শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উন্নয়নের অর্থনৈতিক সূচকে সুন্দরগঞ্জ, পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট!

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আ’লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। পরপর টানা তিন বারের মতো বর্তমানেও ক্ষমতায় আ’লীগ সরকার। একটানা ক্ষমতার ১৪ বছর পেরিয়ে ১৫ বছরে পদার্পণ করেছেন আ’লীগ সরকার।

স্বাধীনতা অর্জনের ৫১ বছরের ইতিহাসে কখনোই কোন সরকার টানা প্রায় ১৫ বছরে এতটা উন্নয়ন করেনি গোটা দেশে, যতটা উন্নয়ন করেছে আ’লীগ সরকার। এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে রূপকল্প প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে। গত প্রায় ১৫ বছর দেশের সার্বিক উন্নয়নের কারণ হিসাবে দেখা যায় সুপরিকল্পিত রূপকল্প প্রণয়নের পশ্চাতে বঙ্গবন্ধু’র কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা’র সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও দার্শনিক অভিপ্রায়ই ছিল সক্রিয়।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন বিদ্যমান রয়েছে। এ উপজেলার ওপারে কুড়িগ্রামের চিলমারী, এ পারে সুন্দরগঞ্জ এবং মাঝপথ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত তিস্তা নদী। বর্ষা এলেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে এ নদী। ভেঙে তছনছ করে একের পর এক বসতভিটা ও ফসলি মাঠ। নিঃস্ব হয়ে পরে এ জনপদের মানুষ। দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষের পারাপারের একমাত্র উপায় ছিল খেয়া। দিনে খেয়াতে নদী পাড়ি দিতে পারলেও সন্ধ্যে নেমে এলেই বন্ধ হয়ে যেত সেই খেয়া। দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার হলেও দেরি কিংবা যে কোনো কারণে খেয়া ধরতে না পারলে উপোষ করে রাত কাটাতে হতো নদী পাড়ি দিতে না পারা অপেক্ষারত মানুষদের। রাত পোহালে তবেই হতো বাড়ি ফেরা।

আরও পড়ুনঃ  যোগাযোগ বন্ধ, ধসে পড়েছে মুন্সীগঞ্জে বেইলী ব্রিজ

যুগযুগ ধরে যাতায়াতের সেই দুর্ভোগ নিরসনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে এক দশমিক ৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে স্বপ্নের তিস্তা সেতু। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কুড়িগ্রাম, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও চিলমারী থেকে সড়কপথে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। দূরত্ব কমবে বিভাগীয় শহর রংপুরেরও। এতে বাঁচবে সময় ও অর্থ। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান। ঘুচবে দুঃখ এবং ঘটবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এছাড়াও এ উপজেলায় অসংখ্য ছোট-ছোট ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

শিক্ষা খাতে এ উপজেলার উন্নয়ন চোখে পড়ার মত। শিক্ষা নগরী সুন্দরগঞ্জে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একটি সরকারি কলেজের অবস্থান। এছাড়াও ২৫৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক – নিম্ন মধ্যমিক, স্কুল এন্ড কলেজসহ মাদ্রাসা আছে সর্বমোট ১৫৪ টি, ডিপ্লোমা ইন্সিটিউট ৩ টি, কারিগরী কলেজ ৮ টিসহ বেসরকারি আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই উপজেলায়।

১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পরে আ’লীগ সরকারের ছোঁয়ায় হাসপাতালটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ভবনে উন্নীত হয়। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হয়েছে অপারেশন থিয়েটার। আগে কোনো প্রসূতির অবস্থার অবনতি হলে বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে বিভাগীয় শহর রংপুর ও গাইবান্ধা জেলা শহরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তবে বর্তমান সরকারের অবদানে হাতের নাগালে সুবিধা মেলায় খুশি সুন্দরগঞ্জবাসী। তাছাড়াও জনগণের দাড়গোরায় ডিজিটাইজেশন কর্মসূচীর মাধ্যমে ই-সেবাসমূহ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল ই-সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণের ভোগান্তির অবসান ঘটেছে। জমা-জমির খারিজ সহ সকল ভূমি সেবা এখন সল্প সময়ের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ভোগ করছে সকল জনগন।

আরও পড়ুনঃ  গুজবে কান দেবেন না

অন্যদিকে গত কয়েক বছর থেকে জেলা পুলিশের নিয়োগ সচ্ছতায় স্হান পেয়েছে। এতে করে সুযোগ পাচ্ছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র, মেধাবী শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যর উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত থাকলে তবে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হবে।

এদিকে সুন্দরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ৩০টি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে । এসব সড়ক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে যাওয়া যাবে। প্রতিটি সড়কের শুরুতে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার নাম ও ছবি সংবলিত পাকা নামফলক।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবু বলেন, আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সুন্দরগঞ্জে সকল প্রকার দূর্নীতি ও অনিয়মের অবসান ঘটেছে। উপজেলায় বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন লুটপাট, দুর্নীতি, অনিয়মের তোপে পড়েছিল সাধারন জনগন। চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস-রাহাজানিতে জনজীবন অতিষ্ঠ ছিল। বর্তমান সরকারের আমলে উপজেলার মানুষ শান্তিতে জীবন-যাপন করছেন।

আশরাফুল আলম সরকার লেবু আরো বলেন, আমরা সারাদেশের উন্নয়নের ন্যায় এ উপজেলায়ও যথেষ্ট উন্নয়ন করেছি যা চারিদিকে দৃশ্যমান। এই উন্নয়নের ধারাকে বজায় রাখতে চাঞ্চল্যের বাসিন্দাদের বন্যার কষ্ট নিরসনের জন্য আরো মহা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গ্রামীণ জনপদের রাস্তা-ঘাটকে আরো উন্নতিকরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন