শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ইসলামের বাণী

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ঊর্ধ্বগতি। প্রয়োজনীয় মালামাল মজুদ করে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশের বাজারে সংকট সৃষ্টি করে,তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং দৈনন্দিন মানুষের জীবনকে ভোগান্তিেতে ফেলে অসাধু ব্যবসায়ীরা, এতে করে তারা ক্রেতাদের কষ্ট দিয়ে অবৈধ ও অযাচিত আনন্দ অনুভব করে। অথচ অধিক মুনাফার প্রত্যাশায় পণ্য মজুদ করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।

অসাধু ব্যবসায়ীরা হয়তো মনে করতে পারে, এভাবে তারা অল্প দিনে লাভবান ও বিত্তশালী হয়ে যাবেন কিন্তু না, অথচ তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে পড়ে যায় । বস্তুত এ ধরনের অবৈধ ও অভিশপ্ত সম্পদ আয় করে সুখ পাওয়া যায় ক্ষনিকের সময় । ভোক্তাদের জিম্মি করে অর্থ-কড়ি উপার্জন ঘৃণ্য ও সভ্যতাবিবর্জিত। এই সমস্ত অবৈধ কর্মকান্ডে পরকালে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে।ব্যবসার লক্ষ্যই হলো মুনাফা লাভ। ইসলামে তা হারাম নয়। ইসলাম ব্যবসায়ীকে মুনাফা থেকে বঞ্চিত করে না। সাধারণভাবে ব্যবসা করা ও মুনাফা অর্জন করা বৈধ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত: ২৭৫)
তবে ইসলামে অসৎ জালিয়াতি, ধোঁকাবাজি, ভেজাল মেশানো ও দালালি ইত্যাদি নিষিদ্ধ। জিম্মি করে বা তার অজ্ঞতার সুযোগে অধিক মুনাফা অর্জন সম্পূর্ণ হারাম।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৩৮)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি (সংকট তৈরি করে) খাদ্যশস্য গুদামজাত করে সে অপরাধী। ’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ১৬০৫)

আরও পড়ুনঃ  বাঁশকে খাদ্য নয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও শিল্প ভাবুন

কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি থেকে সাধারণ জনগণকে বাঁচাতে সরকার দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন। পণ্য গুদামজাত করার কারণে জনগণ সঠিক মূল্যে দ্রব্য পায় না। অসাধু ব্যবসায়ীরা সে সমস্ত পণ্যগুলোকে গুদামে রেখে দিয়ে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। যারফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
আর যখনই পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তখনই ব্যবসায়ীরা সেই গুদামে মজুদ করে রাখা অতিরিক্ত পণ্য বেশি দামে বাজারে ছাড়ে। আর এই ঘটনাটা হলো এক প্রকারের সিন্ডিকেটের উদাহরণ। তাছাড়া বাজেট ঘোষণার আগে ও পড়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস জিনিসও এরকম সিন্ডিকেট করে রাখে এবং যখন সেটার দাম বৃদ্ধি পায়, তখনই সেটা বাজারে ছাড়ে।

ইসলামে এধরণের ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে পরকালীন শাস্তি। হজরত রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদ করে রাখে সে ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং তার প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন’। (মিশকাত :১৩১৬)।যে সব অবস্থায় মাল গুদামজাত করা নিষেধ। ১. স্বল্পমূল্য চলাকালীন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে বেশি লাভের আশায় এমনভাবে গুদামজাত করা যে বাজারে তার প্রতিক্রিয়া পড়ে। ২. কোন দ্রব্য এমন পরিমাণে গুদামজাত করা, যে কারণে ক্রেতা সাধারণত সে পণ্যের চরম সংকটের সম্মুখীন হয়। ৩. মানুষের খাদ্যদ্রব্য সংকট অবস্থায় যে কোন পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করা। ৪. বাজারে কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টির জন্য গুদামজাত করা। উল্লেখিত অবস্থায় মাল গুদামজাত করা নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ।

আরও পড়ুনঃ  মাকে ভালোবাসতে আসলেই কী কোন দিবস লাগে?

গুদামজাত করা বা বিভিন্ন জিনিসে সিন্ডিকেট করা ইসলামে চরম ঘৃণিত কাজ। কেননা ব্যবসায়িদের স্বার্থের জন্য গরিব দুঃখী ও অসহায় মানুষ কষ্টের মধ্যে পতিত হয়। আল্লাহর কাছে তাদের ফরিয়াদ বয়ে আনতে পারে সমাজ ও রাষ্ট্রের দুর্ভিক্ষসহ নানান কঠিন আজাব।

আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘যেসব লোক বিনা দোষে মুমিন পুরুষ ও নারীকে কষ্ট দেয়। তারা অতি বড় একটা মিথ্যা অপবাদ ও সুষ্পষ্ট গুনাহের বোঝা নিজেদের মাথায় তুলে নেয়।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৮)
পরিশেষে জনসাধারণকে ভোগান্তিতে ফেলতে পণ্য গুদামজাত করা বা বিভিন্ন জিনিসে সিন্ডিকেট করা ইসলামে চরম ঘৃণিত কাজ। কেননা ব্যবসায়িদের স্বার্থের জন্য গরিব দুঃখী ও খেটে খাওয়া মানুষ কষ্টের মধ্যে পতিত হয়। আল্লাহর কাছে তাদের ফরিয়াদ বয়ে আনতে পারে সমাজ ও রাষ্ট্রের দুর্ভিক্ষসহ নানান কঠিন আজাব। এজন্য আমরা ব্যবসায়িক কাজে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি না করে,হালাল ব্যবসা করার তৌফিক দান করুক,আমিন।

শিক্ষার্থী,
কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয় জেদ্দা, সৌদি আরাবিয়া

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন