রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে করোনার আরও একটি ঢেউ আসতে পারে

দেশে করোনার আরও একটি ঢেউ আসতে পারে

সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও দেশে শিগগির করোনার আরেকটি ঢেউ আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সংক্রমণ কমায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই বলে মত দিয়েছেন তারা। সংক্রমণ কমে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা কমতে থাকায় তাদের এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ ছাড়া, ভারতে করোনা পরিস্থিতির পরিবর্তনও তাদের আশঙ্কার একটি কারণ। দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের যেকোনো সময় সেখানে করোনার আরেকটি নতুন ঢেউ আসতে পারে।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনা আঘাত হানার পর থেকে বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্যাটার্ন ভারতের মতোই। এ অবস্থায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জনগণকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণ ও মৃত্যু হার এখনও বিপৎসীমার ওপরে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গতকাল সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। যা গতমাসের ১ তারিখে ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। পাঁচ শতাংশের ওপরে সংক্রমণের হার থাকলে তা বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়। যদি দুই থেকে তিন সপ্তাহ একজনেরও কোভিড শনাক্ত না হয় বা কোভিডে মৃত্যু না হয়, কেবল তখনই বলা যেতে পারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ ও মৃত্যু হার এখনও বেশি থাকায় আত্মতৃপ্তির অবকাশ নেই। যেহেতু সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলছে এবং মানুষ স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা মানছে না, সেহেতু দেশ করোনার আরেকটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে পারে।’

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে ট্রেনের ধাক্কায় এক ব্যক্তি মৃত্যু

বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, কোভিড পরিস্থিতি ভালো থাকা অবস্থায় সরকারের উচিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো দূর করা এবং সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া। সরকারকে টিকা দেওয়ার গতি বাড়ানোরও পরামর্শ দেন তারা।

১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশে প্রায় চার শতাংশ মানুষ এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ (ভারত) ও সারা বিশ্বের কোভিড পরিস্থিতির ওপর আমরা নজর রাখছি, পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করব। কিন্তু, আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানি, তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া একটি প্রতিবেদনে দেশটির বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল তিনটি পরিস্থিতির পূর্বাভাস দিয়েছে। সেগুলো অনুযায়ী, তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে ভারতে অক্টোবর মাসে প্রতিদিন তিন লাখ ২০ হাজার, পাঁচ লাখ এবং দুই লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হতে পারে।

গত এপ্রিলের শেষের দিকে এবং মে মাসের শুরুতে ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রকট আকার ধারণ করে। দৈনিক সংক্রমণ চার লাখের কাছাকাছি চলে যায়। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা কমতে শুরু করে।

গত ২২ আগস্ট ভারতে ২৫ হাজার জনের করোনা শনাক্ত হয়। কিন্তু, এরপর থেকে দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে ৪০ হাজারের বেশি হয়ে গেছে।

সরকারি বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তৃতীয় ঢেউ মূলত ভাইরাসের মিউটেশনের কারণে হবে। এটি কাপা ভ্যারিয়েন্টের কারণেও হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কাপাকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে।

আরও পড়ুনঃ  আইএলও কনভেনশনে ক্ষতিপূরণ দাবি

এ ছাড়া, তৃতীয় ঢেউয়ের কারণ হতে পারে নতুন ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টও। অতি সংক্রামক এ ভ্যারিয়েন্টটি ইতোমধ্যে দেশটির অঙ্গরাজ্য মহারাষ্ট্রে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।

সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।

ভারতের প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন ডা. দেবী শেঠি এক সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, ‘প্রথম ঢেউয়ে কোভিড মূলত বয়স্কদের আক্রান্ত করেছিল। তরুণরা রক্ষা পায় তখন। কিন্তু, দ্বিতীয় ঢেউ বিপুল সংখ্যক তরুণকে আক্রান্ত করেছে। তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্করা ইতোমধ্যেই সংক্রমিত বা টিকা পেয়েছেন।’

চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। দৈনিক সংক্রমণের হার প্রায় দুই শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু, গত মার্চ থেকে এটি আবারও বাড়তে শুরু করে।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন রেকর্ড পরিমাণ সংক্রমণ ও মৃত্যু দেখা গেছে। জুন ও জুলাইয়ে অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ছিল।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন