শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জলবায়ুর থাবা-

প্রতি পরিবারে ক্ষতি লাখ টাকা

প্রতি পরিবারে ক্ষতি লাখ টাকা

সুপেয় পানি উপকূলীয় বাঁধের দাবি

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্রমবর্ধমাণ দুর্যোগের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষের খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। জীবিকার উৎস হ্রাস, অপুষ্টি, সুপেয় পানির অভাবে রোগ ব্যধি বৃদ্ধিসহ প্রতি বছর প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে উপকূলবাসীকে। তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকেই উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সুপেয় পানি আর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় আশাশুনি উপজেলা রোড চত্ত্বরে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ ও সুপেয় পানির নিশ্চয়তার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি তোলেন আশাশুনির সর্ব স্তরের জনগণ। পরিবেশ আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সংগঠন লিডার্সের সহযোগিতায় কর্মসূচির আয়োজন করে আশাশুনি উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম ও উপজেলা যুব ফোরাম।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা লিডার্সের ২০২১ সালের গবেষণা প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেন, ২০০৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সাতক্ষীরা ও খুলনার উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর পরিবার প্রতি ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৯ টাকার সমান ক্ষতি হয়। দুর্যোগে ১৬ বছরে সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ম ক্ষতি হয়েছে ৪৫ হাজার ২০০ টাকা।

জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হান্নানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনের বক্তব্য দেন আশাশুনি প্রেসক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব, ফোরামের সদস্য ও উপজেলা লবণ পানি আন্দোলন কমিটির সভাপতি বিমল কৃষ্ণ মন্ডল, সমাজ সেবক কল্যাণী রানী সরকার, ফোরামের কোষাধ্যক্ষ মিনতী রানী সরকার প্রমুখ।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে ১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত

বক্তারা আরও বলেন, নদীভাঙন জনিত বন্যা, চিংড়ি চাষ, ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততার কারণে গত কয়েক বছরে সুন্দরবন এলাকায় সুপেয় পানির সংকট বেড়েছে। সুন্দরবন উপকুলে ৭৩ শতাংশ পরিবার সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত বা খারাপ পানি খেতে বাধ্য হয়। সুপেয় পানির জন্য একজন নারীকে ৩/৪ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় প্রতিদিন।

বিগত বছরগুলোতে উচ্চ জোয়ারের চাপ দেখা না গেলেও ২০২১ সালের মার্চ মাসে উচ্চ জোয়ারের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট সৃষ্টি করেছে। ২০২১ সালে ২৬ মে সাইক্লোন ইয়াস এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ জোয়ারের কারণে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ উপজেলা, খুলনা জেলার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা এবং বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোড়লগঞ্জ ও মংলা উপজেলা বেড়িবাঁধ উপচিয়ে পানি ভিতরে প্রবেশ করে ভয়াবহ ক্ষতি করেছে।

বর্ষামৌসুম নদীর খর স্রোত ও উচ্চ জোয়ারের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ফলে মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ৬০ এর দশকে নির্মিত উপকূলীয় রক্ষা বেড়িবাঁধ পরিকল্পনা মাফিক সংস্কারের অভাবে প্রতিবছর একাধিক বার ভেঙে প্লাবিত করে আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে উপকূলীয় এলাকাবাসীকে।

সম্প্রতি সরকার দুটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে যা এ এলাকার মানুষের দাবি ছিল। তবে ওই প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। তা ছাড়া এই দুটি প্রকল্প দিয়ে সকল ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নির্মাণও সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করার জন্য এ এলাকাকে বিশেষ এলাকা বা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন