টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে পাবনায় পদ্মা ও যমুনা নদীতে হু হু করে পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি, হুরাসাগর, গুমানি, চলনবিলসহ বেশ কিছু নদ-নদীতে পানি বেড়েছে ১৮ সেন্টিমিটার। ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের পদ্মা নদীতে বিপৎসীমার মাত্র ১৬ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিদিনই বেড়ায় যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা ও যমুনার তীরবর্তী নিচু এলাকাতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই পানি প্রবেশ করছে নিচু এলাকায়। এতে তলিয়ে যাচ্ছে উঠতি নানা ধরণের শবজি ও ফসলের ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে তীরবর্তী জনসাধারণ। অনেকেই ইতোমধ্যে বাড়িঘর সরাতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। অনেকের মধ্যেই সহায়-সম্বল হারানোর উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এই পয়েন্টে পানির উচ্চতা এখন ১৪ দশমিক ০৯ মিটার। পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমা ১৫ দশমিক ২৫ মিটার।
বেড়া পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল খালেক জানান, যমুনা নদীতে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে পানির স্তর ছিল ১০ সেন্টিমিটার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। উজানের ঢল, অতিবৃষ্টি আর বন্যার পানি এভাবে বাড়তে থাকলে সামনে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে যমুনা নদীর বেড়া অঞ্চলের নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন ইউনিয়নের পূর্বশ্রীকণ্ঠদিয়া, চরশাফুল্লা, খয়েরবাগান বাজারসহ চর এলাকার চার শতাধিক মানুষ।
সুজানগরের নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের খলিলপুর, চরখলিলপুর এবং কালিকাপুর এলাকায় অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি ও জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া পাবনা সদরের আশ্রতোষপুর, বলরামপুর ও রানীনগর ভাঙনকবলিত এলাকা। পানিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই সব এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল লতিফ জানান, গত তিন দিনে পদ্মায় পানিবৃদ্ধির ফলে উপজেলার লক্ষীকুন্ডা, সাঁড়া, পাকশী ও সাহাপুর ইউনিয়নের কিছু এলাকায় ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করায় ২৫৫ হেক্টর জমির মুলা, মিষ্টিকুমড়া, করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, ৩৫ হেক্টর মাষকলাই, ৩৪ হেক্টর আখ ও ২০০ হেক্টর জমির কলার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা আসলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।