শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসপাতালের চিকিৎসা জরুরি!

হাসপাতালের চিকিৎসা জরুরি!

বাইরে থেকে পরিবেশ যেমনটা দেখছেন ভেতরের পরিবেশ আরও ভয়াবহ। দুর্গন্ধে ভরপুর টয়লেটগুলো স্যাঁতসেঁতে, পিচ্ছিল ও অন্ধকার। যত্রতত্র মেঝের ওপর জমে আছে নোংরা পানি। বিদ্যুৎ যখন চলে যাচ্ছে তখন হাতপাখা আর মোবাইলের আলো তাদের ভরসা

শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। মেঝেতে পানি ও ময়লা জমে পিচ্ছিল হয়ে আছে। কোনোটি আবার আবর্জনা দিয়েই ভর্তি রয়েছে। দেয়াল স্যাঁতসেঁতে। আবর্জনার দুর্গন্ধে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। রোগীরা নাক চেপে ধরেই এগুলো ব্যবহার করছে। এমন অবস্থা নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ শত রোগী চিকিৎসাধীন থাকে। তাদের অভিযোগ এই হাসপাতালে সকল অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতালের জেনারেটর বা বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালটিতে এক ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ধরনের টেষ্টের যন্ত্রপাতি থাকলেও পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। এসব বিষয়গুলি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।

সরজমিনে দেখা যায়, একের পর এক নষ্ট হাসপাতালের বৈদ্যুতিক পাখাগুলো। সেগুলো মেরামতের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া নেই।

পুরুষ ওয়ার্ডে চার দিন ধরে চিকিৎসাধীন উপজেলার ছাতনাই এলাকার আব্দুল সামাদ। তার স্ত্রী  জানান, তাদের শয্যার ওপরের পাখাটি নষ্ট। কাউকে বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে সোহাগ নামে এক রোগীর স্বামী বলেন, দিনেও বিদ্যুত থাকে না,  রাতেও থাকে না। ভ্যাপসা গরম আর দুর্গন্ধে রোগী নিয়ে এসে সুস্থ করব কি, আমিই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে আমাদের হাত-পায়ের শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শয্যার নিচে দুদিন ধরে নোংরা ময়লা পানি জমে আছে। এক গ্লাস পানি খেতে গেলেও দুর্গন্ধে বমি আসে।

আরও পড়ুনঃ  বিচারকের আবেগঘন স্ট্যাটাস

জানা যায়, এ ওয়ার্ডের ৬টি বৈদ্যুতিক পাখার মধ্যে চারটি প্রায় অচল। অন্যান্য ওয়ার্ডেরও একই অবস্থা। হাসপাতালে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় লোডশেডিংয়ের সময় রোগীর স্বজনরা হাতপাখা বা মোটা কাগজ দিয়ে বাতাস করছেন।

রুবিয়া বেগম নামের রোগীর অপর এক স্বজন বলেন, শৌচাগার থেকে উপচে পড়া পানির সঙ্গে মলমূত্রও বেরিয়ে এসেছে। নার্স-চিকিৎসকদের জানিয়েছি। এগুলো পরিষ্কার করতে কেউ আসেনি। কী যে দুর্ভোগ, বলে বোঝানো যাবে না।

রোগীর স্বজনরা জানান, বাইরে থেকে পরিবেশ যেমনটা দেখছেন ভেতরের পরিবেশ আরও ভয়াবহ। দুর্গন্ধে ভরপুর টয়লেটগুলো স্যাঁতসেঁতে, পিচ্ছিল ও অন্ধকার। যত্রতত্র মেঝের ওপর জমে আছে নোংরা পানি। বিদ্যুৎ যখন চলে যাচ্ছে তখন হাতপাখা আর মোবাইলের আলো তাদের ভরসা।

তাদের দাবি, হাসপাতালে রোগীদের কথা চিন্তা করে লোডশেডিংয়ের সমস্যা জেনারেটর বা অন্য কোনো উপায়ে ফ্যানগুলো চালানোসহ আলো ও পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করা, যাতে অন্তত রোগীদের কষ্ট কিছুটা কমে।

হাসপাতালের বেশ কিছু ডাক্তার ও নার্স জানান, অব্যাবস্থাপনার কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত আলো না থাকায় দিনের বেলাও মোবাইলের আলো জালিয়ে ব্যবস্থাপত্র লিখতে হয়। ভ্যাপসা গরম আর দুর্গন্ধে চিকিৎসাসেবা দিতে এসে রোগীর পাশাপাশি আমরাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।

হাসপাতালে থাকা একটি জেনারেটর লোডশেডিংয়ের সময় চালানো হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে জেনারেটর চালানোর যে খরচ, সেই বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটর চালানো হয় না বলে জানিয়েছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কুন্জকলি রায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান জানান, হাসপাতালের নষ্ট বৈদ্যুতিক পাখাগুলো মেরামত করার উদ্যোগ নিয়েছি। আইপিএস ও সোলারের সমস্যার সমাধান করা হবে। দুর্গন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, হাসপাতালের কোনো একটি টয়লেট জ্যাম হয়েছে। এ কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমরা তদারকি করছি।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন