শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থনীতির অদম্য গতি থামানো যাবে না

অর্থনীতির অদম্য গতি থামানো যাবে না

বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা আর কখনও কেউ কেউ থামিয়ে দিতে পারবে না। কারণ এটি বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠেছে। এই মর্যাদা বজায় রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে সকলকে কাজ করে যাবার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বুধবার সকালে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) এর ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২১-২০২২’ এর গ্রাজুয়েশন সেরিমনিতে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের একটি। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির আকার ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশের নীচে নামিয়ে এনেছি এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি বলে জানান তিনি।

বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অত্যাধুনিক করে যাচ্ছি। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়নের আলোকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

আন্ত:বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ডিএসসিএসসি’র উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উচ্চমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এক সময় বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশে অনেক নেতিবাচক কথা ছিল। তবে, এখনও কিছু কিছু লোক আছে দেশ সম্পর্কে বদনাম করতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আমরা যে দক্ষতা দেখিয়েছি তার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশে^ আজকে উজ্জ্বল হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  চাকরি ছেড়ে সফল উদ্যোক্তা

ডিএসসিএসসি কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

এবারে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১৮টি দেশের ৪৭ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তাসহ মোট ২৫১ জন পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেছেন। ‘ডিএসসিএসসি’ এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর মোট ১২৮টি কোর্স পরিচালনা করেছে এবং ৫ হাজার ৬৮৬ জনকে ডিগ্রি প্রদান করেছে। ৪৩টি দেশের ১ হাজার ২৫৫ জন অফিসার এখান থেকে ডিগ্রি লাভ করেছে।

২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনদফা নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নের নানাবিধ পদেক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। এ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ’৯৬ সালে যখন সরকারে আসি তখনই ‘বিপসট’ প্রতিষ্ঠা করে দেই। পাশাপাশি সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করি এবং আরো অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ তৈরী করে দেই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করবো না কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে আমরা চুপ করে থাকবো না। সেটা নিশ্চয়ই আমরা প্রতিরোধ করবো বা প্রতিবাদ করবো- সেভাবেই আমরা আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে গড়ে তুলেছি।

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যে কোন জাতীয় প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকেন এবং সহযোগিতা করে থাকেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাসকালে তাঁদের সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার  প্রসঙ্গও টেনে আনেন।

আরও পড়ুনঃ  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের মানববন্ধন

সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নীত করে যান এবং সেখান থেকে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। এই সময়ে  দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা কোর্স সম্পন্নকারিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজ আপনাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। এ দিনটির জন্য দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় সাধন করতে হয়েছে। আপনারা সমর বিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন। আমার বিশ্বাস, এসব প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন এবং যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হবে। কেননা আমি সকলের পদবি পরিবর্তন থেকে শুরু করে অনেক কাজ করে দিয়েছি। যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমানতালে আমাদের প্রতিটি সদস্য চলতে পারে সে ব্যবস্থাটাই করে দিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন