা করছি। জনতার এই জয় অব্যাহত গৌরবে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করবে, ইনশাআল্লাহ।

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক: উপাচার্য, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সাবেক উপাচার্য, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন