শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেতুর প্রশংসায় বিস্মিত বিশ্ব

অনেক বাধা টপকিয়ে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এর নেতৃত্বে দেওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
  • নেতৃত্বের আরেকটি দৃষ্টান্ত: যুক্তরাষ্ট্র
  • সত্যিকারের ‘গেম চেঞ্জার’: রাশিয়া
  • সিদ্ধান্ত অসীম সাহসী: চীন
  • উন্নয়ন যাত্রায় দৃষ্টান্ত: পা‌কিস্তান
  • অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন: সৌদি

অনেক বাধা টপকিয়ে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এর নেতৃত্বে দেওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব দরবারে আলোচনা হচ্ছে তার নেতৃত্বগুণ। বন্ধু রাষ্ট্র ভারত তো বটেই পাকিস্তানের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনার সাহসিকতা নিয়ে মিডিয়ায় কলাম লিখছেন।

পদ্মা সেতু নির্মাণকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংযুক্তি বিকাশে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে দেওয়া এক অভিনন্দন বার্তায় এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বিবৃতিটি প্রচার করেছে।

মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের জন্য টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ অপরিহার্য। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করবে। তেমনি এটি ব্যবসার বিকাশ ও জীবনের গুণগত মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। মার্কিন দূতাবাস বলেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণ দক্ষিণ এশিয়ায় সংযুক্তির বিকাশে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি দৃষ্টান্ত।

এদিকে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নি‌য়ে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্তিতে আমি বাংলাদেশের সরকার প্রধান এবং দেশটির জনগণকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। শেহবাজ বলেন, ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় এই সেতুটির উদ্বোধন একটি দৃষ্টান্ত। এটি বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই ও স্থায়ী উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যেটা প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় সংকল্পের একটি প্রমাণ। অভিনন্দন বার্তায় বাংলাদেশের সরকার প্রধানের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুনঃ  বদলে যাবে পান-কলাচাষিদের ভাগ্য

দেশীয় অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তকে অসীম সাহসী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বড় বড় সংস্থা অর্থায়ন বন্ধ করার পরও এই সেতু নির্মাণে কেউ অখুশি হলেও চীনের নাগরিকরা খুশি বলেও জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘বিদেশি কিছু উন্নয়ন অংশীদার বিশ্বাসই করতে পারেনি যে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরনের একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে। তবে, তিনি তাদের কারও নাম উল্লেখ করেননি। তারপরও প্রধানমন্ত্রী সব সন্দেহ, চাপ ও অভিযোগের মুখে নিজেকে ইস্পাত কঠিন দৃঢ় রেখে শতভাগ বাংলাদেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেন।’

লি জিমিং বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের জন্য যেকোনও সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে দরকার ছিল অসীম সাহস এবং দৃঢ় রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ।’ পদ্মা সেতুর কথা ভাবলে সাহস, সংকল্প ও সমৃদ্ধির কথা চোখে ভেসে উঠে বলে মন্তব্য করেন লি জিমিং। চীনের ‘মেজর ব্রিজ কনস্ট্রাকশন’ পদ্মা সেতু নির্মাণে সম্পৃক্ত হওয়ায় গর্ববোধ করে লি জিমিং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় সেতু, যা চীনা কোম্পানিগুলো দেশটির বাইরে তৈরি করেছে। সুতরাং আমি মনে করি, চীনের পক্ষেও এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা একটি সাহসী পদক্ষেপ ছিল।’

ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পদ্মা সেতু হবে সত্যিকারের ‘গেম চেঞ্জার’। এটি আঞ্চলিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, সংযোগ, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এর সুফল পাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লক্ষ্যের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো বড় মাইলফলক অর্জন সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনে বাংলাবাজার রুটে নৌ চলাচল বন্ধ

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসংশা করে ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।’

উল্লেখ্য, বিশ্বের আরো বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে তাদের শুভেচ্ছা ও সহযোগিতার কথা জানিয়ে বার্তা দিচ্ছেন। ফলে পদ্মাসেতু কূটনৈতিক অঙ্গনেও সৌহার্দ্যের এক প্রতীকে পরিণত হচ্ছে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন