শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা--

সম্পদের টেকসই-পরিমিত ব্যবহার জরুরি

সম্পদের টেকসই-পরিমিত ব্যবহার জরুরি

মানুষ পরিবেশকে তার প্রয়োজনে ব্যবহার করতে গিয়ে আজ বিপর্যয়ের সম্মুখীন করেছে। বর্তমানে পৃথিবীতে ব্যাপকহারে জলবায়ু পরিবর্তন দেখা দিয়েছে পৃথিবীব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আগামী শতাব্দীতে পৃথিবী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের জন্য বড় বিপদ বয়ে আনতে পারে। এজন্য এখনই অপচয় রোধ করাসহ পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সম্পদের টেকসই ও পরিমিত ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে।

বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে টেকসই ব্যবহার বিষয়ক চর্চা নিয়ে প্রকল্পভুক্ত খুলনা শহরের কিশোর-কিশোরীদের আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে।

জেজেএস আয়োজিত শনিবার সকালে কারিতাস, খুলনার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় কিশোর-কিশোরীরা বলেন, আমরা সমাজকে নয়, আগে নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে চাই। নিজেরা পরিবর্তন হলে সমাজ সহজেই পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

২৮ নং ওয়ার্ডের কিশোর-কিশোরী গ্রুপের সদস্য লাইজু জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যেয়ে পানি ও কয়লার ব্যবহার হয়। বিদ্যুৎ অপচয় হলে এগুলোরও অপচয় হয়। কাগজের অপচয় হলে গাছ কমে যায়। প্লাস্টিকে মিথেনে থাকার কারণে দীর্ঘদিন নষ্ট হয় না। এটি মাটি দূষণ করে। অপরদিকে এটি পুড়িয়ে নষ্ট করতে গেলেও পরিবেশ দূষণ হয়। এজন্য পাটের পলি ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে। প্লাস্টিকের বোতলের পুনর্ব্যবহার করতে হবে। একটি শিষ কলম ব্যবহার করে ফেলে না দিয়ে পুনরায় ব্যবহার করতে হবে। একটি গাছ কাটলে চারটি চারা রোপন করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  বঙ্গবন্ধুকে বহন করা বিমানটি জার্মানিতে

পানির ব্যবহার সম্পর্কে ২৮ নং ওয়ার্ডে সদস্য রাফিদা আক্তার পিয়া বলেন, আমাদের এলাকার অনেকের নলকূপ দিয়ে এখন পানি ওঠে না। পানির সংকট এড়াতে এখনই অপচয় রোধ করা জরুরী। হাত ধোয়া কিংবা গোসল শেষে কল ভালোমত বন্ধ, ব্রাশ করার সময় কল ছেড়ে না রাখা, পান করার পর গ্লাসে অতিরিক্ত পানি না রাখা, ওয়াসা কিংবা অন্যান্য পানির পাইপের লিক (ছিদ্র) দিয়ে নষ্ট হতে না দেয়াসহ অপচয় রোধে কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান করেন তিনি।

বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য শিমলা। দিনের আলোয় কাজ করার অভ্যাস গড়া, এলইডি লাইট ব্যবহার করা, অপ্রয়োজনে টিভি, লাইট, ফ্যান চালিয়ে না রাখা, মোবাইল চালানোর সময় টিভি বন্ধ রাখাসহ কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে বিদ্যুতের অপচয় রোধ করার কথা জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের মারাত্নক সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বালানী সংকট তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ তৈরিতে কয়লা ব্যবহারের কারণে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খাদ্যের অপচয় রোধে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার কথা বলেন ২৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য পিয়া। তিনি বলেন, অতিরিক্ত খাবার প্লেটে না নেয়া, অতিরিক্ত থেকে গেলে ফ্রিজে রাখা অথবা অন্যকে দিয়ে দেয়া, নষ্ট হওয়ার আগে ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষককে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা লাগছে। যেটা পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর।

আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ৬ নং কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য বৈশাখী সরকার ও ১৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য রকিবুল ইসলাম নাঈম।

আরও পড়ুনঃ  অরক্ষিত শেরপুরের গণকবর-বধ্যভূমি

এসময় জেজেএস’র নির্বাহী পরিচালক এটিএম জাকির হোসেন, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এম এম চিশতী, প্রকল্প কর্মকর্তা জায়েদ বিন আজাদ, রতন বিশ্বাসসহ ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, খুলনা শহরে ঝযধঢ়ষধ ঘববৎ ও গরঃংঁনরংযর ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ এর সহযোগিতায় জেজেএস দঅফড়ষবংপবহঃ ষবফ ঝঁংঃধরহধনষব ঈড়হংঁসঢ়ঃরড়হ ঊফঁপধঃরড়হ ভড়ৎ ঈষরসধঃব ঈযধহমব অফধঢ়ঃধঃরড়হ ধহফ গরঃরমধঃরড়হ চৎড়লবপঃ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি কিশোর কিশোরীসহ পারিবারিক ও কমিউনিটি পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার লক্ষ্যে সম্পদের টেকসই ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২০২০ সালের ১ নভেম্বর শুরু হয়। বর্তমানে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৯ টি ওয়ার্ডে ৯ টি কিশোর কিশোরী গ্রুপ গঠন করে টেকসই ব্যবহার সংক্রান্ত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে টেকসই ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার কাজ চলছে যাতে তারা নিজেরা তাদের জীবনে টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে এবং অন্যদেরকেও টেকসই ব্যবহার সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন