শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কামলার হাটে শ্রম বিক্রি

কামলার হাটে শ্রম বিক্রি

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় বোরো চারা রোপণের উৎসব শুরু হয়েছে। বোরো মৌসুম হওয়ায় শ্রমিকদের ভিড়ে এখন জমজমাট শ্রম বিক্রির হাটগুলো। প্রতিবছর ধান কাটা, মাড়াই ও রোপণের সময় উপজেলার কড়ইচড়া ইউনিয়নের শিমুলতলা, পৌরসভার জোনাইল বাজার, বালিজুড়ী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বসে শ্রমিকদের হাট। স্থানীয় ভাষায় এ হাটকে বলা হয় ‘কামলার হাট’। কেউ কেউ আবার একে বলে ‘কৃষি শ্রমিকের হাট’। এ হাট চলে পুরো মৌসুমজুড়ে। এ হাটে টাকা দিলেই মিলে পছন্দমতো শ্রমিক। কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় শতশত শ্রমিক শ্রম বিক্রির জন্য ভোরে এসে জমায়েত হয় এ হাটে। স্থানীয় কৃষকরা তাদের চাহিদা মতো শ্রমিক নিয়ে নেমে পড়েন ফসলি মাঠে।

জানা গেছে, প্রতিবছর বোরো ও আমন মৌসুমে চারারোপণ, নিড়ানি, ধান কাটা, মাড়াইয়ের সময় রাজশাহী, সাতক্ষীরা, পাবনা, নাটোর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, নিলফামারী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজন আসেন কাজের সন্ধানে। আমন-বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় কৃষি শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এ হাটগুলোতে দরকষাকষি করে কেনাবেচা হয় মানুষের শ্রম। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত এ হাটে চলে শ্রম বেচাকেনা। এ হাটে কেউ বিক্রি হন একদিনের, কেউ পাঁচদিন, আবার কেউ সাত দিনের জন্য। দূর থেকে যারা এ হাটে আসেন তারা বেশি দিনের জন্য এবং স্থানীয় শ্রমিকরা প্রতিদিনের জন্য বিক্রি হন। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন এ হাট থেকে শত শত শ্রমিক বেচাকেনা হয়।

আরও পড়ুনঃ  তারেক রহমানের স্ত্রী'র বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ ১ নভেম্বর

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পৌরসভাসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ১৬ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার ৯০ মে. টন। ধারণা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ করবে কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে,  ভোরের আলো ফোটার আগেই উপজেলার কড়ইচড়া ইউনিয়নের শিমুলতলা, পৌরসভার বালিজুড়ী বাজার, জোনাইল বাজার এলাকায় শ্রমিকের হাটে কয়েক’শ মানুষের জটলা। জমির মালিকেরাও দরদাম করে শ্রমিকদের নিতে এখানে এসেছেন। দেশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বোরো চারা রোপণসহ নানা ধরনের কাজের জন্য শত শত দিনমজুর ‘শ্রম’ বিক্রির হাটে এসে মিলিত হন। এ মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের চাহিদা বেশি। তাই শীত উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে প্রতিদিন তাঁরা এ হাটে আসেন। ভোর থেকে শুরু করে সকাল ৭টা পর্যন্ত চলে শ্রম কেনাবেচা। তবে সময় যত বাড়তে থাকে, শ্রমিকের সংখ্যা ততই কমতে থাকে। বর্তমানে এখানে একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পযর্ন্ত মজুরি পান। ওই হাট থেকে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য দিনমজুরকে দামদর ঠিক করে নিয়ে যাওয়া হয়।

গুনারিতলা ইউনিয়নের জোনাইল গ্রামের কৃষক সাদউল্লাহ জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দিনমজুরেরা হাটে আসেন শ্রম বিক্রি করতে। সেখান থেকে দিন অথবা কাজচুক্তি হিসেবে মহাজনের কাছে নিয়োগ হয়ে থাকেন। কাজ অনুযায়ী প্রতিদিন প্রতিটি দিনমজুরের মজুরি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ  বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ

কড়ইচড়া ইউনিয়নের ভেলামারী গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, বোরো চারা রোপণের জন্য দৈনিক জনপ্রতি ৪৫০ টাকায় সাতজন শ্রমিক জোনাইল বাজার থেকে ক্রয় করে এনেছি। তাদের সঙ্গে চুক্তি আমার বোরো ক্ষেতের সব চারা রোপণ করে যেতে হবে। প্রতিটি শ্রমিক দিনে প্রায় ৫ থেকে ৭ কাটা জমিতে বোরো চারা রোপণ করতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, রংপুর থেকে এসেছেন তারা। বাড়িতে কোনো কাজকর্ম নেই। তাই এ অঞ্চলে কাজের সন্ধানে ছুটে এসেছেন। এলাকায় একদিন কাজ করলে দুদিন বসে খেতে হয়। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্ট হয় তাদের।  দৈনিক ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় শ্রম বিক্রি করেন। তবে শ্রম কেনা মালিকের পছন্দের ওপর নির্ভর করে মূল্য। বৃদ্ধের চেয়ে জোয়ানদের চাহিদা বেশি। অনেকে শ্রমজীবীর শারীরিক গঠন দেখেও শ্রম ক্রয় করে থাকেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন শ্রমিকহাটে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিদিন শ্রমিক আসেন। শ্রমিক নিয়োগকারীরা হাটে এসে শ্রমিকদের নিয়োগ দেন। শ্রমিক হাটে কোনো অনিয়ম হয় না। মানুষ কোনো প্রতারিত হয় না।

আনন্দবাজার/এম.আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন