ঢাকা | মঙ্গলবার
১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কমেছে পানি বাড়ছে ভাঙন

কমেছে পানি বাড়ছে ভাঙন
  • তিস্তা পাড়ের মানুষ দিশেহারা
  • ২০ পয়েন্টে ভাঙন ভয়াবহ

পঞ্চম দফায় তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার গত তিনদিন ধরে বন্যার পর কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তিস্তার তীব্র ভাঙন। এদিকে বন্যা আর ভাঙনে দিশাহারা পড়েছে তিস্তাপাড়ের হাজারো কৃষক। বন্যা কবলিত এলাকায় এখনও কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ  ৫২.০৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার রেকর্ড করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় তিস্তা নদীর গর্ভে ৪২টি ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।

তিস্তার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বড়েছে তীব্র ভাঙন। লালমনিহাটের পাঁচ উপজেলার ২০টি পয়েন্টে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, ফসলিজমি, স্কুলসহ বিভিন্ন স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা। তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে প্রায় হাজারও পরিবার। গত তিন দিনের বন্যায় ক্ষতিরমুখে পড়েছে আমন ধান। ধান ক্ষেত তিন দিন ধরে পানির নিচে থাকায় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে  বন্যায় ভেসে গেছে মাছের ঘের।

এ দিকে তিস্তার পানি কমা বাড়ার ফলে লালমনিরহাটের সদর উপজেলার খুনিয়া গাছ, দিঘলটারি, কালমাটি, চোংগাডারা, গোকুন্ডা, মোগলহাট আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, গড্ডিমারী ও পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামসহ জেলার প্রায় ১০টি পয়েন্টের দেখা দিয়েছে ভয়াভয় ভাঙন। এসব এলাকায় তিস্তার ভাঙন থেকে রক্ষা পাইনি বসতভিটে, গাছ পালা ফসলিজমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

আদিতমারী উপঝেরার গোবরধোন এলাকার রিপন ইসলামে একজন মৎস্যচাষির দুই একর জমির পুকুরের সমস্ত মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

তিস্তা পাড়ের বন্যাকবলিত জাহানারা বলেন, গত দুইদিন ধইরা পানির নিচে ডুবে আছি। এখনও কোনো সরকার থেকে সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।

সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের  চোংগাডারা গ্রামের শফিকুল মিয়া বলেন, গত তিনদিন ধরে বন্যার পানিতে কষ্ট ভোগ করলাম। এখন নদীর পানি নেমে যাচ্ছে এখন ভাঙনের আতঙ্কে পড়ছি।

হাতীবান্ধার উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দীক শ্যামল জানান, গত দুই দিনে আমার ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পানিবন্দি পরিবারকে নিজ উদ্যোগে শুকনো খাবার বিতরণ করছি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, তিস্তার পানি কমার পাশাপাশি নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যা কবলিত মানুষদের তালিকা করা হয়েছে। খুব দ্রুত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন