শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিনিপর্যটনেও অপার সম্ভাবনা

রাজশাহী মহানগরীসহ জেলা। দেশের সামান্য এ অংশটির মধ্যেই আছে ডজনখানেকের বেশি দর্শনীয় এলাকা। এসবের মধ্যে অন্যতম পুঠিয়া রাজবাড়ি, হযরত শাহ মখদুম রুপোষের (রহ.) দরগা, বড়কুঠি (অষ্টাদশ শতাব্দী), বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, বাঘা মসজিদ, শহরের কোলঘেঁষে পদ্মা নদীর পাড়। এসব ছাড়াও কৃত্রিম পার্কসহ অন্যসব দর্শনীয় জায়গার সংখ্যা আরো ২০টি ছাড়াবে।

রাজশাহী মহানগরীসহ জেলা। দেশের সামান্য এ অংশটির মধ্যেই আছে ডজনখানেকের বেশি দর্শনীয় এলাকা। এসবের মধ্যে অন্যতম পুঠিয়া রাজবাড়ি, হযরত শাহ মখদুম রুপোষের (রহ.) দরগা, বড়কুঠি (অষ্টাদশ শতাব্দী), বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, বাঘা মসজিদ, শহরের কোলঘেঁষে পদ্মা নদীর পাড়। এসব ছাড়াও কৃত্রিম পার্কসহ অন্যসব দর্শনীয় জায়গার সংখ্যা আরো ২০টি ছাড়াবে। এসব দর্শনীয় এলাকা একজন পর্যটককে রাজশাহীর মাটির দিকে আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট। দেশের প্রতিটি জেলায় এমন দর্শনীয় এলাকা অসংখ্য আছে। এতো কিছুর পরেও পর্যটনশিল্পে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। শিল্পটিকে একটু সমৃদ্ধ করতে পারলেই বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বাড়বে দেশের আয়।

এবার বড় পরিসরে দেশের পর্যটন এলাকাগুলোর দিকে নজর দেয়া যাক। কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত ১২০ কিলোমিটার সৈকত। যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড়। ইনানী সৈকত, হিমছড়ি জলপ্রপাত, রিজার্ভ ফরেস্ট ও অভয়ারণ্য, সেন্টমার্টিনের মতো প্রবাল দ্বীপ। চট্টগ্রামের উপকণ্ঠে রয়েছে ফয়েজ লেক। খুলনায় সুন্দরবন। ২৪০০ বর্গমাইলের সমুদ্রের কোল ঘেঁষা এ বন। দক্ষিণে কুয়াকাটায় রয়েছে সমুদ্র সৈকত। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা সেখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য। রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ পর্যটকদের আগ্রহের বিষয়।

বান্দরবনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং। সমুদ্র থেকে অনেক উচ্চে প্রায় একমাইল দীর্ঘ বগা লেকও এখানে রয়েছে, কাপ্তাই লেক। উত্তরে পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার, শালবনবিহার ও আনন্দবিহার। শালবন বিহারের পাশেই রয়েছে পুরোকীর্তি জাদুঘর। এখানে ৭ম ও ৮ম শতাব্দীর বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। বগুড়া শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মহাস্থানগড়ের বৌদ্ধ বিহার। নাটোরের রাজবাড়ী, গণভবন, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, চট্টগ্রামে আমানত শাহের মাজার, সিলেটে হজরত শাহজালাল (র.) মাজার, শাহপরানসহ অগণিত ওলি আউলিয়ার মাজার রয়েছে যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো।

আরও পড়ুনঃ  চাঁদনি চক মার্কেটে ভয়াবহ আগুন

সিলেটের জাফলং, সুরমা, কুশিয়ারা বিধৌত সিলেটের তামাবিল, শতাধিক হাওর এবং সবুজের সমারোহে ভরা চাবাগান কার না হৃদয় কাড়ে। মাধবকুণ্ডের জলপ্রপাত, বিয়ানীবাজার, বড়লেখা, ছাতকের কমলালেবুর বাগান, শ্রীমঙ্গলের হামহাম জলপ্রপাত। রাজধানী ঢাকা শহর ও তার আশপাশে বোটানিক্যাল গার্ডেন, লালবাগের কেল্লা, পরীবিবির মাজার, প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁ জাদুঘর, চিড়িয়াখানা। এরকম পর্যটকদের আর্কষণ করা আরোও অসংখ্য সুন্দর, সুন্দর জায়গা দেশে আছে। এমন অসংখ্য সব দৃষ্টিনন্দন জায়গা। যার মনোরম দৃশ্য দেশ বিদেশের পর্যটকদের নিশ্চিতভাবেই মন ছুঁয়ে যাবে।

সারাবিশ্বে পর্যটন দ্রুত বিকাশমান একটি শিল্প হচ্ছে পর্যটন শিল্প। কিন্তু এটিকে কাজে লাগতে পারছি না আমরা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকাশও হয়নি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারাবিশ্বের মোট পর্যটকের মাত্র দশমিক ৮ শতাংশের আগমন ঘটে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। এই সামান্য সংখ্যক পর্যটকদের মধ্যে বাংলাদেশ শুধু ৪ ভাগ পর্যটককে আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছে।

দ্য গ্লোবাল ইকোনমির তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক ঘুরে গেছে ৩ লাখ ২৩ হাজার। এটা অন্যসব দেশের তুলনায় সামান্য। যেখানে, ভিয়েতনামে ঘুরেছে এক কোটি ৮০ লাখ, ভারত ঘুরে গেছেন এক কোটি ৭৯ লাখ, মিয়ানমার ভ্রমণ করেছেন ৪৩ লাখ পর্যটক, কম্বোডিয়ায় ৬৬ লাখ ১১ হাজার, নেপালের মতো উন্নয়নশীল দেশে একই বছর ভ্রমণ করেছেন ১২ লাখ, মালদ্বীপে ১৭ লাখ, শ্রীলঙ্কায় ২০ লাখ ২৭ হাজার, পাকিস্তানে নয় লাখ ৬৬ হাজার বিদেশি পর্যটক।

দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটনে নেপাল, মালদ্বীপ ও ভারত বেশ এগিয়ে। নেপালে জাতীয় আয়ের ২০ ভাগ আসে পর্যটন খাত থেকে আর মালদ্বীপে ৪০ ভাগ। এছাড়াও সিঙ্গাপুরের জাতীয় আয়ের ৭০ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে, তাইওয়ানের আসে ৬৫ শতাংশ, হংকংয়ের ৫৫ শতাংশ, ফিলিপাইনের ৫০ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডের ৩০ শতাংশ। এই দিক দিয়ে দেশের অবস্থান খুব কম।

আরও পড়ুনঃ  বসল পদ্মা সেতুর আরও এক স্প্যান, দৃশ্যমান ৪৩৫০ মিটার

ইউনাইটেড ন্যাশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের (ইউএনডব্লিউটিও) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বের মোট কর্মসংস্থানের ১০ শতাংশ তৈরি হয়েছে পর্যটনখাতে। আগামী বছরগুলোয় সেই হার আরও কয়েক শতাংশ বাড়বে। তবে, ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরেই প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিষদের (ডব্লিউইএফ) ভ্রমণ ও পর্যটনবিষয়ক সূচকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এ হার ১ দশমিক ৯ শতাংশ। সংস্থাটির হিসাবে, বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ বা ১১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ জন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৭ সালে যা ছিল ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯০ জন। বিশ্বে যে হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে পর্যটন খাতে। দেশে কিন্তু তা হচ্ছে না।

রাজশাহী পবা উপজেলার শিক্ষক আব্দুল হান্নান চৌধুরী দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা বিরাজমান। বড় পরিসরে চিন্তার পাশাপাশি আমাদের ক্ষুদ্র পরিসরেও চিন্তা করতে হবে। আমাদের জেলাভিত্তিক দর্শনীয় এলাকাগুলোর পরিচিতি ও প্রচারের প্রসার ঘটাতে হবে। এমনটা করতে পারলেই প্রতিটি জেলাতেই পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। পাশাপাশি দেশের আয় ও কর্মসংস্থান বাড়বে।

রাজশাহী সিনিয়র সাংবাদিক মামুন-অর-রশিদ আনন্দবাজারকে বলেন, বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আমরা পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে আছি। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবপক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান আনন্দবাজারকে বলেন, বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হবে। বিদেশি পর্যটক টানতে না পারলে আমরা ব্যর্থ হবো। এজন্য অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের দুরবস্থা দূর করতে হবে। পাশাপাশি হোটেলগুলোকে বিদেশি পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এক কথায় বিদেশিদের টানতে যেসব প্রয়োজন সেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ব্যাটিং করতে না পারলে সাকিব ক্রিকেটই খেলবে না: সালাউদ্দিন

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন