রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগর-আতরের রাজধানীতে হতাশা

আগর-আতরের রাজধানীতে হতাশা
  • কমেছে রফতানি, বিপাকে ব্যবসায়ীরা
  • ৩০০ কারখানায় কর্মরত ৫ হাজার শ্রমিক
  • বিদেশে লিটারে দাম ৮ লাখ টাকা
  • দুই বছর ধরে ব্যবসায় স্থবিরতা, কমেছে বিক্রি

আগর-আতরের রাজধানী বলা হয় মৌলভীবাজারে’র বড়লেখাকে। তবে করোনাভাইরাস আগর-আতর ব্যবসার মধ্যে স্থবিরতা এনে দিয়েছে। শুধু তাই নয় বিক্রি নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। এতে আগের তুলনায় বিদেশে আগর-আতরের চাহিদা কমায় রফতানিও কমেছে।

বর্তমানে ব্যবসায়ীদের গোডাউনে পড়ে আছে কোটি টাকার আগর-আতর। এতে বিপাকে পড়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ আগর-আতর কারখানা বন্ধ রয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন এখাতের সঙ্গে জড়িতরা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার প্রভাবে বেচাকেনা কমে গেলেও আগর-আতর একটি সম্ভাবনাময় পণ্য। এটির ভবিষ্যৎ আছে। করোনাভাইরাসের প্রভাব কমে গেলে বিদেশে আবারও আগর-আতরের চাহিদা বাড়বে। বৃদ্ধি পাবে রপ্তানী। যদিও এতে কিছুটা সময় লাগবে।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় গত তিনশ বছর ধরে বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নে আগর-আতর উৎপাদন হয়ে আসছে। ওই ইউনিয়নকে আগর-আতরের রাজধানী বলা হয়। বর্তমানে এ শিল্পের সঙ্গে ওই ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ পরিবার জড়িত। আর এখানে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৩০০ আগর-আতর কারখানা রয়েছে। এসব কারখনায় কাজ করছে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক। সুজানগর ইউনিয়নের উৎপাদিত আগর-আতর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ওমান, ইয়েমেনসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে আগর-আতর রফতানি হয়ে থাকে। বড়লেখা থেকে প্রতিমাসে প্রায় এক হাজার লিটার শুধু আতর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। পাশাপাশি আগরের কাঠও রপ্তানী হয়। প্রতি লিটার আতরের বাজার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ লাখ টাকা। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর থেকে আগর-আতর ব্যবসায় স্থবিরতা নেমেছে।

আরও পড়ুনঃ  কলাপাড়ায় শ্রদ্ধাভারে জাতীয় শোক দিবস পালিত

সরেজমিনে বড়লেখার সুজানগর ইউনিয়নে দেখা যায়, বন্ধ হয়ে আছে অধিকাংশ আগর-আতর কারখানা। তবে দু’একটি কারখানা খোলা থাকলেও তাতে গুটি কয়েক শ্রমিক কাজ করছেন। আগর-আতর ব্যবসায়ীরা জানায়, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বন্ধ করে দেওয়া হয় বিমানের ফ্লাইট। এতে করে বহি:বিশ্বে বন্ধ হয়ে যায় আগর-আতর রফতানি। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগর-আতরের চাহিদাও কিছুটা কমেছে। এতে ইতোমধ্যে তৈরিকৃত এবং তৈরি করে রিজার্ভে রাখা আগর-আতর বিক্রি করা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। চলমান করোনা সংকটে অধিকাংশ আগর-আতর কারখানা বন্ধ রয়েছে। যাও কিছুটা আছে সেটাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। অনেক ব্যবসায়ীর ঘরে পড়ে আছে কোটি কোটি টাকার আগর-আতর। বিক্রি না হওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন তারা। অন্যদিকে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। কেউবা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়। আবার কারো কারো বিকল্প কোন কাজও জানা না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে আছেন বেশ কষ্টে।

কথা হয় আগর-আতর শ্রমিক আহমদ আলীর সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনার আগে আগর-আতরের বেচাকেনা বেশ ভালই ছিল। আমাদেরও কাজ ছিলো। অনেক সময় দিনরাত কাজ করতে হয়েছে। তবে করোনা শুরু থেকেই আর বিকিকিনিও নেই বললেই চলে। বন্ধ হয়ে আছে অনেক কারখানা। আমরাও বেকার। শুধু তাই নয়, অনেক ব্যবসায়ীর গ্যাস বিলও দেওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

দীর্ঘ একযুগ যাবৎ এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন সুজানগরের জাহেদ মিয়া। তিনি বলেন, আমার কারখানায় প্রায় ২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। করোনায় বিদেশে আতর-আগরের চাহিদা কমেছে। বর্তমানে আমার কাছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার আতর পড়ে আছে। বিক্রি করতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, শুধু আমার নয় সুজানগরের অধিকাংশ আগর-আতর ব্যবসায়ীর অবস্থা এখন করুন। তবে বিদেশে এর চাহিদা বাড়লে রফতানি আবার পূর্বের জায়গায় ফিরবে এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন এ ব্যবসায়ী।

আরও পড়ুনঃ  চন্দ্রঘোনা কেপিএম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, স্থাপত্যকলার নান্দনিক নির্দেশন

বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্টার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনছারুল হক জানান, সরকার ইতোমধ্যে আগর-আতরকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করছেন। শুধু তাই নয়, বিশেষ বিসিক শিল্পনগরী তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে এবং প্রণোদনাও দিচ্ছে। তবে করোনায় আগর-আতরের বাজারে বেশ মন্দাভাব এনে দিয়েছে। সব ব্যবসায়ীর কাছে প্রচুর আগর-আতর জমা আছে। কেউই বিক্রি করতে পারছেন না। এটি একটি সম্ভাবনাময় পণ্য তাই এ অবস্থা থাকবে না। কেননা এটার ভবিষ্যৎ আছে। করোনার দাপট থেমে গেলে আবারও এ ব্যবসা জমে উঠবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন