ঢাকা | শুক্রবার
২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুফিয়া-কায়ছারের দিনকাটে সওজের কুঁড়ে ঘরে

সুফিয়া-কায়ছারের দিনকাটে সওজের কুঁড়ে ঘরে

বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পশ্চিম ঢাকারোডে সওজের জায়গায় একটি কুঁড়েঘরে বসবাস করেন এক সময়ের পালা গানের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী সুফিয়া-কায়ছার দম্পতি। পালা গানের সেই গুণী শিল্পী কায়ছার আলী বয়াতী (১১০) বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছেন। বর্তমানে আর্থিক সঙ্কটে সেই বাড়িতে চরম দুরাবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সেই গুণী শিল্পী কায়ছার আলী বয়াতী জানান, তিনি ১৯১২ সালে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকে তিনি পালাগান চার্চা করতেন। আস্তে আস্তে তিনি এলাকায় শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে গানের জন্য হাক-ডাক আসতে শুরু হয়। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে কায়ছারের খ্যাতি। এরপর তিনি সুফিয়াকে তার দলে টানেন। একপর্য়ায়ে ভালোবেসে বিয়ে করেন তাঁরা দু’জন। বিয়ের পর তারা আরোও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দেশব্যাপী ‘সুফিয়া-কায়ছার’ নামটির পরিচিতি ঘটতে শুরু করে। পালা গানের পাশাপাশি তাঁরা লালন গীতি, পাঞ্জুগাহ ও হালিম সঙ্গীত গানের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। প্রায় শতাধিক গান গেয়েছেন। ‘কে বলে মানুষ মরে’, ‘সাধু গঞ্জে যাবি যদি মন আমার’, ‘আল্লাহ প্রাপ্ত বিষয় সত্য, তত্ব বিধান পরের কাছে’, প্রভৃতি গানের জন্য তিনি বিখ্যাত।

তিনি আরো জানান, নওগাঁর রানীনগরের পারইল গ্রামে তার প্রথম স্ত্রী ও ৪ সন্তান রয়েছে। আর সুফিয়ার পক্ষের ৪ সন্তানকে নিয়ে তারা বর্তমানে সান্তাহার পৌর শহরের পশ্চিম ঢাকারোড নামক স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) জায়গায় অস্থায়ী ঘরে বসবাস করছেন। দিন এনে দিন খাওয়া ছেলে– মেয়েদের পক্ষে বাবা-মায়ের দেখভাল করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

শেষ সময়ে চাওয়া-পাওয়া সর্ম্পকে জানতে চাইলে কায়ছার দম্পতি বলেন, আমাদের তেমন বড় কিছু চাওয়া পাওয়া নেই। ‘আমরা শুধু একটি ঘর চাই’ যেন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি’। কারন রাস্তার পাশের জায়গায় ঘর হওয়াই সব সময়ই মনে হয় এই বুঝি ঘর ভাঙা পরলো। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে হোক বা কারো ব্যক্তিগত সহায়তায় হোক ‘যদি কেউ একটি বাড়ি বা ঘর করার সহযোগীতা করতো তাহলে দুশ্চিন্তামুক্ত হতাম।’

সান্তাহার বিহঙ্গ শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারন সম্পাদক একেএম আসাদুল হক বেলাল বলেন, সুফিয়া-কায়ছার দম্পতি এ অঞ্চলে পালা গানের জন্য এক সময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। এমন গুণী মানুষদের দু:সময়ে সরকার ও সমাজের বিত্তশালীদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।

উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ সিরাজুল ইসলাম খান রাজু জানান, বিষয়টি জানার পর খোঁজ খবর নিতে আমরা তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার পরিস্থিতি দেখে খাদ্য সহায়তা, একটি হুইল চেয়ার, শীতে কম্বল ও কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন