শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণ খেলাপির দেশছাড়ার চেষ্টা

ঋণ খেলাপির দেশছাড়ার চেষ্টা
  • তিন ব্যাংকের ৭৮ কোটি টাকা মেরে বিমানবন্দরে আটক

তিন ব্যাংকের ৭৮ কোটি টাকা মেরে পালাতে গিয়ে ধরা পড়লেন হাটহাজারীর ঋণ খেলাপি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে সিএনজি জাহাঙ্গীর। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে হাটহাজারী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক, সোসাল ইসলামি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকের হাটহাজারী শাখার তিন ম্যানেজার জানিয়েছেন তাদের ৭৮ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করে পালাচ্ছিলেন ঋণ খেলাপি গ্রাহক জাহাঙ্গীর। আটক হওয়া সিএনজি জাহাঙ্গীর কাশেম ট্রেডিং, ডায়মন্ড অটো ব্রিকস এবং সুপার সিটি নামের তিনটি ফার্মের নামে বিভিন্ন সময়ে এসব ঋণ গ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রাম বিমান বন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের পরিদর্শক সাইফুলবিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক হাটহাজারী শাখার ব্যবস্থাপক এভিপি সালামত উল্লাহ জানান, ঋণ খেলাপি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ব্যাংকের হাটহাজারী শাখা থেকে কাশেম ট্রেডিং, ডায়মন্ড অটো ব্রিকস এবং সুপার সিটি নামের তিনটি ফার্মের নামে ৫০ কোটি টাকা ঋণ নেন। পরবর্তীতে ঋণের টাকা যথাসময়ে পরিশোধ না করায় তার এ ঋণ মন্দ ও খারাপ ঋণ হিসেবে পরিগণিত হয়। এ ঋণের টাকা আদায়ের জন্য নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের আওতায় চট্টগ্রাম আদালতে ৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে বিজ্ঞ আদালত থেকে ঋণ খেলাপি আমাদের গ্রাহক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পারোয়ানা জারি করা হয়।

 ব্যবস্থাপক সালামত উল্লাহ আরো বলেন, আমরা পুলিশের সহগোগিতায় অনেক চেষ্টা করেও তাকে গ্রেপ্তার করাতে না পেরে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে ঋণ খেলাপি জাহাঙ্গীরের তথ্য দিয়ে রাখি। বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দেয়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক হাটহাজারী শাখার ব্যবস্থাপক এভিপি সালামত উল্লাহ বলে, এ ৫০ কোটি টাকা জনগণের আমানতের টাকা এটা ব্যাংকের টাকা নয়। আমরা জনগণের আমানত রক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর।

আরও পড়ুনঃ  এক যুগে হয়নি এক ইঞ্চিও

ন্যাশনাল ব্যাংক হাটহাজারী শাখার ঋণখেলাপি গ্রাহক জাহাঙ্গীর আলম ব্যাংকের শাখা হতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাসেম ট্রেডিং এর অনুকূলে ৬ কোটি টাকার সিসি হাইপো ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ঋণের টাকা যথাসময়ে পরিশোধ না করায় তার ঋণটি মন্দ ও খারাপ ঋণ  হিসেবে পরিগণিত হয়। অতঃপর টাকা আদায়ের জন্য তার বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে বিগত ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি সাত কোটি ৪ লাখ ২৪ হাজার পাঁচশত সাতচল্লিশ টাকা আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে ব্যাংক। এছাড়া নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট এর আন্ডারে ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার চেক ডিজঅনার করার জন্য তার বিরুদ্ধে একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সিআর মামলা দায়ের করে ব্যাংক। তাছাড়া ব্যংকের কাছে বন্ধককৃত জমি ব্যাংকের অগোচরে হস্তান্তর করার দায়ে তার বিরুদ্ধে ২১ জুলাই ক্রিমিনাল মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে সবগুলো মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড হাটহাজারী শাখা সুত্রে জানা গেছে, ঋণ খেলাপি গ্রাহক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা আদায়ের জন্য  এন আই এ্যাক্টে ২টি এবং অর্থঋণ আদালতে ১টি মিলে মোট ৩টি মামলা করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় গ্রেপ্তার হওয়া ঋণ খেলাপি ব্যবসায়ি জাহাঙ্গীর আলমকে চট্টগ্রাম স্পেশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ এর আদালতে হাজির করে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ। বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালত তার বিরুদ্ধে দায়ের মামলাগুলোর ধার্য তারিখ  আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন এবং পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুনঃ  মান্দায় পাকাঘর পাচ্ছেন আরও ৫২ পরিবার

জানতে চাইলে মামলা দায়েরকারী ৩ ব্যাংকের নিয়োগ করা সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বলেন, তিন ব্যংকের ৭৮ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ না করে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করে ঋণ খেলাপি জাহাঙ্গীর আলমকে। দেশ ছেড়ে যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন সেজন্য আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত আসামি জাহাঙ্গীর আলমের পাসপোর্ট জব্দ করার জন্য নির্দেশ দেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন