শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধার প্রাচীনতম গায়েবি মসজিদ

গাইবান্ধার প্রাচীনতম গায়েবি মসজিদ

ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর অবহেলিত গাইবান্ধা। এ জেলার সাত উপজেলায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সাদুল্লাপুর উপজেলায় রয়েছে জামালপুর শাহী মসজিদ বা গায়েবি মসজিদ। এ মসজিদটি কবে, কখন ও কিভাবে নির্মিত হয়েছে তা কেউ জানেন না।

তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৭শত বছর আগে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে। সেই সময় থেকেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রাচীনতম এ মসজিদটি এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে অক্ষত অবস্থায়। সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামের জামালপুর সিনিয়র মাদ্রাসার সামনে মসজিদটি অবস্থিত। এ মসজিদের উত্তর দিকে রয়েছে পীরে কামেল হজরত শাহ জামাল (রহ.) এর মাজার শরীফ ও দক্ষিণ পার্শ্বে হজরত শাহ জামাল (রহ.) এতিমখানা। ইংরেজ শাসন আমলে মসজিদটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়।

এলাকায় জনবসতি না থাকায় বনজঙ্গল আচ্ছন্ন হয়ে মসজিদটি ঢাকা পড়ে যায়। গত ৬০ দশকের প্রথম দিকে গাইবান্ধা মহকুমা প্রশাসক হিসেবে হক্কানি কুতুবউদ্দিন নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয়দের কাছে মসজিদটির ইতিকথা শোনেন। লোকজনের কথা শুনে তিনি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মসজিদটি অনুসন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু মসজিদটির জায়গায় বিশাল বট গাছ গজিয়ে উঠায় মসজিদটি বটবৃক্ষের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। হঠাৎ একদিন প্রচন্ড এক ঝড়ে বট গাছটি ভেঙে পড়লে স্থানীয় লোকজন মসজিদটি দেখতে পায়। সেই থেকে মানুষ মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে।

কথিত আছে, মসজিদটি সন্ধ্যান লাভের কিছুদিন পর সিলেটের  হজরত শাহ জামাল (রহ.) স্ব-পরিবারে এ এলাকায় আগমন করেন। এ এলাকায় এসেই তিনি মসজিদটি দেখাশুনা শুরু করেন। সেই থেকে মসজিদটির নামকরণ হয় জামালপুর শাহী মসজিদ। এলাকাবাসী বলেন, সুলতান মাহমুদের আমলে সৈয়দ ভোম আলী ভারতের শিলিগুঁড়ি থেকে হজরত খাঁজা মঈন উদ্দিন চিশতির নির্দেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এ অঞ্চলে এসে হজরত শাহ জামালের

আরও পড়ুনঃ  নওগাঁ সাপাহারে মাস্ক বিহীনদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা

সঙ্গে মিলিত হন। সম্ভবত তারাই এ মসজিদ নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ হিসেবে মসজিদটি প্রায় ৭শ বছর আগে নির্মিত। এর পর হজরত শাহ জামালের নামানুসারে ইউনিয়ন ও গ্রামের নামকরণ করা হয় জামালপুর। এ মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে পীরে কামেল হজরত শাহ জামাল (রহ.)-এর মাজার। ১৯৪০ সনের রেকর্ড অনুযায়ী মসজিদের ১৬ শতক জমির মালিক ছিলেন বড় জামালপুর গ্রামের মৃত খন্দকার আবদুল মজিদ গং।

পরবর্তীতে মসজিদের নামে জমিটি লিখে দেন তারা। ফলে এ মসজিদের দাতা আবদুল মজিদ গং। জামালপুর শাহী মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. হুমায়ন কবির আজাদী বলেন, বাহির থেকে অনেক বড় মনে হলেও মসজিদের ভেতরে শুধুমাত্র দুই কাতারে ৬০ জন মুসল্লি নিয়ে নামাজ আদায় করা যায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এলাকার লোকজন মসজিদের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে সামনের দিকে (সংযুক্ত) মসজিদ ভবন নির্মাণ করেছে। মসজিদের ৩য় তলার কাজ স¤পন্ন করা হয়েছে। এখন ৮শত মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজহার আলী সরকার বলেন, প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ মানতের নগদ টাকা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, চাল ও মিষ্টি নিয়ে মসজিদে আসেন এবং পোলাও করে বিতরণ করেন। তাদের ধারণা, যে কেউ যে কোনো নিয়তে মানত করলে আল্লাহর অশেষ রহমতে তা পূরণ হয়। জামালপুর শাহী মসজিদ কমিটির সভাপতি খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগের চেয়ে মসজিদটির অনেক প্রসারিত করা হয়েছে। আরও অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের সাহায্য সহযোহিতা ও মানতের অর্থ ইত্যাদি দিয়ে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে।’

আরও পড়ুনঃ  করোনা চিকিৎসায় সাফল্য যে ওষুধে, ফলাফল মিলেছে বাংলাদেশেও

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন