শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘এখনো কানে বেজে উঠে জয় বাংলা’

‘এখনো কানে বেজে উঠে জয় বাংলা’
  • নারী মুক্তিযোদ্ধা শর্মিলা দেবী

নারী মুক্তিযোদ্ধা শর্মিলা দেব সরস্বতী বলেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলা মাসের অগ্রহায়ণের দিকে এক মুক্তিযোদ্ধা মাইন ফুটাতে গিয়ে তার ডান হাত উড়ে গিয়ে ছিল। তখন তাকে অজ্ঞান অবস্থায় জিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন সে জয় বাংলা বলে চিৎকার দিয়ে উঠতো। সে কিছুক্ষণ পর পর বলে ওঠে আমার স্টেনগান কই । যুদ্ধে যেতে তিনি উদগ্রীব হয়ে উঠেন।

একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধের সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার জিবি হাসপাতালে থাকা কালে এমন অনেক স্মৃতি তার মনে আছে। এখনো তার কানে বেজে উঠে আমার স্টেনগান কই, আমার স্টেনগান কই এই বলে হুঙ্কার। আমরা কয়েকজন তাকে  জড়িয়ে ধরে শান্ত করতাম। তখন কে ছেলে কে মেয়ে তা মনে থাকত না। তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বছর।

শর্মিলা দেব সরস্বতী  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আমোদাবাদ গ্রামের মৃত ডালিম কুমার দত্তের স্ত্রী । তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং ০২১২০৫০৪।

আগরতলার জিবি হাসপাতালে একজন সেবিকা হিসেবে কাজ করার সুবাদে দেশের প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের এমন ভালোবাসা প্রত্যক্ষ করার তার সুযোগ হয়েছিল। জিবি হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার দেওয়ার জন্য আলাদা একটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধাহত হয়ে এখানে চিকিৎসা নিতে আসতেন। অনেকে চিকিৎসারত অবস্থায় মারাও গেছে। প্রায় ১ বছর তিনি ওই হাসপাতালে ছিলেন বলে জানায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসাধীন থাকায় তাদের সেবার জন্য ওই হাসপাতালে  রাখা হয়ে ছিল।

আরও পড়ুনঃ  কমেছে পানি বাড়ছে ভাঙন

শর্মিলা দেব বলেন, ৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন আমরা স্বপরিবারে ভারতের আগরতলা চলে যাই। সেখানকার নারায়ণপুরে একটি ভাড়া বাসায় মা বাবা ভাই বোন নিয়ে সবাই থাকতাম। কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের রেশনের ব্যবস্থা হয়। কিছুদিন পর জানতে পারি আমাদের রেশন দেয়া হবে না। এমনকি বলা হলো আগরতলা ছেড়ে আসাম চলে যে হবে। এক পর্যায়ে রেশন বন্ধ হলে আমরা বিপদে পরে যায়। আগরতলার কয়েকজন দরদি  মানুষ আমাদেরকে খাবার দিতেন। এ অবস্থায় একদিন আমি আমার ছোট বোন গীতা দেবকে আগরতলার কর্নেল চৌমুহনী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা অফিসে যাই। সেখানে ছিলেন জিবি হাসপাতালে ডাক্তার রতিন দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুছ মাখন ও লুৎফুল হাই সাচ্চু। তারা আমরা দুই বোনকে বলেন তোমরা জিবি হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করবে। এখান থেকে রিলিফও পাবে। তাদের কথা মতো রাজি হয়ে যায়। আমরা দুই বোন জিবি হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে কাজ শুরু করলাম।

প্রতিদিন ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পযর্ন্ত কাজ করতে হতো। তিনি বলেন, গুলি বোমা আহত হয়ে আসা মাত্র আমরা প্রথমে তাদের বরব দিয়ে ছ্যাকা দিতাম। পরে ডাক্তার এসে চিকিৎসা করতেন। 

শর্মিলা দেব বলেন যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে আমাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় এ খবর শুনে বাবা মারা যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার খবর শুনে আনন্দিত হয়। আমিই ছিলাম সংসারে সবার বড়। হাসপাতালে রোগী থাকায় দেশে যেতে পারছিলাম না। মা ভাই বোনকে দেশে পাঠিয়ে দেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪ মাস পরে দেশে আসি।

আরও পড়ুনঃ  হিলি সীমান্তে বিজিবি’র শীতবস্ত্র বিতরণ

শেখ হাসিনার সরকার প্রথম ক্ষমতায় এসে ঘোষণা দেয় যুদ্ধের সময় যারা সেবিকা হিসেবে কাজ করেছে তারাও মুক্তিযোদ্ধা। পরে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নাম তালিকাভূক্ত হয়। বর্তমান সরকারেরর আইনমন্ত্রীর সহায়তায় একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। সেই ঘরে এক মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছি। নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন