শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড়ের পদধ্বনি

ঘূর্ণিঝড়ের পদধ্বনি

আঘাত হানতে পারে উপকূলের ১৯ জেলায়

আগাম প্রস্তুতি

  • কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ বন্ধ 
  • সেন্টমার্টিনে আটকা চার শতাধিক পর্যটক
  • সমুদ্রবন্দরগুলোর সতর্কতা সংকেত বাড়ছে

আন্দামান সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। রাজধানী ঢাকার আকাশও মেঘাচ্ছন্ন। মাঝে মাঝে হচ্ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় এটি গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে প্রাথমিকভাবে দিক পরিবর্তন করে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আঘাত হানতে পারে উপকূলের ১৯ জেলায়

গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তা উপকূলের ১৯ জেলায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুল হক। গতকাল রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ নিয়ে জরুরি ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান।

আরও পড়ুনঃ  এখনও আলুর হিসাব পায়নি প্রতিযোগিতা কমিশন

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটি লঘুচাপ আকারে ২০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি ধীরে ধীরে ২২ অক্টোবর দুপুর ১২টায় সুস্পস্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। একই দিনে নিম্নচাপে এবং রবিবার (২৩ অক্টোবর) গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

এনামুর রহমান বলেন, এখন নিম্নচাপটির গতিপথ উত্তর-পশ্চিম দিকে। গতিপথে যদি পরিবর্তন ঘটে তাহলে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে তা ভারতের ওডিশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এখন পর্যন্ত গতিপথ সেদিকেই। তবে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যদি উত্তর-পূর্ব দিকে ধাবিত হয়, তবে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানলে দেশের উপকূলের ৭৩০ কিলোমিটার এলাকায় এর প্রভাব থাকবে। কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে গভীর নিম্নচাপটি দ্রুত এগিয়ে আসছে। এতে এটি কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সেন্টমার্টিনে আটকা চার শতাধিক পর্যটক

বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন চার শতাধিক পর্যটক। মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হওয়ায় বৃহস্পতিবার পর্যটকরা ফিরতে পারেনি। আটকে পড়া চার শতাধিক পর্যটকদের মধ্যে ‘আমার বাজার’ নামে ৩’শ জনের একটি দল তিন দিনের ভ্রমণে গত বুধবার সেন্টমার্টিন যায়। পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে করে কক্সবাজার থেকেই সরাসরি সেন্টমার্টিন পৌছেন তারা।

এদিকে সেন্টমার্টিনে চার শতাধিকের বেশি পর্যটক দ্বীপে আটকা পড়েছেন। তাদের বৃহস্পতিবার ফিরে যাবার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফিরতে পারেনি।কিন্তু বুধবার পর্যটকদের মাইকিং করে দ্বীপ ছাড়তে বলা হয়েছিল, অনেকে কথা শুনেনি। তবে দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  ডালের দাম বেড়েছে

দ্বীপে পর্যটকরা নিরাপদে রয়েছে উল্লেখ করে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান, সেন্টমার্টিনে আটকাপড়া পর্যটকদের খোঁজ-খবর রাখতে দ্বীপের পুলিশ ফাঁড়িকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিনে আটকাপড়া পর্যটকরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে পর্যটকরা ফিরে আসবেন।

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ বন্ধ

‘সিত্রাং’র কারণে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ৩নং সতর্ক সংকেত থাকায় কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে জাহাজ মালিকদের সংগঠন স্কোয়াবের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। তাই আমরা জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান গণমাধ্যমকে জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিন নৌ-পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন