শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাসিক নির্বাচন আজ

নাসিক নির্বাচন আজ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)র নির্বাচন আজ। আওয়ামী লীগের মনোনীতপ্রার্থী হিসেবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত তৈমুর আলম খন্দকারসহ সাতজন মেয়র পদপ্রার্থী।

এ ছাড়া কাউন্সিল পদে প্রার্থীসহ ১৪৮ প্রার্থী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩২ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ মিলিয়ে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৯২টি। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তাসহ ভোটের দিন পুলিশের ২৭টি স্ট্র্যাইকিং ফোর্স ও ৬৪ মোবাইল টিম মাঠে থাকবে। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৩২ জন। প্রায় ২০ লাখ মানুষের এ সিটিতে ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ আর পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন। ১৯২টি কেন্দ্রের সব কটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর আগে সব প্রস্তুতি সাড়তে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে শুরু হয় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানোর কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় ভোটদানের গোপনীয়তা রক্ষায় সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে যদি কোনোরকম ত্রুটি দেখা দেয় এজন্য পুরো সিটি করপোরেশনের ৪৮ জনের টেকিনিক্যাল পারসনদের নিয়ে মোবাইল টিম থাকবে বলে জানান রিটানিং কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যখন যেখানে প্রয়োজন হবে, তারা তা সমাধান করবেন।

আরও পড়ুনঃ  গাইবান্ধায় পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

দেশের হাইভোল্টেজ এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশের সচেতন ব্যক্তিদের দৃষ্টি এখন নৌকা ও হাতির দিকে।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হবে আর ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা ভোটের সব সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছে। আরও ত্রিশজন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবে। পুলিশের ৭৫টি টিম ও র‌্যাবের ৬৫টি টিম মাঠে থাকবে। বিজিবিও কাজ করবে। কেন্দ্রগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিজিবি কাজ করছে। আছেন পুলিশ সুপার ও র‌্যাব কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। নির্বাচনের জন্য যারা থ্রেট হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিতে পারবে।

এদিকে হাতি মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া তৈমুর আলম খন্দকার গতকাল নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের গ্রেফতার-হয়রানি-নির্যাতন এখনও বন্ধ হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের ওপর কেন এত অত্যাচার নির্যাতন চালানো হচ্ছে? কীভাবে আমরা নির্বাচন করবো? নির্বাচন কমিশন বলেছে, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কিন্তু এভাবে গ্রেফতার হয়রানি করলে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে?

তৈমুর আলম বলেন, সরকারি দলের প্রার্থীর ডিজিটাল আইনের মামলা থেকে সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি। এখনও সেই মামলায় তারা জেল খাটছে। এখানে অনেক লোক আছেন যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। তাদের মধ্যে এমন কোনও লোক নেই যাদের বাড়িতে দুই থেকে তিন বার পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থান লোক যায়নি। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, প্রশাসনের এহেন কাজে আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পাপনও কাল এখানে ছিলেন। তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বন্যায় শিল্পাঞ্চল থেকে গ্রামে ছড়াচ্ছে দূষিত পানি

শুক্রবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, জনগণের ঘাঁটি। আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া মিউচুয়াল ক্লাবে। কিন্তু এ শহরকে কলুষিত করা হয়েছিল। সে কারণেই নেত্রী আমাকে নৌকা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমার বাবা আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ছিলেন। তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন। আমি দীর্ঘদিন আপনাদের জন্য কাজ করেছি। এ নৌকা আইভীর নৌকা, বিজয়ের নৌকা, বঙ্গবন্ধুর নৌকা। এই নৌকাকে হারানোর ক্ষমতা কারও নেই।

নাসিক নির্বাচনে ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেছেন, দুই প্রধান প্রার্থীকে (আইভী-তৈমুর) ডিঙিয়ে বাজিমাত করবেন তিনি।

নাসিক নির্বাচনের দিন বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধ করে ভোটের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে আজ নগরীর ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম।

তিনি বলেন, কোনো বহিরাগতকে আমরা রবিার নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেব না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের যে মোবাইল টিম থাকবে, আমাদের চেকপোস্ট থাকবে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমরা মানুষকে চলাচল করতে দেব। কালকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলাকার যে বা যারা বের হবেন দয়া করে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বের হবেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে।

নাসিক নির্বাচনে ঝুঁকি বিবেচনায় ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি কেন্দ্রকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ওইসব ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনে কেন্দ্রগুলোকে অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ- তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। এখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তিনটি থানা এলাকা থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৩০টি চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব কেন্দ্রকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মোবাইল টিম, স্ট্র্যাইকিং ফোর্স প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি ওয়ার্ডে মোতায়েন থাকবে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন