শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চা-শিল্পে কাটেনি সংকট

চা-শিল্পে কাটেনি সংকট

নেতাদের আহ্বান উপেক্ষা করে সারাদেশে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে টানা কর্মবিরতি পালন করছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দফায় বৈঠক হলেও সমাধান হচ্ছে না। সর্বশেষ গত শনিবার শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১২০ থেকে ১৪৫ টাকায় মজুরি নির্ধারিত হলে নেতারা ধর্মঘট প্রত্যহারের ঘোষণা দেন। তবে বেঁকে বসেন সাধারণ শ্রমিকরা। ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার সিলেট-বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন তারা। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের আশ্বাসে সড়ক থেকে সরে যান চা শ্রমিকরা।

এদিকে, চলমান আন্দোলনে বাইরে থেকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। দুপুরে সিলেট মহানগরীর লাক্কাতুরা চা বাগানের সামনে শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। রাজু গোয়ালা বলেন, ‘চা শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে আমি একমত। তবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে শ্রম অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তকেও সম্মান জানাতে হয়। তাই শোকের মাসকে সম্মান জানিয়ে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলাম।

রাজু গোয়ালা বলেন, মনে হচ্ছে, আমাদের আন্দোলনে বাইরে থেকে বিভিন্ন সংগঠন ঢুকে পড়েছে। আমাদের চা শ্রমিকদের বাইরে থেকে উসকানি দেয়া হচ্ছে। যদি কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়, অরাজকতা, ভাঙচুর বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় তবে তার দায়ভার চা-শ্রমিক সংগঠনের নেতা হিসেবে আমি নিবো না।’

আরও পড়ুনঃ  নদী দখল করে বাড়ি নির্মাণ

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারাদেশের চা-শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। গত ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের পর ১৩ আগস্ট থেকে রবিবার পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন।

আন্দোলন থামাতে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি। চলমান জটিলতা নিরসনে সর্বশেষ গত শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তর অফিসে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল বৈঠকে বসেন। তিনপক্ষীয় এই বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে নেতারা এ সিদ্ধান্ত মেনে আসলেও শ্রমিকরা তা প্রত্যাখান করে ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় শনিবার রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের প্রতি। সে আহ্বান মেনেও নেন স্থানীয় চা শ্রমিক নেতারা।

বৈঠক শেষে রাজু গোয়ালা সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের মজুরি মাত্র ২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে আমরা কেউই সন্তুষ্ট না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত থেকে ফিরে আগামী মাসে আমাদের সঙ্গে বসবেন, আমাদের দাবি দাওয়া শুনবেন- তাই আমরা তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবিগুলো শুনে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।

আরও পড়ুনঃ  চলন্ত ট্রেনে ‘কোয়ারেন্টাইন’ এর ব্যবস্থা

রাজু এসময় আরও বলেন, সারাদেশের কথা জানি না। তবে আমাদের সিলেট ভ্যালির ২৩ বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে। রোববার থেকে তারা কাজে যোগ দেবেন। বৈঠক সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে রোববার থেকে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন।

তবে গতকাল রবিবার সকাল থেকে সিলেটের বাগানগুলোতে দেখা যায় আগের মতোই সুনসান নীরবতা। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের আহ্বানকে উপেক্ষা করে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুপুর ১২টায় মহানগরীর লাক্কাতুড়া ও মালনিছড়াসহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা মিছিলসহকারে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হন। এরপর তারা বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এসময় চা শ্রমিকরা বুকে ও পিঠে ‘৩০০ টাকা মজুরি দে, নইলে বুকে গুলি দে’ লিখে বিক্ষোভ করেন। অবরোধের কারণে এসময় সিলেট-বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে অবরোধের কবলে পড়েন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। এসময় আন্দোলনকারীরা শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার কথা তার কাছে তুলে ধরেন। জবাবে শফিকুর রহমান চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দুইদিনের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন। তবে তারা দু’দিনের জন্য সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন